সোনার প্রতি লোভ

Print Friendly, PDF & Email
সোনার প্রতি লোভ

রাম, সীতা, লক্ষ্মণ পরমসুখে পর্ণশালায় দিন কাটাচ্ছিলেন। বসন্ত সমাগমে সর্বত্র নবাঙ্কুর। প্রকৃতিদেবী নতুন সাজে সেজেছেন।

সীতা একদিন সকালে ফুল তুলতে লতা কুঞ্জে গেছেন ; হঠাৎ তার নজরে এল এক ঝলক সোনালি কিরণ। তিনি দেখলেন একটি সোনার হরিণ—গায়ে রূপালি দাগ। চোখদুটি রত্নের মত উজ্জ্বল। সীতার হৃদয় নেচে উঠলো, উল্লাসে রামকে বলে উঠলেন, আর্যপুত্র, বাইরে এসে দেখ কী অপূর্ব হরিণ ; যখন আমরা অযোধ্যায় ফিরে যাব, তখন অযোধ্যাবাসীদের এটি হবে অমূল্য সম্পদ। তুমি ওকে ধরে নিয়ে এস আমাদের আশ্রমে।’

লক্ষ্মণ নিকটে ছিলেন—সব কথা শুনে বললেন, ‘ভাই, এটি সত্যিকার হরিণ নয় ; সূর্পনখার অপমানের পর রাক্ষসরা নানা ছল নেবে এবং মনে হয় এটিও একটি ছলনা। ওর দিকে দৃষ্টি না দেওয়াই ভাল।

রামচন্দ্র দ্বিধায় পড়লেন। কিছুক্ষণ পরে বললেন, ভাই, হয়ত তুমি ঠিকই বলেছ কিন্তু আমার কোন ক্ষতি হবে না। যদি রাক্ষস হয় তবে তৎক্ষণাৎ ওকে বধ করে এখানে নিয়ে আসবো। ওর ছালটি যত্ন করে স্মৃতিচিহ্ন রূপে রেখে দেব। তখন রাম তীরধনুক নিয়ে অরণ্যে প্রবেশ করলেন। যাবার আগে লক্ষ্মণকে সাবধান করে দিলেন যে কোন অবস্থায় সীতাকে যেন একা না রাখে। সীতা সানট লক্ষ্য করলেন—হরিণ ছুটছে, রাম তাকে অনুসরণ করছেন। কিন্তু হরিণ ধরা দিচ্ছে না। রাম আর সহ্য করতে পারলেন না, বাণ নিক্ষেপ করলেন—হরিণ তীরবিদ্ধ হল। কিন্তু কী আশ্চর্য্য! হরিণটি রাক্ষস মারীচে পরিণত হয়েছে। কিন্তু সে মৃত্যুর আগে রামের কণ্ঠস্বর নকল করে উচ্চেঃস্বরে বিলাপ করতে লাগলো, ‘ও সীতা ও লক্ষ্মণ, বাঁচাও।’ এই বিলাপ ধ্বনি শুনে সীতা লক্ষ্মণকে বললেন, ‘শুনতে পাচ্ছনা তোমার দাদার কাতর স্বর? তুমি এখনি ছুটে যাও।’ লক্ষ্মণ বিলক্ষণ জানতেন যে ওসব রাক্ষসের মায়া। তিনি বললেন, ‘মা জানকী! রাম অজেয়, ওর কোন ক্ষতি কেউ করতে পারবে না। কিন্তু সীতা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে বলে উঠলেন, ‘লক্ষ্মণ, এবার তোমার আসল রূপ ধরা পড়ছে। তুমি এই সুযোগ খুঁজছিলে। কখন আমার স্বামী মারা যাবে। কিন্তু মনে রেখো আমি রামেরই পত্নী। তুমি না গেলে আমি আগুনে এ দেহ বিসর্জন দেব’।

লক্ষ্মণ বাইরে গেলেন। কিন্তু সীতাকে বারবার সাবধান করে দিলেন, যেন কোন অবস্থাতেই তিনি দরজার বাইরে না আসেন। কুটীরে সীতা একাকী। তিনি হঠাৎ দেখলেন যে দ্বারপ্রান্তে এক সন্ন্যাসী। সীতার দিকে তার লোলুপ দৃষ্টি। সীতা বিব্রত বোধ করে কুটীরে প্রবেশ করতে উদ্যত। এমন সময় সন্ন্যাসী (রাবণ) তাঁর হস্ত ধারণ করে দিবারথে চাপিয়ে আকাশ পথে দক্ষিণদিকে চলে গেলেন।

ক্রন্দনরতা সীতা বনবাসীদের কাছে করুণ আবেদন জানালেন। সে কান্নায় কাতর হয়ে পক্ষিরাজ জটায়ু দ্রুত আকাশে উড়ে বলিষ্ঠ পাখা দিয়ে রাবণকে বাধা দিলেন। প্রথমে জটায়ু রাবণকে অনুরোধ করলেন সীতাকে সসম্মানে রাম সকাশে পাঠাতে। রাবণ সে কথায় কর্ণপাত করলেন না। জটায়ু তখন রাবণকে আক্রমণ করে রথ ভাঙ্গলেন, রাবণের শরীরে বহুস্থানে আঘাত করলেন। কিন্তু রাবণ, অতি ভীষণ। তিনি ক্ষিপ্রহাতে তরবারি দিয়ে জটায়ুর ডানা কেটে দিলেন। অসহায় জটায়ুকে মাটিতে ফেলে দিয়ে রাবণ লঙ্কার দিকে আকাশপথে রওনা হলেন।

প্রশ্নঃ
  1. সীতা কিভাবে সোনার হরিণ দেখে প্রলুব্ধ হলেন?
  2. সোনার হরিণ সম্বন্ধে লক্ষ্মণের ধারণা কি ছিল?
  3. সীতা কিভাবে রামকে হারালেন?

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।