ত্বমেব মাতা শ্লোক – বিশদ পাঠ

Print Friendly, PDF & Email
ত্বমেব মাতা শ্লোক – বিশদ পাঠ

ব্যাখ্যা:

মানুষের মৃত্যুর পর তার পার্থিব সম্পদ দরজার চৌকাঠ অবধি যায়। তার আত্মীয়স্বজন শ্মশান অবধি যায়। কেবল তার সদ্গুরু ঈশ্বরই এরপরেও তার সঙ্গে থাকেন।

সুতরাং আমাদের প্রকৃত বন্ধু, আত্মীয় ও সম্পদ হলেন ঈশ্বর। যে মহান পুরুষের, পরমাত্মার মধ্যে সকল ভূত বিরাজ করে, যিনি সমগ্র সৃষ্টির হৃদয়বাসী ও আন্তর চালক, তাকে অনুভব করতে হলে শরণাগতির মাধ্যমে তাঁর কৃপা লাভ করতে হবে।

তিনি ইন্দ্রিয়াতীত রূপেও আছেন আবার এই বিশ্বের প্রতিটি কণাতেও বিরাজ করছেন। তাঁর মহিমা বুঝতে হলে নিজের অপারগতা বুঝে তাঁর চরণে নিজের অহংকারকে বিসর্জন দিতে হবে। যে সাধক, তার মনের ভাব হবে এইরকম- “ত্বমেব সর্বম মম দেব দেব”.” হে আমার দেবতার দেবতা, তুমিই আমার সর্বস্ব”।

তুলসীদাসের কাহিনী

এ হলো সুবিখ্যাত সাধক, কবি তুলসীদাসের কাহিনী। তিনি ছিলেন অনাথ। তুলসীদাসের মামা তাঁর (তখন তাকে মুন্না বলে ডাকা হতো) দেখাশোনা করতেন। যখনি তুলসীদাস জানতে চাইতেন তার বাবা ও মা কোথায় তখনই তার মামা বলতেন যে শ্রীরামই তার মাতা ও পিত। মুন্না যখন আরো একটু বড়ো হলো তখন সে জানল যে, বাবা মায়েরা সবসময়েই সন্তানের সঙ্গেই থাকেন, সন্তানের থেকে দূরে থাকেন না। তখন সে চিন্তা করলো, যে এটা কেমন হলো? আমাকে এইভাবে একলা ফেলে রেখে আমার বাবা ও মা অর্থাৎ রামজী আড়ম্বর ও ঐশ্বর্যের মধ্যে মন্দিরে থাকেন। লোকে তাঁদের ঘিরে থাকে। মুন্নার মন এতটাই নির্মল ছিল যে সে তার মামার কথাকে সত্য বলে বিশ্বাস করেছিল।

একদিন রাত্রে মুন্না মন্দিরে জানালা দিয়ে প্রবেশ করে শ্রী রামের বিগ্রহের সামনে পৌঁছলো। সে ক্ষুধা ও তৃষ্ণায় কাতর ছিল। সুতরাং সে কাঁদতে লাগলো ও খাবার চাইলো। শ্রী রামজীই যে সত্যি সত্যি তার বাবা ও মা এবিষয়ে তার তো বিন্দুমাত্র সংশয় ছিলোনা। সেইজন্য সে রামজির কাছে জানতে চাইলো যে কেন তিনি একা থাকেন এবং ছেলের দেখাশোনা করেন না। কিন্তু বিগ্রহের কাছ থেকে কোনো উত্তর এলোনা।

সে ভাবলো যে বিগ্রহটি সে তার বাড়িতে নিয়ে যাবে কারণ মুন্নার আন্তরিক বিশ্বাস ছিল যে সন্তানদের তাদের বাবামায়ের সঙ্গেই থাকা উচিত। যখন সে বিগ্রহটি নিয়ে যাবার চেষ্টা করলো তখন সেই আওয়াজে পুরোহিতরা ঘুম ভেঙে জেগে উঠলেন। তাঁরা তাকে থামতে বললেন। মুন্না উত্তর দিলো যে সে তার বাবামাকে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছে এবং রামজীকে মন্দিরে আটকে রাখার কোনো অধিকার ওই পুরোহিতদের নেই।

পুরোহিতরা ছেলেটিকে ধরতে ছুটলেন আর সেও জাত জোরে পারে ছুটতে লাগলো। এইভাবে ছুটতে ছুটতে সে একটি তুলসী বাগানের মধ্যে পড়ে গিয়ে অজ্ঞান হয়ে গেলো। এই শিশুটির প্রেম ও আন্তরিকতা, করুনাময় ঈশ্বরকে বিচলিত করে তুললো। ঈশ্বরের কৃপায় রামানন্দ নাম এক সাধু সেখানে উপস্থিত হলেন। তিনি ছেলেটিকে তুললেন ও আশ্বস্ত করলেন। যেহেতু ছেলেটিকে তিনি তুলসী বাগানে খুঁজে পেয়েছিলেন, তাই তিনি তার নামকরণ করলেন তুলসীদাস। সাধু রামানন্দ ছেলেটিকে বললেন যে সেইদিন থেকে তার বাবা ও মায়ের ভূমিকা পালন করার জন্য তাঁকে রামজী পাঠিয়েছেন।

সেইদিন থেকে সবাই তাকে তুলসীদাস নামে ডাকত। সাধু রামানন্দ শুধু তার দেখাশোনায় করলেননা, তাকে শিক্ষিত করে তুললেন এবং তার মনে ও হৃদয়ে ভক্তির সঞ্চার করলেন।

সুতরাং ঈশ্বরই আমাদের মাতা, পিতা, বন্ধু, পথপ্রদর্শক ও সম্পদ। আমরা যদি তাঁর শরণাগত হই তাহলে তিনিও আমাদের রক্ষা করবেন।

[Illustrations by Smt. Uma Manikandan]
[Source: Sri Sathya Sai Balvikas Guru Handbook for Group I, First Year]

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।