সাধক কবির

Print Friendly, PDF & Email
সাধক কবির

Kabir arguing with a people to stop sacrificing the calf

একদিনের কথা তোমাদের বলি—মুসলমানদের একটি পূণ্যতিথি, উৎসবের দিন। কবীর বলে একটি ছেলের কাকার বাড়িতে সেদিন বড় উৎসব। সবাইকার নিমন্ত্রণ হয়েছে কিন্তু তাতে কবীর নেই, এমনকি কবীর জানেও না, যে এই উৎসব আছে। কবীর খেলাধূলা করে বাড়ী ফিরে এসে বাবা-মায়ের খোঁজ খবর করতে করতে জানতে পারল যে ওনারা নেই, তাঁরা কাকার বাড়ীতে গেছেন।

সে কাকার (চাচা) বাড়ীতে গিয়ে দেখল, সেখানে বহু লোকজন, উৎসবের পরিবেশ। আরও একটু এগিয়ে গিয়ে দেখতে পেলো একটি সুন্দর ছোট বাছুরকে দড়ি দিয়ে বাঁধা হয়েছে, তার গলায় মালা পরানো হয়েছে। চারিদিকে এই উৎসবের বাজনার মধ্যে ঐ বাছুরটির বড় বড় চোখে জল।

কবীরের বুকটা ভেঙ্গে গেল। সে বলল, “কেন? কেন ওকে বেঁধে রেখেছো? কি করতে চাও তোমরা?

সেখানে অনেক মৌলবী ছিলেন, মোল্লা ছিলেন। তাঁরা বললেন, “আরে দাঁড়াও, জানো না, আজকে ওকে বলি দেওয়া হবে, আল্লার কাছে ওকে বলি দেওয়া হবে।” কবীর বললেন, “মৌলবী সাহেব, আমাকে বুঝিয়ে বলুন, “আল্লার কাছে একে বলি দেওয়ার অধিকারটা আপনাকে কে দিয়েছে?”

মৌলবী সাহেব তাঁর অসীম জ্ঞান নিয়ে এই অকালপক্ক বালকটিকে বেঝিতে চাইলেন যে, এটি পবিত্র উৎসব, এই বাছুরটিকে বলি দেওয়া এই পবিত্র উৎসবের অঙ্গ এবং এটি করলেই আল্লা খুশী হবেন।

তখন কবীর প্রশ্ন করলেন, যে আমাকে একটা ছোট্ট উত্তর দিন, আমাদের কে সৃষ্টি করেছেন?

তখন মৌলবী বললেন, “আরে বোকা, কেন, আল্লা।” কবীর বললেন, “এই বাছুরটিকে কে সৃষ্টি করেছেন?”

বললেন, “কেন, সেও আল্লা।”

কবীর জিজ্ঞাসা করলেন যে, “এই বাছুরটিকে কেন তিনি সৃষ্টি করেছেন ” মৌলবী সাহেব বিজ্ঞালোকের মতো বললেন, “খুব সহজ, এই পৃথিবী আল্লা সৃষ্টি করেছেন, মানুষকেও আল্লা সৃষ্টি করেছেন, যাতে মানুষ পৃথিবীর সমস্ত জিনিসকে ব্যবহার করতে পারে, উপভোগ করতে পারে।”

কবীর বললেন, “ঠিক তাই, যাতে মানুষ পৃথিবীর আর সমস্ত জিনিসকে ব্যবহার করতে পারে, উপভোগ করতে পারে, সেইজন্যই আল্লা সৃষ্টি করেছেন। অন্য জিনিসকে নষ্ট করে দেবার জন্য, হত্যা করে দেবার জন্য, শেষ করে দেবার জন্য নয়। তাহলে আমাকে বলুন, কেন? কেন? এই বাছুরটিকে, যে আপনাদের কোন দোষ করেনি, কোন ক্ষতি করেনি, তাকে হত্যা করতে চাইছেন? একটু ভাল খাবেন বলে?”

kabir stopping the calf sacrifice

একজন মৌলবী জিজ্ঞাসা করলেন, কবীর, তাহলে কি আমাদের গরুর দুধ খাওয়াও উচিত নয়?

কবীর বললেন, “না, না, দুধ খেতে কোনো দোষ নেই। যেমন করে আমরা মায়ের দুধ খাই, গরুকেও আল্লা সেই রকমভাবেই দিয়েছেন, যাতে আমরা দুধ পান করতে পারি। দুধ পান করায় কোনো দোষ নাই। আমাদের মায়ের দুধ পান করায় যদি কোন দোষ না থাকে, তাহলে গরুর দুধ পান করার মধ্যে কোন দোষ নাই। কিন্তু তাকে সেই কৃতজ্ঞতাটা জানাতে হবে। সেই মাতৃসমা গরুটিকে হত্যা করা আর চলবে না।”

তাঁরা কবীরের আন্তরিক গভীর মর্মস্পর্শী হৃদয়স্পর্শী কথা শুনে আর কোন উত্তর দিতে পারলেন না। কবীরের কথা সবাই নিরুত্তরে শুনলেন; উত্তর দেওয়ার মতো কিছু ছিল না। এই বিজ্ঞ মৌলবীদের সব বিদ্যা নস্যাৎ হয়ে গেল।

কবীর বললেন, “আপনারা কোরান পড়ুন, ভাল করে পড়ে তার মানে বুঝুন, তাতে আল্লা কোথাও বলছেন না, পয়গম্বর কোথাও বলছেন না যে তুমি অন্যদের ক্ষতি কর, ধ্বংস কর।”

মৌলবীরা উত্তর দিতে পারলেন না; কিন্তু তারা যে খুব খুশী হলেন তা নয়, কেউ কেউ রেগে বাড়ী চলে গেলেন, কেউ কেউ হতাশ হলেন ভাল খাবারটা নষ্ট হলো বলে, কেউ অখুশী হয়ে চলে গেলেন, কেউ ভাল নেমন্তন্নটা মাটি হয়ে গেল বলে ক্রুদ্ধ হলেন। সেদিন ঐ বাছুরটির প্রাণ বেঁচেছিল। কবীর জয়ী হলেন তাঁর হৃদয়ের কথায়।

প্রশ্নঃ
  1. কাকার বাড়ী গিয়ে কবীর কি দেখল?
  2. মৌলবীদের সে প্রথম কথা কি বলল?
  3. তারা কি উত্তর দিল?
  4. কবীর কিভাবে মুসলমানদের অহিংসার নীতি শিক্ষা দিল?

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।