শিব শম্ভো – বিশদ পাঠ

Print Friendly, PDF & Email
শিব শম্ভো ভজনে গঙ্গা প্রসঙ্গ। SATHYA SAI BABA

প্রভু শিবের জটা থেকে গঙ্গা প্রবাহিত, এইভাবেই সর্বদা বর্ণিত হয়েছে। কেন এরকম?

রাম কথা রসবাহিনীতে ভগবান গঙ্গা নদীর গুরুত্ব ও কিভাবে তাকে মর্ত্ত্যে আনা হল তার বর্ণনা করেছেন। বাবা বলেন, “গঙ্গা হল দিব্য পবিত্র মহত্তম জলধারা। এর অমৃতময় সুমিষ্ট জলধারা অমরত্ব প্রদান করে। তিনি, যা সকলের হিতকর, তা অর্পণ করেন।

ভগবান বলেন, “দেবতারা তাঁদের সমৃদ্ধির জন্য মা গঙ্গাকে আবাহন করে প্রার্থনা করেছিলেন। সুতরাং, হিমালয় দেবতা, হিমবা্ন দেবতাদের আর্শীবাদ পাওয়ার জন্য এবং ত্রিলোকের উপকারের জন্য মা গঙ্গাকে তাদের উপহার দিলেন। গঙ্গা যে পৃথিবীতে প্রবাহিত, তাঁকে দেবতারা আনয়ন করেন। মা গঙ্গা পৃথিবীতে এলেন তিন ধাপে – এক অংশ স্বর্গে, এক অংশ পৃথিবীতে এবং অপর অংশ ভূগর্ভে।

[উপরিউক্ত উদ্ধৃতি নীচের link এর ১৩২ নং ও ১৩৩ নং পৃষ্ঠা থেকে নেওয়া হয়েছে। http:www.sssbpt.info/vaninis/ramakatha/ramkatha107.pdf]

ত্রেতা যুগে সাগর নামে এক রাজা ছিলেন, যিনি প্রভু রামের পূর্বপুরুষ। এক মুনির অভিশাপে তাঁর সন্তানেরা ভষ্ম হয়ে যান। এক ভক্তিমান অগ্রজ সাধু ব্যক্তি বলেন গঙ্গা নদীর পূণ্যস্পর্শে তারা আবার প্রাণ ফিরে পাবেন। কিন্তু এটা অনেক প্রজন্ম পরে সাগর রাজার এক বংশধর, ভগীরথের দ্বারা সম্ভব হয়।

ভগীরথ কঠিন তপস্যা করেন এবং এক দিব্যদর্শন পান। তিনি এক দিব্য ধ্বনি শুনতে পান, যিনি তাঁকে কি চায়, জানতে চান। ভগীরথ তাঁর ইচ্ছা জানান কিন্তু তাঁকে বলা হয় গঙ্গা ক্ষিপ্রগতি শক্তিশালী জলধারা, এর মর্ত্তে আগমনের প্রভাব হবে ভয়ঙ্কর। অতঃপর, গঙ্গাকে প্রথম শিবের জটায় আনয়ন করতে হবে যাতে মর্ত্তে কম শক্তিতে এই জলধারা আগমন করে।

সুতরাং ভগীরথ কঠিন তপস্যা করলেন এবং তিনি সফল হলেন। স্বয়ং ভগবান শিব পৃথিবীতে আগমন করেন এবং মা গঙ্গাকে নিজ মস্তকে ধারণ করেন। গঙ্গা নদী তাঁর জটা থেকে সাতটি স্বতন্ত্র ধারায় পৃথিবীতে প্রবাহিত হয়। তার মধ্যে একটি ধারা, যে পথ দিয়ে ভগীরথ এগিয়ে চলেছিলেন, সেই দিকে গঙ্গা নদী প্রবাহিত হয় এবং গঙ্গার পবিত্রবারি স্পর্শে তাঁর পূর্বপূরুষদের ভষ্ম থেকে জীবিত করে শাপমুক্ত করেন।

প্রকৃতপক্ষে, ভগীরথ গঙ্গা নদীকে পৃথিবীতে আনয়ন করেন সেই কারনে গঙ্গা নদী ভাগীরথী নাম বহন করে। এইভাবে, প্রভু শিব অনাদিকাল হতে দিব্য গঙ্গাকে তাঁর জটায় ধারণ করে এক অধ্যায় বহন করে চলেছেন।

বাবা হলেন স্বয়ং শিব, যিনি গঙ্গাকে তাঁর মস্তকে ধারণ করে রেখেছেন। তাঁর কিশোর বয়সে, ঈশ্বরাম্মা স্বামীর জন্মদিনে মাথায় তেল দিয়ে স্নান করাতেন। এরকম এক অনুষ্ঠানে বাবা ঘোষনা করলেন যে আর তাঁর মাথায় জল ঢালার প্রয়োজন নেই। সেই সময় মা ঈশ্বরাম্মা লক্ষ্য করলেন ভগবান বাবার মাথা থকে জল বেরিয়ে আসছে এবং সেই জল মা ঈশ্বরাম্মা ও তার সাথে যে আত্মীয় পরিজন ছিল তাদের ওপর ছড়িয়ে পড়ছে।

[Source:http://media.radiosai.org/joumals/vol_04/01FEB06/shiva-sai-mahadeb.htm]

ভগবান বাবা গঙ্গারতি গ্রহণ করেছিলেন।

একবার স্বামী কস্তুরীকে তার মা ও স্ত্রীকে নিয়ে পবিত্র তীর্থ যেমন হরিদ্বার,কাশী, গয়া অন্যান্য দিব্য স্থানে তীর্থ ভ্রমনে যেতে বলেছিলেন। স্বামী কস্তুরীকে বললেন। “তুমি দ্বিধা করছ কেন? তিনটে রেলের টিকিট যাত্রার জন্য কেটে নাও। আমরা চারজন এতে যেতে পারব”।

তাদের ভ্রমনের প্রতি পদক্ষেপে স্বামীর উপস্থিতি তারা অনুভব করেছিলেন। হরিদ্বারে প্রথমদিন তারা যখন সন্ধারতি দেখতে পৌঁছলেন, দেখছেন জায়গাটি লোকে ভর্ত্তি। কিন্তু ঐ ঘাটের মুখোমুখি উল্টোদিকে একটি ছোট্ট দ্বীপ যেখানে Clock Tower রয়েছে। সেরকম সুবিধাজনক স্থান থেকে সন্ধারতির প্রতিচ্ছবি নদীতে ও ঢেউ এর সাথে সিঁড়ির ধাপেও দেখা যাবে। সেখানে একটা পায়ে হাঁটা সেতুও রয়েছে। সুতরাং, তারা ওই সেতু দিয়ে হেটে যেখানে তীর্থযাত্রীরা দাঁড়িয়ে আছেন সেখানে পৌঁছে গেলেন। আরতি যখন শুরু হল, শঙ্খ বেজে উঠল, ভেরী উচ্চস্বরে বেজে উঠল, ড্রাম এবং আরো কিছু বাদ্যযন্ত্র বাজতে লাগল, এরপর যা ঘটল, তাতে ওরা তিনজন বিস্মিত হয়ে গেলেন।

কস্তুরী লিখেছেন, “পুরোহিতরা ঐ ভারী পিতলের প্রদীপগুলিকে যখন বৃত্তাকারে ঘুরিয়ে উঁচুতে তুলে ধরছেন-আহা! হ্যাঁ বাবার সামনে সেই প্রদীপ তুলে ধরছেন। তিনি ওদের অর্চনা ও জয়জয়কার গ্রহণ করছেন। যতক্ষন না ‘গঙ্গা মা কি জয়’ ধ্বনী দিয়ে আরতি শেষ হল, তিনি ওখানে সকলকে বা শুধুমাত্র আমাদের তিনজনকে দর্শন দিলেন তা জানা নেই”।

“এই অভাবনীয় অনুভূতির পর আমরা চলতেও পারছিলাম না। যদিও অন্যান্য সকলে সেতু পার হয়ে চলে যাছিল। ধীরে ধীরে আমাদের পায়ের অনুভূতি এল। রাস্তাটা দেখতে পেলাম এবং নত হয়ে যে সিঁড়িতে আমরা এতক্ষন দাঁড়িয়ে ছিলাম, তাকে স্পর্শ করলাম। যতক্ষন না আমরা বেনারস পৌঁছে বিশ্বনাথের পবিত্রতম মন্দিরে দাঁড়িয়ে তাঁর অপূর্ব পরমানন্দময় আশীর্বাদ পেলাম, ততক্ষণ বাবার সেই আরতি গ্রহণ ও আশীর্বাদের সেই উজ্বল দৃশ্য আমাদের আচ্ছন্ন করে রাখল।”

বেনারসে কি হয়েছিল, আপনারা কি জানতে চান? কস্তুরী লিখছেন, “মন্দিরে প্রথম প্রবেশ করে আমরা দেখলাম, বাবা বিশ্বনাথের জায়গায় বাবা, মুকুটের মত তাঁর কেশ, লম্বা গৈরিক বস্ত্র পরিহিত, একটি হাত তুলে আশীর্বাদ করছেন- এই রূপে দাঁড়িয়ে আছেন। আমরা লিঙ্গ দর্শন করতে পারিনি। আমরা বিশ্বনাথকে আনুষ্ঠানিক ভাবে অভিসিঞ্চনের জন্য যে গঙ্গাজল এনেছিলাম তা বাবার পাদপদ্মেঢেলে দিলাম। তিনি বারণ করলেন না”।

এটা কি হতবুদ্ধি হবার নয়? সাই শুধু পুট্টাপর্তী বাসী নন, তিনি এই বিশ্বের প্রতিটি অনুতে পরিব্যাপ্ত। তিনি সর্বব্যাপী। এমন কোনো স্থান নেই, যেখানে তিনি নেই। তিনি আমাদের সব প্রার্থনায় সাড়া দেন, সে প্রার্থনা মা গঙ্গাকে হোক বা প্রভু শিবকে হোক।

[উৎস – Loving God]

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: