রাবণের জীবনাবসান
রাবণের জীবনাবসান
রাবণ যুদ্ধ ক্ষেত্রে ছুটে গেলেন, রাম ও তাঁর সেনাবাহিনীর সাথে দীর্ঘ মেয়াদি যুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটাতে। রাবণের ইচ্ছা ছিলো রামের বিরুদ্ধে তাঁর জয় সুনিশ্চিত করতে, ‘পাতাল হোম’ নামক একটি জয়সূচক যজ্ঞ করবার। কিন্তু বিভীষণের পরামর্শে, রাম অঙ্গদ ও হনুমানকে আদেশ করলেন যাতে রাবণ কোন ভাবেই যজ্ঞটি না করতে পারেন সে বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে। রাবণের সেনাবাহিনী একেবারে নির্মূল হয়ে গেল। তখন রাম বানরদের বিশ্রাম নিতে বললেন এবং তাঁর আর রাবণের মধ্যে যুদ্ধটির দর্শক হতে বললেন। শীঘ্রই রাবণ গর্জন করতে করতে এলেন। সেই সময় রাম রাবণকে তাঁর নৈতিক উপদেশ শ্রবণ করতে বললেন। রাম বললেন ‘তিন ধরনের মানুষ আছে। প্রথম শ্রেণীর মানুষ পাতালী গাছের মতো, সুন্দর ফুল ফোটে, কিন্তু সেই ফুল ফলে পরিণত হয় না। এরা শুধুই বক্তৃতা দেয়, নিজে যা বলছে তার এক যৎকিঞ্চিৎও জীবনে পালন করে না। দ্বিতীয় দলটি কলা গাছের মতো। তাতে ফুল ও ফল দুটিই ধরে। তারা যা বলে তাই করে, কাজ করার পর নিজেকে জাহির করে। তৃতীয় শ্রেণীভুক্ত মানুষ হল কাঁঠাল গাছের মতো – যাতে ফুল হয় না শুধুই ফল হয়।’ রাম বললেন, শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি সে, যে নীরবে কাজ করে যায়, অহংকার করে না। রাম রাবণকে বললেন তাঁর অনৈতিকতা সমগ্র রাক্ষসজাতি কে ধ্বংস করে দিল।
গুরুদের বোঝাতে হবে যে আমাদের নীরবে কাজ করে যেতে হবে। আমাদের অহংকার করা উচিৎ নয়, আমাদের কোন কাজ করে তার ফলের আশা করা উচিৎ নয়। গুরুরা এখানে স্বামীর জীবনী থেকে চেপ্পিনাট্টু চেস্তারার ঘটনা বর্ণনা করতে পারেন।
শিক্ষণীয় মূল্যবোধ : একটু অনুশীলন লক্ষ লক্ষ ভাষণের চেয়ে শ্রেয়।
কর্তব্যই ঈশ্বর, কর্মই পূজা ।
রাবণ গালমন্দ করতে করতে তীর ছুঁড়লেন, কিন্তু রাম ‘অগ্নিবান’ ব্যবহার করলেন। রাবণের তীর পুড়ে ছাই হ’য়ে গেল। যতবার রাম রাবণের মুন্ড ছেদন করেন ততবারই সেই স্থানে নতুন মুন্ড জন্মায়।
গুরুদের বোঝাতে হবে যে মন্দ স্বভাব আর নেতিবাচক
গুণ, একবার অর্জিত হলে যেতে চায় না।
যখনই আমরা একটি মন্দ স্বভাবকে পরাজয় করতে চাই, অন্য আর একটি উঠে আসে আর আমরা দুষ্ট চক্রে আবর্তিত হই। সুতরাং আমাদের ভাল গুণ রপ্ত করার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে আর এর সঠিক মূল্যায়ন খুব ছোট বয়স থেকেই করতে হবে না হলে পরবর্তী জীবনে খুবই কষ্ট করতে হবে।
শিক্ষণীয় মূল্যবোধ : জীবনের ABC হল সদা সতর্ক থাকো /ভালো হও, ভালো দেখ, ভালো করো / শীঘ্র শুরু করো, ধীরে চল, নিরাপদে পৌঁছাও।
এই যুদ্ধ আঠারো দিন পর্যন্ত চলেছিল। চোদ্দ বছর বনবাসের আর কিছু দিন অবশিষ্ট ছিল। দেবতারা জানতেন রাক্ষসদের দিন শেষ হয়ে এসেছে তাই তাঁরা আকাশ থেকে ধর্মের জয়ের সাক্ষী হতে চাইলেন। যখন রাম একগুচ্ছ তীর রাবণের উদ্দেশ্যে নিক্ষেপ করলেন, তাঁর সব কয়টি মস্তক এবং হাত কেটে মাটিতে পড়ে গেল। রাবণ রামের হাতে তার প্রাণ হারালেন। দিনটি ছিল চৈত্র মাসের শুক্লপক্ষের চতুর্দশ দিন। রামের শক্তি ও পরাক্রম দেখে। সকল বানর উল্লসিত হল।
গুরুরা বাচ্চাদের বোঝাবেন :মন্দ যতই ভালো কে পরাজয় করতে উদ্যত হোক,শেষ পর্যন্ত সফল হয় না। কিন্তু শেষ অবধি নিজেদের ভালো গুণগুলিকে আঁকড়ে থাকতে হবে। আমাদের ধৈর্য হারালে হবে না, দৃঢ় সঙ্কল্প ও উদ্যম বজায় রাখতে হবে। গুরুরা বোঝাতে পারেন কিভাবে বাচ্চারা ভালো হতে পারে — সদা উপকার করো, কখনও আঘাত করো না, সকলকে ভালবাসো সকলের সেবা করো আর জীবনের ABC হল মন্দ সঙ্গ এড়িয়ে চলা, ভালো দেখ, ভালো করো ইত্যাদি — এই সকল দিব্য নির্দেশ মেনে চললে, আমরা সারা জীবন ভালো থাকতে পারি।
শিক্ষণীয় মূল্যবোধ : প্রভুকে অনুসরণ করো – শয়তানের মুখোমুখি হও – শেষ পর্যন্ত লড়াই করো – খেলা সাঙ্গ করো।
রাবণের মৃত্যুর পর, রাম লক্ষণ, সুগ্রীব, জাম্ববান আর অঙ্গদকে বললেন নল, নীল ও অন্যান্যদের নিয়ে লঙ্কায় গিয়ে বিভীষণকে লঙ্কার রাজ সিংহাসনে অধিষ্টিত করতে। হনুমানকে পাঠালেন সীতাকে গিয়ে রামের হাতে রাবণের পরাজয়ের সুখবর দিতে। শীঘ্রই সীতাকে রামের নিকট আনা হল।