পিটার
পিটার
পশ্চিম ইউরোপের হল্যাণ্ড বা নেদারল্যাণ্ড সমুদ্রের থেকে একটু নীচে, সেইজন্য সমুদ্রকে বাঁধ দিয়ে জল আটকে এখানকার অধিবাসীরা বসবাস করে। এই বাঁধগুলিকে ডাইক (Dyke) বলা হয়।
অনেকদিন আগে যখন এই বাঁধগুলি তৈরীর মত বৈজ্ঞানিক কারীগরি ছিল না তখন কেউ না কেউ এই বাঁধগুলির ওপর সারা দিনরাত পাহারা দিত এবং যদি কোনো কারণে কোনো ছিদ্র দেখা দিত, সঙ্গে সঙ্গে তা মেরামত করা হত। যদি কোনো ছোট্ট ফুটো না সঙ্গে সঙ্গে সারানো হয় তাহলে ক্রমশঃ ক্রমশঃ জল ঢুকতে ঢুকতে ফুটো বড় হয়ে আস্তে আস্তে বাঁধটিতে ফাটল ধরিয়ে নিতে পারে। সেই কারণে সর্বদা দৃষ্টি রাখা হত যেন বাঁধের গায়ে কোন ছিদ্র না হতে পারে।
পিটার নামে একটি মেষপালক একদিন সন্ধ্যাবেলা যেতে যেতে হঠাৎ আবিষ্কার করল যে বাঁধের গায়ে একটি ছোট্ট ফুটো হয়েছে। সে তক্ষুনি ছুটে যার পাহারা দেওয়ার কথা তাকে খুঁজতে গেল কিন্তু বুঝল এই পাহারাদার খেতে গেছে এবং সে এক্ষুনি আসবে না। কিন্তু পাহারাদার আসতে আসতে নিশ্চয়ই ফুটোটা অনেক বড় হয়ে যাবে। তখন সে ঐ ফুটোর ভেতর নিজের আঙ্গুলটা ভরে দিয়ে সাহায্যের জন্য চিৎকার করতে লাগল। সে চিৎকার করছে কিন্তু কাছাকাছি কেউ নেই। তার চিৎকারে কেউ আসছে না। ফুটোটা বড় হচ্ছে। আতে হাতে একটার জায়গায় দুটো আঙ্গুল, আতে আতে সব কটা আঙ্গুল, শেষে গোটা হাতটা ভরে দিল। তাতেও জল বেরিয়ে আসছে। পিটার আরো, আরো, আরো জোরে চিত্কার করতে লাগল যাতে কেউ শুনতে পায়। সেই সন্ধ্যাবেলা ঠাণ্ডা হাওয়া, ঠাণ্ডা জল তার শরীরকে জমিয়ে দিতে লাগল। সে আপ্রাণ জোরে চিৎকার করতে লাগল কিন্তু ঠায় তার গলাও ক্রমশঃ ধরে আসছে, তার সমস্ত শরীর হিম হয়ে যাচ্ছে। একটা হাতের জায়গা ফুটোটা বড় হয়ে যাওয়ায় দুটো হাত ভরে দিয়েছে। যতটা সম্ভব সে জল আটকাবার চেষ্টা করতে লাগল। কিন্তু এই শীতের সন্ধ্যায় ঠাণ্ডায় জলের মধ্যে থেকে তার শরীর আস্তে আস্তে অবশ হয়ে গেল এবং একসময় সে অচৈতন্য হয়ে পড়ল।
যখন অন্য সকলে পিটারকে দেখতে গেল তখন দেখল তার শরীর ঠাণ্ডায় জমে গিয়ে অজ্ঞান হয়ে গেছে। কিন্তু সে তার কর্তব্য ভোলেনি। সে যথাসম্ভব ফুটোটা বন্ধ করে জল আটকাবার চেষ্টা করেছে। তার ফলে সেখানকার অধিবাসীরা সেইবার বেঁচে গিয়েছিল।
প্রশ্নঃ
- সাহসী পিটারের গল্পটি নিজের ভাষায় লেখ।
- এই ধরণের আর কোনো গল্প জানা থাকলে বলো।