বিশ্বামিত্র
বিশ্বামিত্র
বিশ্বামিত্র প্রথমে একজন রাজা ছিলেন। এই রাজার কোন অভাব ছিল না। তা সত্ত্বেও তিনি একটি জিনিসের অভাব বোধ করতেন।
বশিষ্ঠ মুনির একটি গাভী ছিল, নাম ‘কামধেনু’। এই কামধেনুর কাছে যা চাওয়া যেত, তাই পাওয়া যেত।
বিশ্বামিত্রের এই গাভীটির ওপর লোভ হল। তিনি বশিষ্ঠের কাছে চাইলেন। তার কাছে চেয়ে যখন পেলেন না তখন সৈন্য নিয়ে এসে আক্রমণ করে সেই গরুটিকে কেড়ে নেবার চেষ্টা করলেন। কিন্তু বশিষ্ঠের তপলব্ধ শক্তির কাছে হার মেনে গেল তার সৈন্যরা, তিনি পারলেন না।
বিশ্বামিত্র চিন্তা করে দেখলেন যে, বশিষ্ঠ মুনি অনেক তপস্যা করেছেন এবং তপস্যা করেই তিনি এই শক্তি অর্জন করেছেন, তার জন্য তিনিও তপস্যা করতে লাগলেন। কিন্তু বিশ্বামিত্র দারুণ ক্রোধী ছিলেন, ভীষণ রাগ ছিল তার, যার ফলে তার তপস্যায় এই রাগের জন্যই বারবারই ব্যাঘাত ঘটছিল।
যাইহোক, তিনি কঠোর তপস্যা করলেন। তপস্যা করেও তিনি দেখলেন সবাই তাকে ‘রাজর্ষি’ বলছে আর বশিষ্ঠকে বলছে ‘ব্রহ্মর্ষি’।
“ব্রহ্মর্ষি’ হচ্ছেন তিনি, যিনি ব্রহ্মজ্ঞান লাভ করেছেন। একমাত্র তাকেই ব্রহ্মর্ষি অর্থাৎ ঋষিদের মধ্যে সর্বোচ্চ সম্মান দেওয়া হতো।
বিশ্বামিত্র কিছুতেই নিজেকে মানিয়ে নিতে পারতেন না। তাকে রাজর্ষি আর বশিষ্ঠকে ব্রহ্মর্ষি বলা হয় এটা কিছুতেই তিনি সহ্য করতে পারলেন না। ক্রোধে উন্মত্ত হয়ে একদিন তিনি ঠিক করলেন, ঐ ব্রহ্মর্ষি বশিষ্ঠকে হত্যা করবেন।
এই চিন্তা করে একদিন গভীর রাত্রে তিনি বশিষ্ঠের আশ্রমে এলেন। কিন্তু আশ্রমে এসে বশিষ্ঠের কুটীরে তাকে দেখতে পেলেন না, খুঁজতে খুঁজতে তিনি দেখতে পেলেন বশিষ্ঠ তার স্ত্রী অরুন্ধতীকে নিয়ে একটি গাছতলায় বসে আছেন।
অরুন্ধতী বলছেন, “প্রভু পরিবেশটা যেন দিন দিন আরো মনোরম, আরও রমণীয় হচ্ছে, আকাশ-বাতাস যেন আরও সুন্দর হচ্ছে। বশিষ্ঠদেব বললেন, “হ্যাঁ, সে তো হবেই; কিন্তু এর কারণ জানো?”
অরুন্ধতী বললেন, “না প্রভু, কি কারণ?” বশিষ্ঠদেব বললেন, “এর কারণ হচ্ছে, বিশ্বামিত্র এত কঠোর তপস্যা করছেন যে তার তপস্যার ফলে এ পৃথিবী রমণীয় হয়ে উঠছে, মনোহর হয়ে উঠছে।”
বিশ্বামিত্র অবাক হয়ে গেলেন, যাকে তিনি জীবনে সবচেয়ে বেশী হিংসা করেন, সবচেয়ে বেশী ঈর্ষা করেন, সেই ঋষি তারই প্রশংসা করছেন। তাকে যিনি সবচেয়ে বেশী শক্র মনে করেন, তাঁর পরম শক্র তারই গুণগান করছেন। তারপরই ভাবলেন এ রকম একজন ঋষিকে আমি হত্যা করতে এসেছি? তার মনে অনুশোচনা হল, তখন তিনি গিয়ে বশিষ্ঠের পায়ে পড়লেন, বললেন “প্রভু, আমার অপরাধ আপনি ক্ষমা করুন।”
বশিষ্ঠদেব বিশ্বামিত্রের দুটি কাঁধে হাত রাখলেন। তিনি অত্যন্ত মধুর স্বরে বললেন, “ব্রহ্মর্ষি ওঠ।” বিশ্বামিত্র এতদিন তপস্যা করে, এতদিন চেষ্টা করে যা পাননি, আজকে তার ঈর্ষা এবং তার ক্রোধ দুটিকে ত্যাগ করে, যখন সত্যকে অনুভব করলেন এবং বশিষ্ঠের শরণাগত হলেন, সেই মুহূর্তেই তিনি ব্রহ্মর্ষি আখ্যা লাভ করলেন এবং সবচেয়ে আশ্চর্য ব্যাপার তাঁকে এই পদে অভিষিক্ত করলেন তাঁর পরম শত্রু, সেই বশিষ্ঠদেবই।
প্রশ্নঃ
- বিশ্বামিত্র যখন রাজা ছিলেন তখন বশিষ্ঠকে হিংসা করতেন কেন?
- তিনি কিভাবে তাঁর তপস্যালব্ধ ফল হারালেন?
- কিভাবে তঁর মধ্যে পরিবর্তন এলো?
- তাঁকে কখন ব্রহ্মর্ষি আখ্যা দেওয়া হল?