সত্য
সত্য
বাবা বলেছেন “সৎ ও সত্তার জন্য ধীশক্তির যে অন্বেষা তা যেখানে সম্পূর্ণতা পায়” তাই হল সত্য। এটি অবশ্যই সত্যের পারমার্থিক বা আধ্যাত্মিক বা উচ্চমার্গীয় নিহিতার্থ এবং অর্থ। নৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখলে এটি সত্যবাদিতা এবং চিন্তা, বাক্য ও ক্রিয়ার সমন্বয়কে বোঝায়। “মনস্যেকম, বাচস্যেকম, কর্মন্বেকম” …এই কথাই বাবা বলে থাকেন।
সত্য পরমার্থের সম্পূর্ণ সমন্বয়। সত্য হল পরমসত্তার সেই আধ্যাত্মিক দিক যার কখনও কোন পরিবর্তন হয়না। এটি সকল প্রাণীর স্বরূপ। এ হল সেই দিব্যতা যা আমাদের প্রত্যেকের মধ্যে বর্তমান। আমরা আমাদেরই অন্তস্থিত নির্মলতাকে যত পূর্ণতার সঙ্গে ব্যক্ত করি, ততই আমাদের সত্য স্বরূপের চেতনা, উপলব্ধি, আমাদের অন্তরে আরো আরো বিকশিত হয়। বুদ্ধি যখন আন্তর প্রজ্ঞায় অনুসন্ধান শুরু করে, তখনই সত্যের প্রকাশের অগ্রগতি শুরু হয়। মন যখন সকল জাগতিক ও ইন্দ্রিয়জ বাসনা ত্যাগ করে এবং একাগ্র হয়ে সত্যের ধ্যান করে,তখন সে চৈতন্যের এক ঊর্দ্ধ স্তরে উন্নীত হয়।তার মধ্যে প্রজ্ঞা জন্মায় এবং সে সত্যকে উপলব্ধি করে। সেটিই হল ত্রিকাল সত্য, যা অবিকারী,নিত্য,পরমসত্য; অতীত, বর্তমান বা ভবিষ্যত, কোন কালেই তার কোন পরিবর্তন হয়না। তিনিই পরমাত্মা,ঈশ্বর, আত্মা,তিনিই পরব্রহ্ম।
মনের শুদ্ধির জন্য সত্যবাদিতা এক অপরিহার্য নিয়মানুবর্তিতা। সত্য বলা আমাদের সামাজিক প্রয়োজন ও দায়বদ্ধতা। মিথ্যাচার মনকে কলুষিত করে,মনের শান্তি নষ্ট করে,পরিবেশকে দূষিত করে ও সমাজের ক্ষতি করে।
শাস্ত্রগুলিতে এটাই দাবী করা হয়েছে যে সত্য প্রধান ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নীতি—-সত্যম নাস্তি পরো ধর্মঃ। সুতরাং সত্য হল জীবনের প্রাথমিক মূল্যবোধ। যথাসম্ভব কম কথা বলবে। বেশী কথা বললে তোমরা সত্য থেকে দূরে সরে যেতে পার। এই কারণেই প্রাচীন কালে” কথা কম, কাজ বেশী” এই নীতি অনুসরণ করা হতো। তোমাদের কথা ও কাজে প্রেমকে অন্তঃসলিলা নদীর মতন বয়ে দিতে যেতে হবে। প্রেমের সঙ্গে যে কথা বলা হয়,তা সত্য ও প্রেমভরে যে কাজ করা হয়,তা ধর্ম। তাহলেই তোমরা শান্তি পাবে। (SSS ৩০.১৬: জুলাই ১৮,১৯৯৭)
২০শে ডিসেম্বর ১৯৬৭সালে কেরালায় এক দিব্য ভাষণ দিতে গিয়ে স্বামী বলেন, “তোমরা যদি জানতে চাও যে বাচিক সত্য কিভাবে রক্ষা করতে হবে,তাহলে ভগবদ্গীতা পড় (মহাভারতের অন্তর্গত দিব্য সঙ্গীত)।দেখবে যে সেখানে বলা হয়েছে যে” ‘অনুদ্বেগকরম্ বাক্যম্’ অর্থাত এমন বাক্য যা অন্যের মনে,ব্যথা, ক্রোধ বা দুঃখের সৃষ্টি করেনা তাই হল শ্রেষ্ঠ বচন। শাস্ত্রে একথাও বলা হয়েছে যে, ‘সত্যম্ ব্রুয়াত্,প্রিয়ম ব্রুয়াত্ ন ব্রুয়াত্ সত্যম অপ্রিয়ম’ (সত্য বল,মিষ্ট ভাবে বল,অপ্রিয় সত্য কখনও বলোনা।) কেবলমাত্র শ্রোতাকে খুশী করতে কোনও কথা বোলনা। যদি মনে কর যে সত্য বললে কেউ দুঃখ বা ব্যথা পাবে,তাহলে চুপ করে থাকবে। সাধারণ, দৈনন্দিন জীবনের এটাই সত্য ব্রত।