প্রকৃত ব্রাহ্মণ কে?

Print Friendly, PDF & Email
প্রকৃত ব্রাহ্মণ কে?

একজন মুনি ছিলেন। তিনি গ্রাম থেকে একটু দূরেই থাকতেন। সকালে উঠে স্নান, পূজা, জপ, তপ করতেন। সারাদিন তার পূজাপাঠে কেটে যেতো। তিনি গ্রামে কারোর, সাথে মিশতেন না, কারণ তার ধারণা যে এই লোকগুলি অত্যন্ত নীচ, কুটিল, বুদ্ধিহীন,বোকা, তার সঙ্গে মেশবার যোগ্য নয় এবং এদের সঙ্গে মিশলে তার মন অশুচি হয়ে যাবে। তিনি নিজেকে এদের চেয়ে অনেক উর্দ্ধে ভাবতেন এবং তার বাড়ীর ত্রিসীমানাতে কেউ এলে তিনি বিরক্ত হতেন। এইসব করে তিনি একটি জিনিস খুব ভালভাবে অর্জন করতে পেরেছিলেন, সেটি হচ্ছে ক্রোধ। যেহেতু তিনি জগত সংসারে সবাইকে তার চেয়ে ছোট, নীচ বলে মনে করতেন সেই হেতুই সমস্ত জগতকেই ক্রোধ দেখাবার মতো অহংকার তার মনে এসে গিয়েছিল। আসলে বাস্তবে যে কাজগুলি করছেন সেই কাজগুলি করে তিনি যদি ভগবানকে চাইতেন তাহলে হয়ত ভগবানকেই পেতেন। কিন্তু তিনি প্রকৃতপক্ষে চেয়েছিলেন, নিজের অহংকারকে বাড়াতে, তাই সেই অহংকার, চরম বেড়ে গিয়েছিল।

Dhobi washing near the hermit

এই গ্রামে একদিন একটি ধোপা এলা। সে কিন্তু অতশত জানত না। মুনির বাড়ির কাছাকাছি একটি ঝরণা ছিল, সেই ঝরণার ধারে গিয়ে ধোপাটি কাপড় কাচতে লাগল, এই কাপড় কাচার জল ছিটকে গিয়ে তপস্বীর শরীরে লাগল। তিনি তখন একটি গাছের নীচে বসে মন্ত্র পড়ছিলেন, ঐ ধোপাটি তাঁকে দেখতে পায়নি। সেই মুনি তখন সেখানে বসে অত্যন্ত ক্রুদ্ধভাবে বললেন, “থামো, থামো, তুমি কি করছে?” তুমি ব্রাহ্মণকে চেনো না? তার গায়ে জল ছেটাচ্ছো, এক্ষুণি থামো। ধোপাটি কাপড় কাচছিল তাই তার আওয়াজে এই ব্রাহ্মণের কথা শুনতে পেল না। যার ফলে সে যেমন কাচছিল তেমনিই কাচতে লাগল। তাতে এই ব্রাহ্মণ অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হলেন এবং তার আসন থেকে উঠে ঐ লোকটির দিকে তেড়ে গেলেন ও তাকে বেধড়ক মারতে লাগলেন। এই বেচারী ধোপা মার খয়ে খুব হকচকিয়ে গেল এবং যখন দেখল, যে একজন সম্মানীয় ব্রাহ্মণ তাকে মারছে, সে তখন তার নিজের শক্তি প্রয়োগ করল না, পড়ে পড়ে মার খেতে লাগল। যখন মারতে মারতে ক্লান্ত হয়ে ব্রাহ্মণ থামলেন, তখন ধোপা জিজ্ঞেস করল, “প্রভু, আমি কি দোষ করেছি, যার জন্য আমায় এই শাস্তি দিলেন?” ব্রাহ্মণ বললেন, “তুমি, ব্যাটা চণ্ডাল, তুমি আমার গায়ে জল ছিটিয়ে দিয়েছ, কাপড় কাচার আর জায়গা পেলে না, এখানে এসে কাপড় কাচার জল ছিটিয়ে আমাকে অপবিত্র করে দিলে?।”

Dhobi's reply for taking a dip in the stream

লোকটি শুনে সঙ্গে সঙ্গে ব্রাহ্মণের পায়ে পড়ল, বলল, “প্রভু, আমি না জেনে এই অপরাধ করেছি, আপনি আমায় ক্ষমা করবেন।” তৃপ্ত হলো তার অহংকার, শান্ত হল তাঁর ক্রোধ। এবার ব্রাহ্মণ চললেন নদীতে স্নান করতে কারণ। অশুচি লোক স্পর্শ করায় তিনি অশুচি হয়ে গেছেন, কাজেই স্নান করে নিজে পবিত্র হবার জন্য চললেন। তিনি স্নান করে উঠে এলেন, এই ধোপাও তার দেখাদেখি নদীতে গিয়ে স্নান করল।

ব্রাহ্মণ জিজ্ঞাসা করলেন, “আরে, তুমি চান করলে কেন?” সে বলল, “প্রভু, দেখলাম আপনি চান করলেন, তাই আমিও চান করে নিলাম। ব্রহ্মেণ বললেন আরে, আমি তো চান করলাম, তোমার মত একজন অশুচি, অপবিত্র লোককে ছুঁয়েছিলাম বলে।” ধোপা একটু ভেবে নিয়ে উত্তর দিল, “প্রভু, তাহলে আমারও চান করা ঠিক কাজই হয়েছে।” ব্রাহ্মণ বলল, “তার মানে তুমি বলতে চাও যে আমাকে ছোঁয়াতে তুমি অপবিত্র হয়েছে ?” ধোপা বলল, “প্রভু, আমাকেও এইমাত্র এমন একজন স্পর্শ করেছিল যার ক্রোধ তার বুদ্ধিকে স্তিমিত করে দিয়েছিল, বুদ্ধিকে ঢেকে দিয়েছিল। সেই ক্রোধ, চণ্ডাল, তাকে চালিয়েছিল। তাকে স্পর্শ করাতে আমিও অশুচি, অপবিত্র হয়েছিলাম, তাই আমিও স্নান করলাম।” এতদিনে শাস্ত্রপাঠ যা শেখাতে পারেনি, মুনি সেই জিনিসটি এই অশিক্ষিত, মুখ, নীচ ধোপার কাছ থেকে শিখলেন যে তিনিই প্রকৃত সাধু যিনি তার ক্রোধকে তার সমস্ত ইন্দ্রিয়কে জয় করতে পারেন, যিনি তার রিপুকে বশে আনতে পেরেছেন। তিনিই প্রকৃত রাজা যার ইন্দ্রিয় নিজের আয়ত্তের মধ্যে, যাকে কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, মদ, মাৎসর্য নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না, তিনিই প্রকৃত ব্রাহ্মণ। শুধু শাস্ত্রপাঠ, গঙ্গাজল, নিত্যস্নান এবং স্বপাক আহার, এতে প্রকৃত ব্রাহ্মণ হওয়া যায় না।

প্রশ্নঃ
  1. মুনি কেন ধোপার উপর রেগে গেল এবং চেঁচাতে লাগল?
  2. ধোপাটি কি করলো?
  3. ধোপা তার স্বপক্ষে কি যুক্তি দেখালো?

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।