সত্যই ভগবৎ কৃপা অর্জনে সহায়ক

Print Friendly, PDF & Email
সত্যই ভগবৎ কৃপা অর্জনে সহায়ক

আজকাল ‘সেবা’ শব্দটা শুধু শব্দই হয়ে গেছে। এর মানে কেউ আমরা বুঝতে চাইও না। একে কাজে লাগাতেও চাই না। কিন্তু ভগবানকে ঠকানো যায় না। কাজেই আমাদের এ অনাগ্রহ তিনি ঠিক ধরে ফেলেন। একদিন শিব এবং পার্বতী আকাশ পথে বারাণসীর ওপর দিয়ে যাচ্ছেন। এ দিনটি ছিল শিবরাত্রি, পার্বতী দেখলেন যে বারাণসী প্রচুর লোকে পূর্ণ হয়ে গেছে। সবাই শিবরাত্রিতে শিবের মাথায় জল দিচ্ছে।

Shiva and Parvati having discussion

তিনি যেন ঈষৎ পরিহাস করে, একটু ঠাট্টা করে শিবকে বললেন, “দেব, এত লোক যদি শিবরাত্রির দিন তোমায় পুজো করে, সবাই তো তারা স্বর্গে যাওয়ার অধিকার পাবে এবং তার ফলে স্বর্গে বোধ হয় আর জায়গা থাকবে না।” শিব হাসলেন। হেসে বললেন, “দেখো, শিবরাত্রির দিনে বারাণসীতে এসে শিবলিঙ্গতে জল দিলেই স্বর্গে যাওয়া যায় না। যারা স্বার্থপর, কখনই তারা স্বর্গে প্রবেশ করতে পারবে না। যারা অন্যের দুঃখ বোঝে না, যারা হৃদয়হীন, তারা কখনও দেবতার সান্নিধ্য পাবার যোগ্য নয়। সততা, শুদ্ধতা এবং ঈশ্বর শ্রেম—এগুলিই কেবলমাত্র সেই আনন্দলোকের দরজা খুলে দিতে পারে। তাছাড়া এরা যান্ত্রিকভাবে জল দিচ্ছে, এরা বিশ্বাসও করেনা যে এটা পুণ্য কাজ—এটা পূজা।” “সেকি!” “তুমি আমার কথা বিশ্বাস করলে না পার্বতী! চলো, আমি তোমায় আমার কথা প্রমাণ করে দিচ্ছি।” এই বলে শিব এবং পার্বতী এক বৃদ্ধ এবং বৃদ্ধার ছদ্মবেশ নিলেন।

pickpocket offering water to the old couple

পার্বতী এক বৃদ্ধা হয়ে বসে আছেন। শিব তার কোলে এক রুগ্ন বৃদ্ধ হয়ে কাতরাচ্ছেন। মাঝে মাঝে জিভটা বার করছেন আর পার্বতী মাঝে মাঝে বলে চলেছেন, “বাবা, তোমরা দয়া করো। এই বুড়োটার মুখে কেউ একটু জল দাও। এ বড় কষ্ট পাচ্ছে, একে দয়া করো”। এই বৃদ্ধার কথা এই ‘পুণ্যবান’ লোকেরা কেউ শুনল না। কেউ আর একটু তাড়াতাড়ি করে পাশ কাটিয়ে শিবের মন্দিরের দিকে এগিয়ে গেল। কেউ বিরক্তি প্রকাশ করল। কেউ মন্তব্য করল, “এই ভিখিরিগুলোতে দেশ ছেয়ে গেছে। পুলিশের উচিত এদের গ্রেপ্তার করা।” কেউবা বলল, “বাঃ বাঃ! বেশ ভাল এ্যাকটিং শিখেছ তো মা”। কিন্তু একজনের মনেও এই বৃদ্ধের কষ্ট সাড়া জাগাল না।
এই বারাণসীতে অনেক পূণ্যবান পূণ্যকামী লোকেদের মধ্যে একজন চোরও ছিল। সে এসেছে কিন্তু অন্য লোকের পকেট কাটতো, সে পকেটমার। সে ঘুরতে ঘুরতে এখানে এসেছে। বৃদ্ধার কথা তার কানে গেছে। সে থমকে দাঁড়িয়ে গেল। সে তাড়াতাড়ি একটু জল নিয়ে এসে ঐ বৃদ্ধের মুখে দিতে এল। এই লোকটিকে আর একটু ভাল করে পরীক্ষা করার জন্য পার্বতী বললেন, “বাবা, তুমি এই বৃদ্ধের মুখে জল দিচ্ছ, তোমার বড় দয়া, তুমি বড় ভাল লোক। কিন্তু এই বুড়ো আবার ভীষণ জেদী, ভীষণ শুদ্ধাচারী, নিষ্ঠাবান্। এর একটি কথা হল, তার কাছ থেকেই ও জল নেবে যে জীবনে কিছু না কিছু ভাল কাজ করেছে। তা বাবা, তুমি নিশ্চয়ই জীবনে অনেক ভাল কাজ করেছ। তারমধ্যে অন্তত একটি এই বুড়োকে শোনাও, তা নইলে এ তোমার জল খাবে না।”
চোরটি থমকে গেলো। সে ভেবে বলল, “না মা, আমি জীবনে ভাল কাজ কিছু করিনি”। তারপরই তার মুখটা উজ্জ্বল হয়ে উঠল। বললেন, “হ্যাঁ, এই শিব সাক্ষী হয়ে রইলেন, এই বারাণসী সাক্ষী রইল, আমি জীবনে এই প্রথম ভাল কাজ করছি। এই কষ্ট পাচ্ছে যে বুড়ো, তার মুখে জল দিয়ে তার কষ্ট কমাবার চেষ্টা করছি, ভগবান আমার সহায় হোন।”

তার আন্তরিকতা, তার সততা ও শুদ্ধতা শিব এবং পার্বতীকে এতই স্পর্শ করল যে তারা তক্ষুনি নিজেদের স্বরূপে এই চোরটিকে দেখা দিলেন এবং তাকে আশীর্বাদ করলেন।
এইটিই হল শিবের প্রকৃত পূজা।

প্রশ্নঃ
  1. শিব এবং পার্বতীর কথোপকথন বর্ণনা কর।
  2. দিব্য মাতা এবং পিতা কি পরিকল্পনা করলেন?
  3. কে সাহায্য করতে এগিয়ে এলো?
  4. সে কি করলো?

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।