বন্দে দেবমুমাপতিম শ্লোক – বিশদ পাঠ
বন্দে দেবমুমাপতিম শ্লোক – বিশদ পাঠ
বন্দে দেব
ঈশ্বর জগৎ সৃষ্টি ও পালন করেন, আবার তার লয় ও করে তাকে তার প্রাথমিক অবস্থায় ফিরিয়ে দেন।
শিব হলেন ঈশ্বরের সেই রূপ যিনি বিঘটন ও লয়ের ক্ষমতার অধীশ্বর।
তিনি ঈশ্বরের বৈরাগ্যের রূপ – সম্পূর্ণ অনাসক্ত। যে ঈশ্বর স্ব ইচ্ছায় এই বিশ্বজগৎ ০অধ্যস্ত করেছেন, সেই জগতের কণামাত্রের প্রতি তাঁর কোনো স্পৃহা নেই।
তাঁকে শিব নামে অভিহিত করা হয়; তিনি পরম মঙ্গলময়। যা কিছু আমাদের ঈশ্বরের ভালোবাসা,শান্তিও শক্তি থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে যায়, সেই সকল বস্তুকে তিনি ধ্বংস করে থাকেন; অর্থাৎ তিনি মানুষের অন্তরের শত্রূদের নাশ করেন, যেমন মোহ, লোভ, দম্ভ, ঈর্ষা, ক্রোধ এবং কাম। শিব সকল প্রাণীর মঙ্গল সাধন করেন।
কৈলাস হলো তাঁর আবাসস্থল। সেই ভূমি জ্যোতি, পবিত্রতা ও শান্তির আশ্রয়।
রূপকগুলি
সন্ন্যাসীরূপ – বৈরাগ্যের প্রতীক, পূর্ণ অনাসক্তির প্রতীক।
তৃতীয় নয়ন – জ্ঞান চক্ষু। শিব সর্বজ্ঞ ও সর্বসাক্ষী।
ভষ্মভূষিত দেহ – ভক্তদের সকল পাপকে ভস্মীভূত করে, সেই ভস্ম তিনি নিজের অঙ্গে লেপন করেন।
সাপগুলি – সাপগুলি আধ্যাত্মিক শক্তির প্রতীক।
তাঁর জটা থেকে যে গঙ্গা প্রবাহিত হয় – তা হলো জ্ঞানগঙ্গা, যে ধারা ঋষিদের প্রজ্ঞা থেকে উৎসারিত।সেই জলে অবগাহন করলে শত জন্মের পাপ বিনষ্ট হয় এবং মঙ্গল লাভ হয়।
ত্রিশূল – এটাই সূচিত করে যে তিনি ত্রিকালের অর্থাৎ, অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের অধীশ্বর। তিনি, ভু:(স্থুল).ভুব: (সূক্ষ্ম) ও স্ব: (কারণ) এই ত্রিলোকের অধীশ্বর এবং সত্ত্ব (সমতা,শান্তি ও ভারসাম্য), রজ (প্রবৃত্তি, উচ্চাকাঙ্ক্ষা,কামনা ও অস্থিরতা) এবং তমো (অজ্ঞান, জড়তা ও নির্বুদ্ধিতা) এই ত্রিগুণ যা প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করে, তার অধীশ্বর।
ভিক্ষাপাত্র – যদিও তিনি বিশ্বের প্রভু, তবু তিনি এক সন্ন্যাসী, যাঁর হাতে ভিক্ষাপাত্র; তিনি সকল মানুষের হৃদয় থেকে প্রেম ভিক্ষা করেন।
ব্যাঘ্রচর্ম – হিংস্র বাঘ,পাশব প্রবৃত্তির প্রতীক, শিব সেই বাঘকে নাশ করে তার চর্ম বস্ত্ররূপে পরিধান করেন। অর্থাৎ পাশব প্রবৃত্তির ওপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ সূচিত হচ্ছে।
চন্দ্রকলা – মনের প্রতীক; তিনি মনের প্রভু।