ঈশ্বরকে অর্পণ

Print Friendly, PDF & Email
ঈশ্বরকে অর্পণ

দিনের শেষে, ঘুমিয়ে পড়ার আগে, সারাদিন আমরা যা কাজ করেছি, তা ঈশ্বরের চরণে অর্পণ করা উচিত। যেহেতু আমরা সমস্ত কর্ম ঈশ্বরের চরণে অর্পণ করছি, তাই আমাদের সৎ কর্ম করা উচিত। এমন করে করা উচিত যা তাঁর চরণে নিবেদন করার যোগ্য। এইভাবে আমরা শুদ্ধ হতে পারি এবং সৎ কর্ম করার প্রেরণা লাভ করি। যদি আমরা কোনো অসৎ চিন্তা করে ফেলি বা কারুকে আঘাত করি বা কোনো অনুচিত কাজ করি, তার জন্য আমাদের অনুতপ্ত হতে হবে।

সন্ত জনাবাঈয়ের জীবনে একটি খুব সুন্দর ঘটনা আছে, যার থেকে আমরা এই বিষয়টির মর্ম উপলব্ধি করতে পারি। ত্রয়োদশ শতকে ভারতবর্ষে একজন মারাঠি ভক্ত কবি ছিলেন। তাঁর নাম ছিল জনাবাঈ। তিনি মহারাষ্ট্রে গঙ্গাখের নামে একটি জায়গায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর মায়ের মৃত্যু হলে জনাবাঈয়ের বাবা তাঁকে পান্ধারপুরে নিয়ে যান। শৈশব থেকেই জনাবাই পান্ধারপুরে দাম শেটটি নাম এক গৃহস্থের বাড়িতে বাঈয়ের কাজ করতেন। এই দাম শেঠি ছিলেন সন্ত নামদেবের বাবা।

জনাবাঈ পান্ধারপুরের অধিপতি দেবতা ভগবান পাণ্ডুরঙের বিশেষ অনুরাগিণী ছিলেন।তিনি যে কাজই করতেন, ‘পান্ডুরঙ্গঅর্পণম’ বলে তা তাঁর প্রিয় প্রভু পাণ্ডুরঙ্গের চরণে নিবেদন করতেন। গ্রামে যেমনটা হয়, এখনও অনেক গ্রামে যে ধারা চলে আসছে, সেইরকম, জনাবাঈ গোবর দিয়ে ঘুঁটে দিতেন। শুকিয়ে যাবার পর সেগুলি তিনি রান্নার কাজে ইন্ধন হিসেবে ব্যবহার করতেন। ঘুঁটে তৈরী করার জন্য দেয়ালে গোবর ছুড়ে দেয়া হয়, যাতে সেগুলি গোলাকৃতি হয়। এইরকম জনা বাঈ গোবর ছুঁড়তেন আর বলতেন ‘পান্ডুরঙ্গা অর্পণম।’ শুধু তাই নয়, গ্রামাঞ্চলে গোবর দিয়ে মাটিও নিকোনো হয়ে থাকে। যেটুকু গোবর অবশিষ্ট থাকতো, জনা বাঈ এর অভ্যাস ছিল ‘পান্ডু রঙ্গ অর্পণম’ বলে সেটুকু বাড়ির বাইরে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া। যেহেতু জনা বাঈ এর হৃদয় পবিত্র ছিল এবং সে যথার্থ ভক্তি নিয়ে একাজ করত, সেই গোবরের পিন্ডগুলি উড়ে গিয়ে গ্রামে পান্ডু রঙ্গের মন্দিরে গিয়ে বিগ্রহের গায়ে পড়ত।

মন্দিরের পুরোহিতের এসব কিছুই জানা ছিলোনা। তিনি লক্ষ্য করলেন যে বিগ্রহের গায়ে গোবর লেগে আছে। প্রত্যহই একই কান্ড হতে লাগলো। তিনি স্থির করলেন যে, যে বিগ্রহের গায়ে এইভাবে গোবর ছুঁড়ছে, সেই দোষীকে তিনি ধরবেন। সুতরাং তিনি গ্রামের ঘরে ঘরে গিয়ে দেখতে লাগলেন যে কোন গৃহস্থের বাড়িতে কি ঘটছে।

তিনি তৎক্ষণাৎ ছুটে জনা বাঈ এর কাছে গিয়ে তার চরণে পতিত হলেন ও তাঁর ক্ষমা ভিক্ষা করলেন। তিনি বুঝলেন যে জনা বাঈ পাণ্ডু রঙ্গের এক পরম ভক্ত।

যখনই রৌদ্রে শুকোবার জন্য জনাবাঈ ঘুঁটে দিতেন, কারণ সেগুলি তিনি ইন্ধন হিসাবে বিক্রি করতেন, তিনি পান্ডুরঙ্গ এর নাম করতেন। তার ফল হলো এই যে ঘুঁটেগুলি আগুনে পোড়ার সময় সেগুলি থেকে, ‘পান্ডুরঙ্গা,পান্ডুরঙ্গা’ আওয়াজ হতো। সেগুলি পান্ডুরঙ্গকে সমর্পণ করা হয়েছিল বলেই এমনটা হতো। লোকেও সেইজন্য জনাবাঈ এর হাতের ঘুঁটে কিনতে পছন্দ করত।

এইভাবে জনা বাঈ তার সবচেয়ে হীন কাজটিও প্রভুকে নিবেদন করে সেটিকে পবিত্র করে তুলেছিলেন। এর পরিবর্তে তিনি কখনো কিছু পেতে চাননি।

এইভাবে ঈশ্বরের চরণে নিবেদন করলে আমাদের জীবনও পবিত্র হয়ে উঠবে।

[Illustrations by Sai Easwaran, Sri Sathya Sai Balvikas Student]
[Source: Sri Sathya Sai Balvikas Gurus Handbook – Year I]

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।