বিবেকানন্দের প্রার্থনা
বিবেকানন্দের প্রার্থনা
যে কোন অবস্থাতেই যিনি মনকে ঈশ্বরের দিকে নিয়ে যেতে পারেন তিনিই প্রকৃত গুরু, তিনিই সদ্গুরু। এর উদাহরণ হিসেবে আমরা রামকৃষ্ণ ও বিবেকানন্দের জীবনী থেকে অনেকগুলি ঘটনা পাই। তার একটি এখানে শোনো।
তোমরা হয়ত জানো যে স্বামী বিবেকানন্দ, যিনি তখন নরেন্দ্রনাথ দত্ত, তার বাবা মারা যাবার পর তিনি ভীষণ দারিদ্রে ভুগছিলেন। তাঁর দিনরাতের চিন্তা তখন কি করে একটু মা, বোন, ভাইকে খেতে দেবেন, একটু পরবার জামাকাপড় দেবেন। তিনি লেখাপড়ায় খুব ভাল ছিলেন, পাশও করেছিলেন কিন্তু ভাগ্যের এমনই পরিহাস যে বহু চেষ্টা করেও একটাও চাকরী জোগাড় করতে পারছেন না, অর্থকরী কিছু করে উঠতে পারছেন না। তখন তিনি একদিন শেষ পর্যন্ত মরীয়া হয়ে রামকৃষ্ণদেবের কাছে গেলেন এবং বললেন, “আপনার কথা তো মা সব শোনেন। আপনি মাকে আমার জন্য একটু বলুন যাতে আমার মা, ভাই, বোন একটু খেতে পায়।” ঠাকুর বললেন, “ওরে দেখ, আমি অনেক বলেছি, আমার কথা শুনবে না। তবে হ্যাঁ, তুই যদি বলিস্, তোর কথা মা হয়ত শুনতে পারেন। আর দ্যাখ্, আজকে দিনটাও ভালো। মঙ্গলবার। তুই যা না, মাকে গিয়ে বলে দেখ্ না। আজকে পূজোর পর তুই মাকে গিয়ে তোর যা দরকার বলবি। মা ঠিক শুনবেন।”
এই বলে গুরু শিষ্যকে পূজার পর নিশীথ রাত্রিতে মায়ের মন্দিরে পাঠিয়ে দিলেন। স্বামী বিবেকানন্দ মন্দিরে ঢুকলেন। মায়ের অপূর্ব মূর্তিটি দেখলেন। সব ভুল হয়ে গেল। বার বার প্রণাম করতে করতে বললেন, “মা! জ্ঞান বিবেক দাও, বৈরাগ্য দাও।” প্রণাম করে বিবেকানন্দ চলে এসেছেন। নরেন এসেছেন রামকৃষ্ণদেব জিজ্ঞাসা করলেন, “হ্যাঁ রে, বলেছিস্?” নরেন বললেন, যাঃ, ভুলে গেছি।” ঠাকুর বললেন, “দূর বোকা, আবার যা, আবার মাকে গিয়ে আবার স্বামীজী মায়ের কাছে গেলেন। গিয়ে মায়ের সামনে দাঁড়িয়ে আবার সব ভুল হয়ে গেল। বললেন, “মা! জ্ঞান দাও, বিবেক দাও, বৈরাগ্য দাও।”
আবার ফিরে এলেন। ঠাকুর বললেন, “হ্যাঁ রে, বললি?” তিনি বললেন, “না, আবার ভুল হয়ে গেল”।
ঠাকুর বললেন, “তোর হবে না।”
ঠাকুর বলতেন, “ভগবানের কাছে কি লাউ কুমড়ো চাইব?” সদ্গুরু কখনও বলেন না যে ভগবানের কাছে এসব সামান্য জিনিস চাও। চাও এর চেয়ে অনেক দামী জিনিস। চাও জ্ঞান, চাও বিবেক, চাও বৈরাগ্য। স্বামীজী তাই চেয়েছিলেন”। রামকৃষ্ণদেব শিষ্যকে দিয়ে মায়ের কাছে তা-ই চাইয়েছিলেন।
ঠাকুর বললেন, “যাঃ, তোর দ্বারা ওসব চাওয়া হবে না। তা যা, আজ থেকে তোদের আর মোটা ভাত কাপড়ের অভাব হবে না।” এই হচ্ছেন সদ্গুরু আর এই হচ্ছে সদ্ শিষ্য।
প্রশ্নঃ
- নরেনের দুঃখের কারণ কি ছিল?
- রামকৃষ্ণ তাকে কি উপদেশ দিলেন?
- নরেন রামকৃষ্ণের কাছে কি চাইলেন?
- তাঁর যা প্রয়োজন ছিল তিনি কেন তা চাইতে পারলেন না?
- রামকৃষ্ণ তারপরে কি করলেন?