জীবে সেবা করে যেইজন, সেইজন সেবিছে ঈশ্বর

Print Friendly, PDF & Email
জীবে সেবা করে যেইজন, সেইজন সেবিছে ঈশ্বর

আব্রাহাম লিংকন ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। সারাদেশ জুড়ে তিনি দয়াদ্র-হৃদয় এবং সত্য ও ন্যায় নিষ্ঠ বলে পরিচিত ছিলেন। শিশুকাল থেকেই আব্রাহাম জনগণের প্রয়োজনে সেবা ও সাহায্য করতে ভালোবাসতেন। প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর, তার প্রাত্যহিক ভ্রমণের সময়ে একদিন বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে গিয়েছেন। বাড়ী ফেরার সময়ে, তিনি লাগাম সমেত এক ঘোড়াকে পিছনে দেখতে পেলেন, অথচ তার সওয়ার নেই। ঘোড়ার মালিক কে, আর কেনই বা ঘোড়াটা এই ভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে, এ বিষয়ে বন্ধুরা কেউ কিছু জানে নাকি আব্রাহাম তা জানতে চাইলেন। বন্ধুরা বললো, “একজন লোককে তারা জানে, এ ঘোড়া তার হতে পারে। লোকটা মাতাল; নিশ্চয়ই রাস্তার কোনখানে, ঘোড়ার পিঠ থেকে পড়ে গিয়েছে।”

Abraham notices horse without rider

সবাই মিলে ফিরে গিয়ে তাকে খুঁজে বার করার জন্য আব্রাহাম প্রস্তাব করলেন। বন্ধুরা এতে একমত হলো না। তাঁরা বললেন, “আমরা খুঁজতে যাবো কেন? অন্ধকার হয়ে আসছে, তাড়াতাড়ি পা চালিয়ে চল। মাতালকে উচিত শিক্ষা পেতে দাও। তারা চলতে শুরু করলেন। তাদের সঙ্গে যোগ না দিয়ে পিছন ফিরলেন। তিনি বললেন, “তাহলে আমায় মাপ করতে হবে। আমার মনে হয় লোকটির সাহায্যের দরকার। সে নিশ্চয়ই পড়ে গেছে, সাংঘাতিকভাবে আঘাতও লাগতে পারে।” তাঁর বন্ধুরা বাড়ীর দিকে হাঁটতে লাগলে, আব্রাহাম ফেলে আসা রাস্তা ধরে, হতভাগ্য লোকটিকে খুঁজে বেড়াতে লাগলেন।

Abraham taking the drunken home

কিছুদূর গিয়ে তিনি মদ্যপায়ী লোকটিকে রাস্তার ধারে অজ্ঞান অবস্থায় দেখতে পেলেন। আব্রাহাম, লোকটির জ্ঞান কিছু পরিমাণে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হলেনএবং অনেক কষ্টে তাকে নিজের বাড়ীতে নিয়ে এলেন। একটা মাতালকে বাড়ি নিয়ে আসায় আব্রাহামের বাড়ির লোকেরা রাগারাগি করতে লাগলো। তাদের কটুক্তি তিনি কানে তুলবেন না। তিনি শান্তভাবে তাদের বললেন, “দেখ, লোকটা মাতাল হতে পারে, কিন্তু আমাদের মতন সে-ও একজন মানুষ। তাকে সাহায্য করা আমাদের কর্তব্য।” তাকে ধরে নিয়ে গিয়ে আব্রাহাম কলঘরে ঠাণ্ডা জলের ‘শাওয়ারে’র নীচে খান কক্ষণ রাখলেন। তার জ্ঞান পুরো পুরি ভাবে ফিরে এলে, আব্রাহাম তাকে খেতে দিলেন। তারপর, তাকে বাড়ি যাবার অনুমতি দিলেন।

আব্রাহাম বিশ্বাস করতেন যে, মানুষকে ভালবেসে সেবা করলে, ঈশ্বরের সেবা করা হয়। আমেরিকানরা নিগ্রোদের ক্রীতদাসের মতন কাজ করায় দেখে তিনি অসুখী বোধ করেছিলেন। এর জন্যে, তিনি স্বদেশবাসীর সঙ্গে যুদ্ধ করে এই ক্রীতদাসত্ব বন্ধ করেছিলেন ও নিগ্রোদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছিলেন। এতে নিগ্রোরা, এমনকি অনেক আমেরিকানও বলাবলি করতো, “স্বর্গে ঈশ্বর ও মর্তে আব্রাহাম লিঙ্কন, শুধু এই দুজন আমাদের দেখার জন্য আছেন।”

প্রশ্নঃ:
  1. তুমি কি কখনও কোন বিপদগ্রস্ত লোককে সাহায্য কিংবা সেবা করেছো? যদি করে থাকে, কি ভাবে করেছে এবং তোমার কি অভিজ্ঞতা হয়েছিল?
  2. লিঙ্কনকে তার দেশবাসীরা এত ভালবাসতো কেন?
  3. অন্য কোন মহৎ ব্যক্তির নাম বলতে পারো যিনি স্বজাতীয়দের প্রতি দয়াবান ছিলেন ও তাদের সাহায্য করেছেন? তার সম্বন্ধে যা জানো বর্ণনা কর।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।