অপচয় কোরোনা, অভাব হবেনা

Print Friendly, PDF & Email
অপচয় কোরোনা, অভাব হবেনা

প্রত্যেক জিনিসের নিজস্ব মূল্য ও উপকারিতা আছে। এমনকি সাপের বিষ রোগ প্রতিষেধক বীজ হয়ে, সাপে-কামড়ানো মানুষের জীবন রক্ষা করতে পারে। তা সত্ত্বেও, প্রায়ই দেখা যায় যে, মানুষ নির্বোধের মতন খাদ্যদ্রব্য, টাকাপয়সা, সময় ও শক্তির অপচয় করছে।

সমস্ত জিনিসের সযত্ন ব্যবহার, আর তা বুদ্ধি দিয়ে ভেবেচিন্তে ব্যবহার করার অভ্যাসকে মিতব্যয়িতা বলা হয়। মিতব্যয়িতা ছাড়া একজন ধনী লোকের দরিদ্র হয়ে যেতে সময় লাগে না। একজন বড়লোকের চাইতে একজন মিতব্যয়ী লোক অনেক বেশী শান্তিতে জীবন কাটাতে পারে যদিও সে বড়লোক নয়। মহাত্মা গান্ধীর মিতব্যয়িতার অভ্যাস তার অনুগামীদের অবাক করে দিতো। একদিন মীরাবেন (গান্ধীজীর আশ্রমে যোগদানকারী ইংরেজ মহিলা)। দেখেন যে মহাত্মা তার সারা ঘরময় কি যেন খুঁজে বেড়াচ্ছেন। তার উদ্বিগ্ন মুখ দেখে মীরাবেন জিজ্ঞাসা করলেন, “বাপুজী, আপনি কি কিছু হারিয়েছেন? কি খুঁজছেন?” বাপুজী বললেন, ”হ্যাঁ, আমার একটা পেন্সিল হারিয়ে গিয়েছে।“ মীরাবেন, যদি খুঁজে বার করতে পারেন এই আশায়, জিজ্ঞাসা করলেন, “কত বড় পেন্সিল? নতুন কি?” “যে পেন্সিলটা আমি ব্যবহার করছিলাম, ঠিক তোমার বুড়ো আঙ্গুলের মাপের হবে। ঘরের সকলেই অবাক হয়ে ভাবতে লাগলো যে, ছোট একটি পেন্সিলের জন্যে বাপুজী এত চিন্তা করছেন কেন।

একজন এগিয়ে এসে তাঁর হাতে একটা নতুন পেন্সিল দিতে চাইলো। তিনি বললেন, “আমি নতুন পেন্সিল চাই না, যেটা তিন সপ্তাহ ধরে ব্যবহার করছি, সেই পেন্সিলটা আমি চাই।“ খোঁজাখুঁজি চলছে, শেষ পর্যন্ত তার একটা ফাইলের ভেতরে হারানো পেন্সিল টুকরোটা পাওয়া গেল। “আঃ”–বাপুজীর মুখে হাসি ফুটে উঠলো, যেন, কি একটা বিরাট পাপ কাজের থেকে তিনি বেঁচে গেলেন।

এক সময়ে, বাপুজী মীরাবেনকে সঙ্গে নিয়ে পরিক্রমায় বেরিয়েছেন। তারা এক গ্রামে গিয়েছিলেন। বাপুজীর খাবার সময়ে একটু করে মধু খাওয়ার অভ্যাস ছিল। আশ্রম থেকে আসার সময়ে মীরাবেন মধুর শিশিটা সঙ্গে আনতে ভুলে গিয়েছিলেন। সেজন্যে তিনি বাজার থেকে একটা নতুন মধু কিনে আনলেন। দুপুরে খাওয়ার জন্যে সব কিছু গুছিয়ে দেওয়া হয়েছে। খেতে বসেই বাপুজীর চোখ পড়লে আনকোরা মধুর শিশিটার দিকে, তিনি বললেন, “আমাদের সেই মধুর শিশিটা কি হলো?” মীরাবেন বললেন, “আমি ওটা আনতে ভুলে গিয়েছি বাপুজী!” সেইজন্যে একটা নতুন কেনা হল?” বাপুজী একটু বিরক্ত হয়েই কথাটা বললেন। যে টাকা আমরা খরচা করছি সেটা জনগণের টাকা। আমরা তার অপচয় করতে পারি না। যেটা ব্যবহার করছিলাম সেটা না ফুরানো পর্যন্ত আমরা এই মধুতে হাত দিতে পারিনা।

বাপুজী যা বললেন ঠিক তাই করলেন।তাঁর পরিক্রমা শেষ করে, যতদিন না আশ্রমে ফিরে গিয়ে সেই পুরানো মধুর শিশিটি হাতে পেলেন, সে পর্যন্ত তিনি বিনা মধুতে কাটিয়ে দিলেন।

প্রশ্নঃ:
  1. মিতব্যয়িতা কাকে বলে? কেন এর অভ্যাস করবো?
  2. মনে করো তুমি ১০০ টাকার একটা পুরষ্কার পেলে। ঐ টাকা নিয়ে তুমি কি করবে?
  3. লোকেরা কিভাবে নিম্নলিখিত তিনটি জিনিষ অপচয় করে তার অন্তত চারটি পন্থার কথা বলো –
    1. টাকাপয়সা
    2. সময়
    3. কর্মক্ষমতা

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।