তন্নামকীর্তনরতাস্তব
তন্নামকীর্তনরতাস্তব
অডিও
কথা
- তন্নামকীর্তনরতাস্তব দিব্যনাম,
- গায়ন্তি ভক্তিরসপানপ্রহৃষ্টচিত্তাঃ।
- দাতুং কৃপাসহিতদর্শনামাশুতেভ্যঃ
- শ্রীসত্য সাই ভগবান তব সুপ্রভাতম।।
অর্থ
তবদিব্যনাম কীর্তনরত ভক্তগণ
তােমার নামগানরূপ ভক্তিরস পানে পুলকিত চিত্ত
কৃপাপূর্বক তাদের দর্শন দাও, হে ভগবান শ্রীসত্য সাই,
তব জাগরণের আশীষে পবিত্র একটি অপূর্ব প্রভাতের প্রার্থনা জানাই।
ব্যাখ্যা
প্রহৃষ্ট চিত্তআনন্দে পুর্ণ প্রান
ত্বন | তোমার |
---|---|
নাম | নাম |
কীর্তন | ঈশ্বরের মহিমা কীর্তন |
রত | যারা কাজে নিযুক্ত |
বত | তোমার |
দিব্য | দিব্য |
নাম | নাম |
গায়ন্তি | গান করছে |
ভক্তি | ভক্তি |
রস | অমৃত |
পান | পান করা |
দাতুম | দাতুম |
কৃপা সহিত | করুণার সঙ্গে |
দর্শনম্ | দর্শন |
আশু | শীঘ্র |
তেভ্য | তাদের |
অন্তর্নিহিত তাৎপর্য্য
নাম সংকীর্তনের তাৎপর্য্য : সমবেত ভক্তিগীতি হৃদয়ে ভগবৎ প্রেম জাগরিত করে। ভক্তি অনুভূতিকে পরিশুদ্ধ করে।বাবা বলেন,
“ভজন নেতিবাচক চিন্তা দূর করে। স্নায়ুতন্ত্রকে শীতল করে,মন পবিত্র হয়,হৃদয় মধুর প্রেমে পূর্ণ হয়। ভজন করলে মন ঈশ্বরচিন্তায় সম্পৃক্ত হয় এবং নেতিবাচক ভাব অদৃশ্য হয়।”:
এই স্তবকে নাম সংকীর্তনের উপযোগীতার কথা বলা হয়েছে। প্রকৃত ভক্তি ও ভাব এবং সঠিক রাগ, তাল ও লয়ে গীত সমবেত ভক্তিগীতি ভক্তি রসের মধুর ধারাকে স্বচ্ছন্দ গতিতে প্রবাহিত করে। উচ্চকোটির গুণাবলী জাগরিত হয় এবং তার হৃদয়ে প্রস্ফূটিত হয়। সাইকৃষ্ণ,সাইরাম অথবা ঈশ্বরের যে কোনো রূপের লীলা কীর্তনে প্রভূত আনন্দ লাভ করা যায়। নাম সংকীর্তন হলো সবথেকে সহজ সাধনা। নাম সংকীর্তন পবিত্র তরঙ্গ সৃষ্টি করে। নাম সংকীর্তন আমাদের নির্বাচিত গুরুর রূপ ধ্যান করতে সাহায্য করে । পূর্ববর্তী স্তবকে আমাদের অন্তরাত্মা জাগরিত হয়েছিল। জ্ঞান রূপ সূর্য আমাদের অজ্ঞতার অন্ধকার দূর করে আমাদের সাধনা শুরু করতে প্ররোচিত করেছে। এই স্তবকে ঈশ্বরের মহিমা কীর্তন তথা ভজনের মাধ্যমে আমাদের আধ্যাত্মিক যাত্রা শুরু হলো ।আমরা স্থুল দেহ (অন্নময় কোষ) থেকে সুক্ষ্মদেহে (প্রাণময় কোষ) উপনীত হলাম। আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাস দীর্ঘায়িত, নিয়মিত এবং ছন্দোবদ্ধ হল।কাহিনী :
1. নাম দেব ও জ্ঞান দেবের কাহিনী
একসময় নাম নামদেব ও জ্ঞানদেব গভীর জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলেন। তারা তৃষ্ণার্ত এবং ক্লান্ত ছিলেন। পথে একটা কুয়ো দেখা গেল। কিন্তু সেই কুয়োর জল খুব নিচে ছিল। জ্ঞানদেব ছিলেন অত্যন্ত জ্ঞানী। তিনি তার যোগিক শক্তির দ্বারা নিজেকে একটি পাখিতে রূপান্তরিত করলেন। কুয়োর গভীরে,জলস্তরের কাছে গিয়ে তৃষ্ণা নিবারণ করলেন। নামদেবের কোনো যোগিক ক্ষমতা ছিল না। তার ছিল অসীম ভক্তি। যদিও তিনি খুবই তৃষ্ণার্ত ছিলেন তার মন ছিল ঈশ্বর চিন্তায় মগ্ন। তিনি ঈশ্বরের নাম জপ করতে লাগলেন। ধীরে ধীরে তিনি ভাবাবিষ্ট হলেন, পরমানন্দ লাভ করলেন,এবং ঈশ্বরের মধুর প্রেম উপলব্ধি করলেন। এমন সময় দেখা গেল কুয়োর জলস্তর উপরে উঠে এসেছে । কুয়োর জল ক্রমশ উপচে পড়তে লাগলো, নাম দেব তৃষ্ণা নিবারণ করলেন। জ্ঞানীকে তার নিজের ক্ষমতার উপর নির্ভর করতে হয়। নামস্মণের মহিমা এমনই যে কাঙ্খিত অথবা প্রার্থিত বস্তু ভক্তের কাছে আপনি উপস্থিত হয়।
2. ভ্রমর এবং কুমিরে পোকার গল্প.
যার রূপ চিন্তা করবে তার মতই হবে একদিন একটি ভ্রমর একটি কুমিরে পোকাকে ধরে, কাদামাটি দিয়ে তৈরি একটি বাসায় ভরে রেখে দিল। সেই বাসাটায় একটা ছোট্ট ফুটো করে রাখল। প্রতিদিন সে ওই বাসার কাছে যেত, গুনগুন করতে করতে কিছুক্ষণ বসে থাকতো। আতঙ্কিত কুমিরে পোকা ভাবত, এই বুঝি ভ্রমর তাকে মেরে ফেলবে। সে সর্বদাই ভ্রমরের চিন্তা করতে লাগলো। এই নিরবচ্ছিন্ন একমুখী চিন্তা ধীরে ধীরে তাকে একটি সুন্দর ভ্রমরে রূপান্তরিত করল। তার কুৎসিত রূপ হারিয়ে গেল। একাগ্র ঈশ্বর চিন্তা জীবিকে তার সর্বপ্রকার সীমাবদ্ধতা, অহংকার, আমিত্ববোধ ইত্যাদির আবরণ ত্যাগ করে বিশ্ব চৈতন্যের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করতে সাহায্য করে। তার অন্তরের দিব্যত্বের প্রকাশ পায় তার চিন্তা বাক্য এবং কর্মে। আধ্যাত্মিক চেতনা জাগরিত হয়, আত্মবিকাশ হয়। দেহ মন ও আত্মার সুসংগতভাবে কাজ করে এবং সুসংহত ব্যক্তিত্বের উন্মেষ ঘটে। মানুষ দিব্যত্ব অর্জন করে। মানব উন্নিত হয় মাধবে।
3. কৃষ্ণের প্রতি দ্রৌপদীর গভীর ভক্তি.
কৃষ্ণের দ্রৌপদীর অপার কৃপা প্রত্যক্ষ করে রুক্মিণী এবং সত্যভামা খুব আশ্চর্য হলেন। একদিন শ্রীকৃষ্ণ তাদের দ্রৌপদীর চুল আঁচড়ে দিতে বললেন। দ্রৌপদী পণ করেছিলেন যতদিন না কৌরবদের অন্যায় আচরণের কোন প্রতিবাদ হবে এবং কৌরবরা তাদের কৃতকর্মের জন্য শাস্তি পাবে ততদিন তিনি চুল বাঁধবেন না। ফলে তার চুলে জট পড়ে গিয়েছিল, দুই রানী তার চুল আঁচড়াতে গিয়ে শুনলেন দ্রৌপদীর প্রতিটি চুল থেকে কৃষ্ণ নাম ধ্বনিত হচ্ছে। কথিত আছে হনুমানের শরীরের সব কয়টি রোম থেকে শ্রী রামের নাম শোনা যেত। নামের মাহাত্ম্য ঠিক এমনই। “সর্বদা সর্বকালেষু হরি চিন্তনম্।“
সর্বদা সকল সময় সর্বত্র শুধু ঈশ্বর চিন্তা করো।