যৎ করোষি – বিশদ পাঠ

Print Friendly, PDF & Email
যৎ করোষি – বিশদ পাঠ
যৎ করোষি যদশ্নাসি যজ্জুহোষি দদাসি যৎ।
যৎ তপস্যাসি কৌন্তেয় তৎ কুরুষ্ব মদার্পণম।।

(Chapter ৯ / Verse ২৭)

হে কুন্তিপুত্র অর্জুন, যে কাজই কর, যা কিছু আহার কর, যে যজ্ঞই কর যা কিছু দান কর, যে তপস্যাই কর, সেই সমস্তই আমাকে অর্পণ করে করবে।

বাবা বলেন, “তোমাদের সকল কর্মই ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করার জন্য করা উচিৎ। সব কাজ এমন হতে হবে যাতে সকলের উপকার হয়। তোমাদের সব কর্ম নিঃস্বার্থ ও পবিত্র হয়ে উচিৎ। কেবল এমনটা হলেই তোমরা আমার প্রিয় হবে এবং আমি তোমাদের বন্ধু হব। যদি কারুকে একটি কণা খাদ্যও দাও, সেটাও ভাল ভাবে দিও।”

“যে কাজই কর সেটা যত্ন করে করবে। ( CARE =Constant Awareness of the Real Entity i.e God ), অর্থাৎ নিরবচ্ছিন্ন ঈশ্বর সচেতনতা থাকতে হবে। সর্বদা “ধর্ম” সম্মত ভাবে কাজ করবে। শ্রীমতি গীতা রাম, সেবা সম্পর্কিত একটি গল্প বলেছেন। একবার স্বামী তাঁকে সাক্ষাৎকার দিচ্ছিলেন। সেখানে উপস্থিত একটি মহিলাকে স্বামী জিজ্ঞাসা করলেন, “তোমার শহরে সেবাকাজ কেমন চলছে?” মহিলা জানালেন, ভাল কাজ হচ্ছে। সেই সময়ে স্বামী বলতেন যে প্রতিদিন রান্না করার সময় একমুঠো চাল তুলে রাখবে। তারপর সব বাড়ি থেকে সেই চাল সংগ্রহ করে কোন অভাবী লোককে দেবে। তাহলে তোমাদের প্রতিদিনই মনে হবে যে তোমরা কোন সেবাকাজ করেছ।“ এবার এই মহিলা তাঁর শহরে যেসব সেবাকাজ হয় তার কথা বলতে শুরু করলেন। তিনিই সেইসব কাজের দায়িত্বে থাকায়, তিনি গর্বের সঙ্গে সব কাজগুলির কথা স্বামীকে জানালেন। স্বামী শুনে বললেন, “খুব খুশি হয়েছি।”

তারপর তিনি ওই মহিলাকে জিজ্ঞাসা করলেন, “দু টাকার চাল, না পাঁচ টাকার চাল ?” মহিলা জানালেন, যে একেকজন একেক রকম চাল নিয়ে আসে। স্বামী বললেন, “আমি অন্যের কথা বলছিনা। আমি জানতে চাইছি, তুমি কি চাল দিচ্ছ?” সে একটু থতমত খেয়ে বলল, “ভাল চাল স্বামী।”

স্বামী তাকে তিরস্কার করে বললেন, “কী নিজের পরিবারের জন্য পাঁচ টাকার চাল আর গরীব মানুষের জন্যে, নারায়ণ সেবার জন্যে দু টাকার চাল! সেই চাল নোংরা, কাঁকড়ে ভর্তি। এই চাল দিয়ে তুমি দরিদ্রের সেবা করছ?”

মহিলা বললেন, “না স্বামী।” তখন স্বামী চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, “দু বছর আগে আমি ভিখিরী হয়ে তোমার বাড়ী গিয়েছিলাম। তুমি নারায়ণ সেবার জন্য যে চাল সরিয়ে রেখেছিলে, তাই আমায় দিয়েছিলে। তুমি একটি লাল কাপড়ের মধ্যে চাল রেখেছিলে। সেটাই আমায় দিয়েছিলে। কি,আমার কথা বিশ্বাস হচ্ছেনা? দাঁড়াও। “এই বলে স্বামী ভিতরের ঘরে গিয়ে একটি লাল থলে নিয়ে বেরিয়ে এলেন। তিনি বললেন,” এটা তুমি আমায় দাওনি? বেচারা ভদ্রমহিলা এবার কাঁদতে শুরু করলেন।

যে মৌলিক শিক্ষা বাবা দেবার চেষ্টা করেছিলেন, তা হল, সেবা কাজ প্রেম সহকারে করা উচিৎ। যার সেবা করছ, তার মধ্যে তোমায় অবশ্যই সাই কে দেখতে হবে এবং তাঁকে দিচ্ছ ভেবেই দান করতে হবে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।