নাগ মহাশয়

Print Friendly, PDF & Email
নাগ মহাশয়

আজ তোমাদের এক পাগল লোকের গল্প শোনাবো এক গ্রামে একটি পরিবার ছিলেন। এই পরিবারের কতকগুলি পুকুর ছিল; নিয়ম ছিল যে, জেলেরা মাছ ধরবে এবং এই মাছের একটি অংশ এই পুকুরের মালিক অর্থাৎ এই পরিবারকে দেবে।

এরকমভাবে এক জেলে একবার মাছ ধরেছে এবং তার মালিককে অংশ দিতে এসেছে। সেদিন মালিকদের পক্ষে একটি বালক ছিল। তার প্রথমেই মাছগুলোকে দেখে ভীষণ কষ্ট হ’ল, আতঙ্কিত হ’ল মাছগুলো ছট্‌ফট্ করছে এবং করতে করতে আস্তে আস্তে একসময় মরে যাবে এবং মানুষ এই মাছগুলোকে কষ্ট দিচ্ছে, তিল তিল করে মেরে ফেলছে শুধু একটু খাবে বলে। ছেলেটি জেলেকে বলল, “ভাই, তুমি আমাকে তো আমার অংশটা দিলে, বাদবাকী যেটা রইল সেটা কি করবে?” সে বলল, “কেন? বাজারে বিক্রি করবো, “বিক্রি করলে তুমি কত দাম পাবে?” “আমি দশটাকা দাম পাবো।” ছেলেটি বলল, “আমি দশটা টাকা দিচ্ছি তুমি সব মাছ আমায় দিয়ে দাও।” জেলে রাজী, সে খুশী, তাকে বাজারে যেতে হবে না। জেলেটি সব মাছ দিয়ে দশটা টাকা নিল। কিন্তু তার খুব কৌতূহল হল, ছেলেটি কেন এত মাছ কিনলো? জেলে দেখল, ছেলেটি সমস্ত মাছ কিনে নিয়ে খুব তাড়াতাড়ি ছুটে গেল পুকুরের ধারে, সব মাছকে সে জলে ছেড়ে দিল, মাছগুলিকে জলে ছেড়ে দিয়ে সে যেন স্বস্তি পেলো।

Nagmahashay letting the fish back in the pond

এরকমভাবে ছেলেটি দ্বিতীয় দিনেও একটি জেলের কাছ থেকে সব মাছ কিনে নিল। ছোট্ট গ্রাম, তার পাগলামীর কথা সেদিনই সব জানতে পেরে গেছে, জেলে তাকে সব মাছ বিক্রি করে দিয়ে ঊর্ধ্বশ্বাসে পালালো, কি জানি, পাগল যদি কামড়ে দেয়। পাগল লোকটির নাম ‘নাগ মহাশয়’। এই বলেই তাঁর নাম প্রসিদ্ধ। তিনি রামকৃষ্ণদেবের শিষ্য। তিনি অহিংসার পরম পূজারী, সারাজীবন তিনি অহিংসার পূজা করেছেন।

একবার তাঁর বাড়ীতে একটা উৎসবের দিনে বহুলোক এসেছেন, এমন সময় বাড়ীর উঠোনে দেখা গেল একটি ‘কেউটে সাপ’। ওমনি কোথায় লাঠি, কিছু আনো, সাপটাকে মারো বলে যখন সবাই ঐ সাপটাকে পিটিয়ে মারতে যাচ্ছে তখন নাগ মহাশয় এলেন, বললেন, “করছ কি?” তাঁর স্ত্রী বল্ল “কেন? এই বিষাক্ত সাপ ছুঁলেই মৃত্যু। একে মারা ছাড়া আর উপায় কি?”

নাগ মহাশয় তখন বললেন, “বনের সাপে কাটে না, মনের সাপ কাটে।” তিনি সাপটির সামনে গেলেন। জোড় হাত করে বললেন, “মা মনসা, এটি আপনার উপযুক্ত জায়গা নয়, আপনার উপযুক্ত জায়গা হচ্ছে বন, চলুন আপনাকে আমি পথ দেখিয়ে দিচ্ছি, আপনি সেইখানে যাবেন।” তিনি হাত তালি দিতে দিতে বনের দিকে এগিয়ে গেলেন। সবাই অবাক বিস্ময়ে দেখল; সাপটি নাগ মহাশয়ের পিছু পিছু বনের দিকে চলে গেল।

এই পাগলা নাগ মহাশয়ের আর একটি খুব বিখ্যাত গল্প আছে। তাঁর বাড়িতে বেড়া ছিল এবং বেড়াতে খুব উইপোকা হয়েছিল। তাঁর স্ত্রী একদিন অপরাধের মধ্যে ঐ বেড়া থেকে উইপোকাগুলি ঝেড়ে ফেলে দিয়ে তাদের বাসা ভেঙ্গে ফেলে দিয়েছিলেন। নাগ মহাশয় ফিরে এসে মাথায় হাত দিয়ে বসলেন, বললেন, “করেছ কি? তুমি এদের সর্বনাশ করলে।” তিনি বেড়াটিকে আবার বেঁধে দিলেন। উইপোকাগুলিকে মিনতি করে বললেন, “আপনারা আসুন, আবার বাসা বাঁধুন, আপনারা নিশ্চিন্তে এবারে বাসা বাঁধুন। আমি কাউকে আপনাদের ঘর আর ভাঙ্গতে দেবো না।” এইরকম ছিলেন নাগ মহাশয়।

নাগ মহাশয় বলতেন, পৃথিবীটা মনের প্রতিচ্ছবি, যা চিন্তা কর, তাই দেখতে পাও, আয়নায় মুখ দেখার মতো। তুমি যদি আয়নায় ভাংচাও, তাহলে সেও ভাংচায়, তুমি যদি হাসো, তাহলে সেও হাসে, আর তুমি যদি কাঁদ, তাহলে সেও কাঁদে, আর তুমি যদি আনন্দ পাও, আয়নাও আনন্দ পায়। এই পৃথিবী ঠিক আয়নার মতো। তুমি তাকে যা দেবে, তোমকে সে তাই ফেরত দেবে।

প্রশ্নঃ
  1. সকল জীবের প্রতি নাগমহাশয়ের করুণার বর্ণনা করো।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: