জীবনের ফিতে
জীবনের ফিতে
উদ্দেশ্য: ব্যবহারিক প্রমাণ সহকারে প্রদর্শন করতে হবে- সময় চলমান এবং কিভাবে সময় অপচয়ের পরিনাম হয় জীবন অপচয়।
প্রয়োজনীয় উপকরণ: আন্দাজ এক মিটার /১০০ সেমি লম্বা একটি রঙিন ফিতে, একটি মাপার ফিতে ও একটি কাঁচি।
শ্রেণী কক্ষের কর্মকাণ্ড: এবার ছেলে মেয়েদের বুঝিয়ে বলে দিতে হবে যে ওই ফিতের ১ সেমি মানুষের জীবনের ১ বছরকে প্রতিনিধিত্ব করছে। ১০০ সেমি লম্বা ওই ফিতে তাই মানুষের জীবনের ১০০ বছরকে প্রতিনিধিত্ব করছে।
এই প্রশ্ন দিয়ে শুরু করা যাক: একজন মানুষের গড় বয়স কত?
ধরা যাক ছাত্র ছাত্রীদের কাছ থেকে উত্তর এলো- এখনকার দিনের সময় ও বয়সের হিসেবে একজন মানুষের আয়ুকাল ৭০/৭৫ আশা করা যেতে পারে। যেহেতু ফিতের দৈর্ঘ্য ১০০ সেমি যা মানুষের জীবনের শতায়ুকে নির্দেশ করছে , আমরা ২৫ সেমি কেটে নিতে পারি যাতে ফিতের দৈর্ঘ্য এসে দাঁড়ায় ৭৫ সেমি।
তাহলে আমাদের হাতে এখন জীবনের ৭৫ টি বছর রয়েছে, তাই তো?
হ্যাঁ-এভাবে এগিয়ে গিয়ে আমরা ছেলেমেয়েদের পরের যে প্রশ্নটা করতে পারি তা হল:
এই ক্লাসে যোগদানকারী ছেলেমেয়েদের গড় বয়স কত?
উত্তরে তারা বলবে যে তাদের বয়স ৯ থেকে ১২ বছর। (গ্রুপ ২ বালবিকাশ ছাত্রছাত্রী)। এক্ষেত্রে গড় বয়স ১১ ধরা যেতে পারে।
সুতরাং পরের পদক্ষেপ হল ফিতে থেকে আরও ১১ সেমি কেটে বাদ দেওয়া।
তাদের ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে দিতে হবে এই পৃথিবীতে এগারোটা বছর তারা ইতিমধ্যেই খরচ করে ফেলেছে – এই এগারোটা বছর তারা আর ফিরে পাবে না; যেহেতু সময় এমনই এক ধরনের পুঁজি বা সংস্থান যেটা একবার চলে গেলে আর তাকে ফিরিয়ে আনা যায়না এবং চিরকালের মত হারিয়ে যায়। এই বিষয়টির বা এই চিন্তাটির ওপর জোর দিতে হবে যাতে এই কর্মকান্ডের আড়ালে যে ধারণাটি রয়েছে তা ছেলেমেয়েরা পরিস্কার ভাবে বুঝতে পারে।
সুতরাং এখন আমরা কেটে নিলাম ১১ সেমি (অর্থাৎ ১১ বছর অতিক্রান্ত জীবন কাল) যা হল হাতের ফিতের দৈর্ঘ্য। হাতে রইলো ৬৪ সেমি। একদম ঠিক। অর্থ- আমাদের জীবনের আর ৬৪ বছর আমাদের হাতে রয়েছে।:
- এর সম্পূর্ণ সদ্ব্যবহারের জন্য
- আমাদের স্বপ্ন ও আবেগের খোঁজ ও তা পুরনের জন্য
- আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছনোর ও উদ্দেশ্য চরিতার্থের জন্য
- জীবনের উদ্দেশ্য ও অর্থ খোঁজার জন্য
এটা কি ঠিক? এখানে ঠিকই বলা হয়েছে কিন্তু এখানেও ভুল রয়েছে। ওদের বলা যাক ভুলটা কোথায়।
আমরা সঠিক যদি জীবনকে পরিপূর্ণ ভাবে যাপন করার পরিকল্পনা করি কিন্তু আমরা ভুল করবো যদি ভাবি এই পুরো বছর গুলোই আমাদের হাতে আছে আমাদের পরিকল্পনা ফলপ্রসূ করার জন্য। নিশ্চিত ভাবেই পুরো ৬৪ বছর আমাদের হাতে নেই। ভেবে অবাক হচ্ছ কিভাবে??
ঠিক আছে, এখানে সেই ‘কেনো’ বা ‘কিভাবে’ র উত্তরগুলো দেওয়া হল :
- রবিবারগুলি হল সাধারণত বিশ্রাম ও নব উদ্যম ও প্রাণশক্তি ফিরিয়ে আনার দিন এবং প্রতি সপ্তাহ শেষের দিনগুলিতে আমরা কোনো সৃষ্টিধর্মী, উৎপাদনশীল ও উপযোগী কাজ ঠিকঠাক ভাবে করে উঠতে পারিনা। সুতরাং বছরের ৫২ টি রবিবার কার্যতঃ কর্মহীন। একে যদি আমরা আমাদের হাতে রাখা ৬৪ বছর দিয়ে গুণ করি এবং তারপর ৩৬৫ দিন দয়ে ভাগ করি [(প্রতি বছরে ৫২ দিন * ৬৪ বছর ) /৩৬৫ দিন] তবে তা ৯ বছরের মত দাঁড়ায়।
তাহলে আমাদের পরবর্তী পদক্ষেপ কি? ঠিক তাই। ফিতে থেকে আরও ৯ সেমি কেটে বাদ বাদ দেবার সময় এখন। সুতরাং আমাদের হাতে এখন কত রইলো? ৫৫ সেমি – অর্থাৎ আমাদের এখন ৫৫ বছর হাতে রয়েছে আমাদের স্বপ্ন পূরণ করার ও লক্ষ্যে পৌঁছনোর জন্য। ঠিক তো? ঠিক, আমরা আবার একটু ভুল করছি। - সরকারি / জাতীয় ছুটি এবং অন্যান্য ছুটি সহ বছরে আরও প্রায় ২০ দিন ছুটির দিন। এই ২০ দিন যা আমরা সাধারণত পছন্দ করি বিশ্রাম ও আরাম উপভোগের মধ্য দিয়ে যাপন করতে এবং সেসময় প্রয়োজনীয়, উৎপাদনশীল ও সৃষ্টি ধর্মী কাজে মন দিতে পারিনা। সুতরাং এখন আমরা ২০ কে ৬৪ দিয়ে গুণ করবো এবং তারপর ৩৬৫ দিয়ে ভাগ করবো [(প্রতি বছরে ২০ দিন * ৬৪ বছর)/এক বছরে ৩৬৫ দিন] তা এসে দাঁড়াচ্ছে প্রায় ৪ বছরে। ছোটোরা, তাহলে এর থেকে কি বোঝা গেলো? হ্যাঁ, আমরা ফিতে থেকে ৪ সেমি কেটে ফিতের দৈর্ঘ্য কমিয়ে দিলাম।
- তারপর আসছে অসুস্থতা জনিত ছুটি ও বার্ষিক ছুটি যা বছরে প্রায় ৪০ দিনে এসে দাঁড়ায়; একে ৪৬ দিয়ে গুণ করো এবং ৩৬৫ দিয়ে ভাগ করো । এটা এসে দাঁড়াচ্ছে ৭ বছরে। এখন তোমার কি অনুশীলন করনীয় তা তোমার জানা। হ্যাঁ, আমরা ফিতের আরও ৭ সেমি কেটে বাদ দিলাম। এবং আমরা কি কি বিষয় এখনও ভাবিনি !!! তোমার প্রতিদিনের কাজকর্মের কথা একটু ভাবো।
- তোমরা প্রতিদিন ৮ ঘন্টা ঘুমাও।
সকালের খাওয়া দুপুরের খাওয়া ও রাতের খাওয়া এবং এসবের মধ্যবর্তী জলখাবার এসবকিছু মিলিয়ে তোমার প্রতিদিন দুঘন্টা মত সময় ব্যয় হয় ।
স্কুল , সহ- পাঠ্যক্রম ক্লাস, পাঠ্যক্রম অতিরিক্ত বা বহির্ভূত কাজকর্ম প্রভৃতির জন্য তোমাকে একস্থান থেকে অন্য স্থানে যাতায়াত করতে হয় এবং তোমার খরচ হয় দিনে দুঘন্টা সময়।
সুতরাং আমাদের হাতে থাকছে দিনে ১২ ঘন্টা এবং একে ৩৬৫ দিয়ে গুণ কর ৬৪ দিয়ে ভাগ করো। [ প্রতিদিন ১২ ঘন্টা * ৩৬৫ দিন* ৬৪ বছর ] তাহলে এসে দাঁড়াচ্ছে প্রায় ২৮০৩২০ ঘন্টা । যেহেতু আমরা বছরের হিসাব চাই , ঘন্টার সংখ্যাটিকে প্রথমে ৩৬৫ দিন দিয়ে তারপর ২৪ ঘন্টা দিয়ে ভাগ করতে হবে। সুতরাং ৩২ বছর চলে গেলো ।
এবং এরপর তুমি কি করবে ? ফিতে থেকে ৩২ সেমি কেটে বাদ দেবে ।
অবশেষে ফিতের দৈর্ঘ্য কত রইলো? ফিতেটিকে দৈর্ঘ্যে খুব ছোট দেখাচ্ছে। ফিতের দৈর্ঘ্য এখন কততে এসে দাঁড়ালো? মাত্র ১২ সেমি !!!!!
তুমি কি বিশ্বাস করতে পারছো – কত দ্রুত ১০০ থেকে ১২ তে নেমে এলো। সুতরাং আমাদের হাতে পরে রইলো ১২ সেমি দৈর্ঘ্যের একটি ফিতে। – অর্থাৎ, আমাদের হাতে শুধু জীবনের ১২ বছর কাল সময়ই পরে রয়েছে !!!
এই বারো বছরের মধ্যে আমাদের কত কি করতে হবে। আক্ষরিক অর্থে আমাদের হাতে খুবই অল্প সময় আছে। আমাদের মধ্যে যারা ভাবছে যে পৃথিবীর পুরো সময়টাই তাদের, তারা কী চূড়ান্ত ভুল ধারণার মধ্যে রয়েছে ! এটি বিশেষ ভাবে সেই বিষয়টি যা নিয়ে আমাদের ভাবার প্রয়োজন রয়েছে। এবং দ্রুত ভাবনা চিন্তা কর!! যেহেতু ঘড়ির টিক্ টিক্ থেমে নেই …
এবং তোমাদের মধ্যে কোনো বুদ্ধিমান শিশু এটা দেখে অবাক হও যে অবশেষে সৌভাগ্য ক্রমে অধিকতর বড় ফিতেটি হাতে ধরে রাখতে পেরেছো, তবে তুমি নিশ্চিত ভাবে সঠিক পথে রয়েছো। সেই সব দিন ও ঘন্টাগুলির কথা ভাবো যা তুমি উৎপাদনশীল ও উপযুক্ত কাজে ব্যবহার করতে পারবে এবং অযথা সময় নষ্ট কোরোনা এবং এই ভাবনাই অবশেষে অনেক বড় ফিতে হাতে রাখতে পারার সাফল্যের লক্ষ্যে তোমায় নিয়ে যাবে অর্থাৎ এই লম্বা ফিতের মানে হল তোমার জীবনের অনেক বেশী সংখ্যক মূল্যবান ও শ্রেষ্ঠ সময় ও বছরগুলি।
তোমার সম্পূর্ণ জীবনের সম্ভাব্য শ্রেষ্ঠ ব্যবহারের প্রচেষ্টার প্রতি পরিপূর্ণ শুভেচ্ছা রইলো।