শুধু শিখলেই হবে না
শুধু শিখলেই হবে না
মহাভারতে অনেক রূপকধর্মী উপাখ্যান আছে। এগুলি থেকে অনেক নীতি শিক্ষা পাওয়া যায়। বনবাসে থাকাকালীন পাণ্ডবেরা অনেক পবিত্র নদী এবং মুনি-ঋষিদের আশ্রমে গিয়েছিলেন। প্রতিটি স্থানের ঐতিহাসিক মহিমা ছিল। গঙ্গাতীরে এইরকম একটি আশ্রম ছিল ঋষি রৈভ্যর। তাঁর দুই পুত্র পরবসু আর অরবসু। তারা ছিল শাস্ত্রজ্ঞ। একবার রৈভ্য তাঁর দুই পুত্রকে রাজা বৃহদ্যুম্ন আয়োজিত যজ্ঞে অংশ নিতে পাঠালেন। তারা রাজার প্রাসাদ এর উদ্দেশ্যে রওনা হলো একদিন রাত্রে পিতার আশ্রমে ফিরে এসে পরবসু একটি গাছের নিচে একটি বন্য জন্তু কে দেখতে পেল। সঙ্গে সঙ্গে তাকে হত্যা করল। কাছে এসে দেখল সেটি কোন জন্তু ছিল না, সে তার পিতাকে হত্যা করেছে। তাড়াতাড়ি পিতার শেষকৃত্য সম্পন্ন করে আবার সে যজ্ঞস্থলে ফিরে গেল। সেখানে গিয়ে সে ভ্রাতা অরবসুকে সমস্ত বৃত্তান্ত জানালো এবং তাকে নিজেদের আশ্রমের ফিরে গিয়ে পিতার অবশিষ্ট পারলৌকিক ক্রিয়া সম্পন্ন করতে বলল। সে আরও বললো,” এই ঘটনার কথা সর্বসমক্ষে নিয়ে আসা উচিত নয়। আমরা এই যজ্ঞ সম্পাদনার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিতে পারিনা। তুমি একলা যজ্ঞ সম্পাদন করতে পারবে না। আমিও দুটো কাজ একসাথে করতে পারব না। অতএব তুমি ফিরে যাও। পিতার পারলৌকিক ক্রিয়া সম্পন্ন করে ফিরে এসো।অরবসু অক্ষরে অক্ষরে ভ্রাতার নির্দেশ পালন করলেন। কর্তব্য পালনে তিনি কখনো কোনো অবহেলা করতেন না। তার হৃদয় এবং চরিত্র ছিল পবিত্র। যার প্রতিফলন তার চেহারায় ছিল সুস্পষ্ট।
ফিরে আসার পর ভ্রাতার জ্যোতির্ময় মুখমণ্ডল দেখে পরবসুর মধ্যে হিংসার উদ্রেক হল। তার কূট বুদ্ধিসম্পন্ন মন তাকে হীন কাজে প্রবৃত্ত করল। সভাস্থ সকলকে উদ্দেশ্য করে সে বলল,” এই ব্যক্তি এই পবিত্র যজ্ঞস্থলে উপস্থিত থাকতে পারে না, কারণ সে একজন ব্রাহ্মণ কে হত্যা করেছে।
এই কথা শুনে অরবসু হতভম্ব হয়ে গেল। ভ্রাতার আচরণ তাকে তাকে বিস্মিত করল। সকলে তার দিকে এমন দৃষ্টিতে তাকাতে লাগলো যেন সে একজন আসামী, কোন জঘন্য হিংস্র কাজ সে করেছে। নিজেকে কিভাবে নির্দোষ প্রমাণ করবে তা সে ভেবে পেল না। তবুও আত্মপক্ষ সমর্থন করার জন্য সে বলল, “সুধীবৃন্দ,আমার কথা শুনুন, আমি সত্যি কথা বলছি, ইনি আমার অগ্রজ। উনি নিজেই পিতাকে হত্যা করেছেন। নিজে যজ্ঞ করবেন বলে আমাকে পিতার পারলৌকিক ক্রিয়া কর্ম সম্পাদন করতে পাঠিয়েছিলেন।“ সকলে তার কথায় হাসতে লাগলো। পরিস্থিতি আরো জটিল হলো। পরিহাস করে তারা বলল,” পাপের বোঝা কি আর অন্যের উপর চাপানো যায়?”
অরবসুর মত একজন সৎ এবং শুদ্ধ চিত্ত মানুষের পক্ষে হত্যা এবং মিথ্যা বলার অপযশ অসহ্য হল।কঠোর তপস্যা করার জন্য সে গভীর অরণ্যের উদ্দেশ্যে যাত্রা করলো। তার তপস্যায় সন্তুষ্ট হয়ে দেবতারা তাঁকে বর দিতে চাইলেন। কঠোর তপস্যা করার জন্য অরবসুর মন থেকে ততদিনে ক্রোধ এবং প্রতিহিংসা অপসারিত হয়েছে। সে তার পিতার জীবন এবং ভ্রাতার পরিবর্তন প্রার্থনা করল।এই পরিবর্তন শুধু তার নিজের জন্যে নয় পরবসুর সংস্পর্শে আসা সকলের জন্য প্রয়োজন ছিল কারণ পরবসুর সংস্পর্শ অরবসুর মতো তাদের জন্যও ক্ষতিকারক হওয়ার সম্ভাবনা ছিল।
দুজন ভ্রাতাই অগাধ পন্ডিত ছিল।পরবসুর মন ছিল হিংসায় পরিপূর্ন, আর আরবসু ছিল শুদ্ধচিত্ত, দয়ালু এবং সহানুভূতিসম্পন্ন। এর থেকে প্রমাণ হয় শুধু শিক্ষালাভ করলেই মহৎ হওয়া যায়না। সৎ চিন্তা,সৎ বাক্য এবং সৎকর্ম মানুষকে মহৎ করে।
প্রশ্নঃ
- পরবসু কি ভাবে তার দুষ্ট বুদ্ধি প্রকাশ করলো?
- অরবসু কি ভাবে নিজেকে একজন পবিত্র মানুষ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করলেন?
- এই গল্প থেকে কি শিক্ষা পেলে?