বিশদ পাঠ – বিশদে জানার জন্য পাঠ
বিশদ পাঠ – বিশদে জানার জন্য পাঠ
যিনি কর্মফলের আশা ত্যাগ করেন তিনি শান্তি লাভ করেন। তিনিই প্রকৃত যোগী। যিনি চঞ্চলমতি, যার অনেক কামনা বাসনা আছে, তিনি কর্মফলের বন্ধনে আবদ্ধ থাকেন। জ্ঞান মার্গে পরিপূর্ণতা লাভ করতে হলে প্রয়োজন,
- হৃদয়ের পবিত্রতা
- জ্ঞান অর্জন.
- কর্মফলের আশা ত্যাগ এবং.
- জ্ঞানে স্থিরতা.
মহাভারতে ধৃতরাষ্ট্র আদর্শ দৃষ্টান্ত। তিনি ছিলেন পুত্রস্নেহে অন্ধ। একজন রাজার পক্ষপাতশূণ্য ও বিচক্ষণ হওয়া উচিত। কিন্তু ধৃতরাষ্ট্র সর্বদা স্বার্থপূর্ণ উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করতেন।
ভগবান তাকে দৈহিক এবং মানসিক ভাবে অন্ধ বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি কুরুবংশকে ধ্বংসের পথে নিয়ে গিয়েছিলেন। তার মানসিক শান্তি চিরতরে ব্যহত হয়েছিল।
একজন প্রকৃত যোগী জানেন যে একই দিব্যাত্মা তাঁর মধ্যে ও অন্য সকল জীবের মধ্যে বিরাজমান। তাঁর কাছে তাই আপনপর ভেদাভেদ নেই। সব কাজই ভগবানের কাজ। তাঁর মন ঈশ্বরে নিবদ্ধ। সকলকে ভালবেসে তিনি শান্তি পান। তাঁর মধ্যে কোনো দুশ্চিন্তা নেই, কোনো চঞ্চলতা নেইতাঁর মনে সদা সর্বদা প্রশান্তি বিরাজ করে। একজন যোগীকে ভগবান তাঁর যন্ত্ররূপে ব্যবহার করেন। ভগবান বাবা বলেন, “ সৎ কর্ম করতে হলে সকল কর্মকে পুজো বলে মনে করতে হবে। সকল কাজকে সেই সর্বশক্তিমানের চরণে অর্পণ করতে হবে। কাজ করে ফল কি হ’ল সেই দিকে কখোনোই মনোযোগ দেবে নয়া। এই মনোভাব নিয়ে নিষ্ঠার সঙ্গে কর্মকে কর্তব্য বলে মনে করলে কর্মের বন্ধন হতে মুক্তি পাওয়া যাবে।
গল্পঃ কবীরের গল্প
বেনারস শহরে রাস্তায় বেড়াতে বেড়াতে কবীর সাহেব এক ব্যক্তিকে তার বাগানে চুপচাপ বসে থাকতে দেখতেন। একদিন তিনি সেই ব্যক্তিকে বললেন— “এইরকম অসলভাবে বসে না থেকে তুমি তো আধ্যাত্মিক সাধনা করে নিজের উন্নতি ঘটাতে পারো।” লোকটি উত্তর দিল— “আমার ছেলেমেয়েরা ছোট। এখন আমার জপ, তপ করার সময় নেই। এরা সব বড় হয়ে গেলে দেখা যাবে।”
ছেলে মেয়েরা বড় হয়ে যাবার পর কবীর সাহেব আবার লোকটির সঙ্গে দেখা করে তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, – “কি এবার একটু ঈশ্বর চিন্তা শুরু করেছো তো?” লোকটি বলল, “আরে দাঁড়ান, আগে ছেলে মেয়েদের বিয়ে দিই, তারা নিজের পায়ে দাঁড়াক, তার পর ঈশ্বর চিন্তা করব।”
ছেলেমেয়েদের বিয়ে হয়ে যাবার পর যখন কবীর সাহেব তাকে একই প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করলেন, তখন লোকটি উত্তরে বলল— “দাঁড়ান, আগে নাতি নাতনীর মুখ দেখি, তারা বড় হোক তবে তো আমার অবসর হবে। তখন নাম জপ করব।” লোকটির মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হবার পর কবীর আবার তার কাছে গেলেন। লোকটি বলল—“আমার নাতিরা বড়ই বেহিসেবী। তারা ঘর সংসারে মন দেয় না। আমি না দেখলে আমার সম্পত্তি রক্ষা করবে কে?”
এর কিছু দিন পর কবীর সাহেব লোকটি বাড়ী গেলেন। তার নাতিরা জানাল ঠাকুরদা মারা গিয়েছেন। কবীর ভাবলেন, “হায় রে। লোকটির সারাটা জীবন শুধু অনিত্য সংসারের কথা চিন্তা করে কেটে গেল। পার্থিব বস্তুর প্রতি আসক্তি তাকে বন্ধন মুক্ত হতে দিল না। জীবিতকালে সে অনেকগুলো গরুর দেখাশোনা করত। মারা যাবার পর সে তার মধ্যে যে গাভীটিকে সে সব থেকে ভালবাসত, তার বাছুর হয়ে জন্মাল। সারা জীবন সে লাঙ্গল টানল, গাড়ী টানল। যখন সে কাজ করতে পারত নয়া তখন তাকে এক কষাই এর কাছে বিক্রী করে দেওয়া হ’ল। তার চামড়া দিয়ে ঢাক তৈরী হ’ল। মাংস বাজারে বিক্রী হ’ল।
মনুষ্য জন্ম লাভ করেও লোকটি মোক্ষ লাভের চেষ্টাও করল না। পরন্তু সংসারের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে সে যে সব কাজ করল তার ফলস্বরূপ তারই চামড়ায় তৈরী ঢাক যেন তাকে ব্যঙ্গ করে বলতে থাকল – “যে কর্ম আমি করেছি প্রতি নিয়ত তারই ফল ভোগ করছি। আমার প্রতিটি কর্ম যেন ঢাকের উপর এক একটি ঘা হয়ে পড়ছে।”