সত্যই ঈশ্বর (২)

Print Friendly, PDF & Email
সত্যই ঈশ্বর (২)

যে সমস্ত মহৎ ব্যক্তি ব্রিটিশ আমলে ভারতের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছিলেন, বাল গঙ্গাধর তিলক তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন। ছাত্রাবস্থায় বাল তার শিক্ষকের কাছে স্কুলের প্রতিভাবান, নিয়মানুবর্তী, ভদ্র ব্যবহারের ছেলেদের মধ্যে অন্যতম বলে পরিচিত ছিলেন। কিন্তু একদিন, একজন শিক্ষকের এক অদ্ভুত অভিজ্ঞতা হয়। টিফিনের সময়ে কোন ছাত্র ক্লাসে বসে চিনেবাদাম খেয়ে, তার খোসা গুলো মেঝেতে শিক্ষকের টেবিলের কাছে ছুঁড়ে ছুঁড়ে ফেলে রেখেছে। ক্লাসে ঢুকে ছেলেদের কেউই এটা এমন ভাবে লক্ষ্য করেনি।

ঘণ্টা পড়লে সব ছেলেরা তাদের জায়গায় গিয়ে বসলো। শিক্ষক এসে ভিতরে পা বাড়িয়েই তার টেবিলের কাছে ছড়ানো বাদামের খোসা দেখতে পেলেন, আর, রাগে একেবারে ফেটে পড়লেন। তিনি চীৎকার করে উঠলেন, “কে এই কুকর্ম করেছে?” ছাত্রদের তরফ থেকে কোন সাড়া শব্দ এলো না। শিক্ষকের গলার পর্দা আরো উঁচুতে উঠে গেল, “কে-কে একাজ করেছে? আমি আবারও জিজ্ঞাসা করছি। যে দোষ করেছে সে যদি উঠে না দাঁড়ায়, যারা জানে, তারা তার নাম বল।”

Teacher is scolding the children for throwing nut shells down

কে যে দোষী তা বুঝতে না পারায় ছেলেরা এ ওর মুখের দিকে তাকাতে লাগলো। কেউ উঠে দাঁড়াল না; কেউ কোন কথা বললো না।

Bal standing up and speaking boldly to the teacher

ক্রুদ্ধ শিক্ষক তখন টেবিল থেকে বেত তুলে নিয়ে বললেন, “দোষীকে তোমরা কেউ যখন ধরে দিলে না, তোমাদের প্রত্যেককে আমি বেত মারার ব্যবস্থা করছি।” শিক্ষক প্রথম সারির ছেলেদের দিকে এগিয়ে যেতেই বাল উঠে দাড়িয়ে সাহস করে বলেন, “স্যার, আমাদের অনেকে সত্যি সত্যি জানেনা যে দোষী কে! বাকী অনেকে মেঝেতে খোসা দেখেইনি। টিফিনের সময় আমাদের প্রত্যেকেই ক্লাসের বাইরে গিয়েছিলে। নিশ্চয়ই অন্য কোন ক্লাসের ছেলে এসে এই কাণ্ড করে গেছে। তাহলে এই নির্দোষ ছেলেরা বেত খাবে কেন?”

Bal leaving the class as teacher canning the children.

শিক্ষক বালের ভদ্র ব্যবহারের কথা জানতেন বলে নিজের রাগকে সংযত করার চেষ্টা করলেন কিন্তু পারলেন না। তিনি বললেন, “বেশী চালাকি করো না বাল। আমি নিশ্চিত জানি যে, তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ দোষীকে জানে। তারা যদি না বলে, গোটা ক্লাসকেই শাস্তি পেতে হবে।” বাল তক্ষুণি সশ্রদ্ধভাবে বললো, “কিন্তু স্যার, এটা আমার উচিত বা ন্যায্য কাজ বলে মনে হয় না। আপনাকে যে বললাম আমরা কেউ এ সম্বন্ধে জানি না, তা একেবারেই সত্যি। নির্দোষ ছেলেদের শাস্তি আমি দেখতে পারবো না। আমাকে দয়া করে ক্লাসের বাইরে যাবার অনুমতি দিন।” শিক্ষক কিছু বলার আগেই বাল তার বইপত্র তুলে নিয়ে ক্লাস থেকে বেরিয়ে গেল।

সমস্ত ছেলেরা বালের সাহস ও তার ন্যায় ও সত্য-প্রীতির প্রশংসা করতে লাগলো। শিক্ষক পর্যন্ত বালের প্রশংসা না করে পারলেন না। তিনি ক্লাসের ছেলেদের দিকে তাকিয়ে বললেন, “বাল সাধারণ ছেলে নয়। প্রতিটি ছাত্র যদি তার মতন সত্যবাদী ও নিয়মানুবর্তী হয়, তাহলে আমাদের দেশের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল।” বালের এই সত্যনিষ্ঠা ও ন্যায়নিষ্ঠা তাঁকে আমাদের দেশের এক মহান নেতা করে গড়ে তুলেছে। তাকে যে “লোকমান্য তিলক” বলা হতো, তার কারণ তার কারণ, তাঁর এই গুণগুলির জন্য তিনি ভারতবাসীর কাছে ভালবাসা ও শ্রদ্ধাভক্তি পেয়েছিলেন।

প্রশ্নঃ
  1. শিক্ষকের কি ভুল হয়েছিলো?
  2. বাল ক্লাস ছেড়ে চলে গেলেন কেন?
  3. মনে কর, এই ঘটনার দিন তুমি বালের ক্লাসে ছিলে। তুমি কি করতে?

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: