একাগ্রতার মূল্য

Print Friendly, PDF & Email
একাগ্রতার মূল্য

স্বামী বিবেকানন্দের ছেলেবেলার ডাকনাম ছিল ‘বিলে’। বিলে আর তার বন্ধুদের খেলাধুলার মধ্যে একটা খেলা ছিল একসঙ্গে বসে ‘ধ্যান’। সবাই চোখ বুজে বসতো আর যে যার নিজের প্রিয় দেবমূর্তির চিন্তা করতো। একদিন তারা এই খেলায় চোখ বুজে বসে আছে, একজন একটা মৃদু শব্দ শুনতে পেল। চোখ খুলেই সে দেখতে পেলো একটা বিরাট সাপ তাদের দিকেই এগিয়ে আসছে। সে চীৎকার করে উঠলো “কেউটে সাপ! কেউটে সাপ!” বিলে ছাড়া বাকী সব ছেলেরা দৌড় দিতে দিতে চিৎকার করতে লাগলো, “বিলে, শিগগিরই চলে আয়। বিরাট কেউটে সাপ, এক্ষুনি তোকে কামড়াবে।” এসব চিৎকার চেঁচামেচির কিছুই বিলের কানে যায়নি। সে সেই ভাবেই চোখ বুজে স্থির হয়ে বসে আছে, মনে শুধু ঈশ্বরের চিন্তা। তার চারপাশে যে কি হচ্ছে সে জানতেও পারেনি।

Biley's steady concentration

এদিকে, কেউটে কি করলো? সে চারদিক ঘুরে ফিরে, আস্তে আস্তে চলে গেল। ছেলের বন্ধুরা, তার বাবা মা, পাড়াপড়শিরা সকলে তার একাগ্রতার শক্তি ও ঈশ্বরে নিষ্ঠা দেখে আশ্চর্য হয়ে গেল। বিলের এই একাগ্রতার শক্তিতে, সে তার পাঠ্য বিষয় একবার বা দুবার মাত্র পড়ে নিলেই পরিষ্কার মনে রাখতে পারতো। কলেজেও সে মেধাবী ছাত্র বলে পরিচিত ছিল। পরবর্তীকালে সে স্বামী বিবেকানন্দ হয়ে উঠতে, এই শক্তি তাকে প্রভূত সাহায্য করেছিল।

আমেরিকার শিকাগোতে যাওয়ার পরে, একদিন বিবেকানন্দ দেখেন যে, কয়েকটি ছেলে নদীতে ভেসে আসা কতকগুলো ডিমের খোলাতে তাক্‌ করে গুলি ছুড়ছে, কিন্তু, খোলাগুলো ছোট ছোট ঢেউয়ের সঙ্গে ওঠা নামা করার দরুণ, কারো গুলিই কোনটার গায়ে লাগছে না। অনেকবার করে তারা প্রত্যেকে চেষ্টা করে দেখল কিন্তু কেউই লক্ষ্য ভেদ করতে পারল না। বিবেকানন্দ যে তাদের একদৃষ্টে লক্ষ্য করছেন তা তারা দেখতে পেয়েছিল। এখন তারা তাকে ডেকে বললো, “মহাশয়, আপনি তো সারাক্ষণ আমাদের লক্ষ্য করছেন দেখতে পাচ্ছি। আপনি কি পারবেন বলে মনে হচ্ছে?” বিবেকানন্দ তাদের দিকে তাকিয়ে একটু হেসে বললেন যে তিনি চেষ্টা করে দেখতে পারেন। বন্দুকটা হাতে নিয়ে, লক্ষ্য স্থির করে তিনি ডিমের খোলার দিকে তুলে ধরলেন। তিনি পর পর বারো বার বন্দুক ছুঁড়লেন, প্রত্যেকবার একটা করে ডিমের খোলায় গুলি বিঁধে গেল। স্বামীজীর পারদর্শিতায় ছেলেরা অবাক হয়ে গেল, তারা জিজ্ঞাসা করলো, “মহাশয়, বিনা অভ্যাসে আপনি কি করে এটা পারলেন?” বিবেকানন্দ ‘হো’ ‘হো’ করে হেসে উঠে বললেন, “আচ্ছা, আচ্ছা, আমি এর গুপ্ত রহস্য বলছি। যা কিছু করতে যাবে, মনটা সম্পূর্ণ ভাবে তার উপর দেবে। অন্য কোন চিন্তা করবে না।

যদি গুলি ছুঁড়তে চাও, মনকে লক্ষ্যের উপরে স্থির করে ধরে রাখবে। তাহলে লক্ষাভ্রষ্ট হবে না। একাগ্রতা আশ্চর্য কাজ করে। এমন কি যখন পড়াশোনা করবে, বইয়ের পড়াটার কথাই চিন্তা করবে। তাহলে যা পড়লে, তা ছাপার অক্ষরের মতন মনে গেঁথে যাবে।” একাগ্রতার এই শক্তি নিয়ে স্বামী বিবেকানন্দ জগতের মঙ্গলের জন্যে অনেক মহৎ কাজ করে গেছেন।

প্রশ্নঃ
  1. একাগ্রতার উপকারিতা কি?
  2. নিম্নলিখিত বিষয়ে যদি মনকে একাগ্র না কর তবে কি ঘটতে পারেঃ–(ক) রাস্তা পার হওয়ার সময়ে (খ) শিক্ষক ক্লাসে পড়ানোর সময়ে (গ) বাড়ীতে স্কুলের পড়ার কাজ করার সময়ে (ঘ) ভজন গান করার সময়ে (ঙ) পরীক্ষার পড়া তৈরী করার সময়ে (চ) খাবার সময়ে (ছ) সিনেমা দেখার সময়ে (জ) ক্রিকেট খেলার সময়ে।
  3. (ক) পূর্ণ একাগ্রতা ও তার সুফল সম্বন্ধে (খ) একাগ্রতার অভাব সম্বন্ধে তোমার অভিজ্ঞতা বর্ণনা কর।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: