জয়দেবের কাহিনী
কোনো এক সময়ে কৃষ্ণাবর্ত নামে এক জায়গায় জয়দেব নামে একটি ছেলে বাস করত। সে ছিল খুব দুর্বল, ক্ষীণ ও অসুস্থ। যেহেতু ছেলেটি তার পিতার একমাত্র সন্তান ছিল, তিনি তার স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য সবরকম চেষ্টা করতেন। কিন্তু সবই বিফল হত। তার ভগ্নস্বাস্থ্যের কারণে ছেলেটি পড়াশোনা বা অন্যান্য কোনো বিষয়েই এগোতে পারতনা। ক্রমশঃ জয়দেব বড়ো হল এবং তার দশ বছর বয়স হল। সে স্কুলে যেতে আরম্ভ করল; কিন্তু কোনো না কোনো অসুস্থতার কারণে সে দীর্ঘদিন স্কুল থেকে অনুপস্থিত থাকত।.
এমনই একটা দিন, সেটা ছিল পূর্ণিমা, গুরুপূর্ণিমা। জয়দেব স্নান করবে বলে নদীতে গেল। সেখানে সে এক ঋষিকল্প ব্যক্তিকে দেখতে পেল। তিনি নদীর ধারে বসে ছিলেন এবং উচ্চকন্ঠে ওঙ্কার জপ্ করছিলেন। তাঁর পবিত্র চেহারা দেখে জয়দেবের খুব ভাল লাগল ও সে ঐ ব্যক্তির কাছে গেল। জয়দেব তাঁকে জিজ্ঞাসা করল যে.. তিনি কিসের জপ্ করছেন এবং সেটি জপ তাঁর কী লাভ হবে? সেই সাধু বললেন যে সেটিমন্ত্র রাজা (সকল মন্ত্রের রাজা)—ওঁকার। ঐ মন্ত্র জপের অনেক উপকারিতা আছে। জয়দেব তাঁর কাছ থেকে ওঁকার জপের সঠিক পদ্ধতিটি শিখে নিল ও নিয়মিতভাবে জপ করতে লাগল। তার ফল হল এই যে খুব তাড়াতাড়িই তার স্বাস্থ্যের উন্নতি হতে শুরু করল কারণ এই জপের ফলে তার শ্বাস প্রশ্বাস এবং রক্তচলাচল দুটিরই উন্নতি হল। জপের ফলে জয়দেবের মনের স্থিরতাও অনেক বেড়ে গেল। শীঘ্রই সে পড়াশোনা এবং খেলাধুলা উভয়ক্ষেত্রেই মনঃসংযোগ করতে সক্ষম হল। জয়দেবের স্বাস্থও খুব ভালো হয়ে গেল এবং সে খুবই বুদ্ধিমান হয়ে উঠল। এরপর তার শিক্ষা সমাপ্ত হল ও সে একজন যুবাপুরুষ হয়ে উঠল। কিন্তু তখনও সে ওঁকার জপ করে যেতে লাগল। জীবনে সে খুবই সুখী ও সফল হল।
এবার জয়দেব বৃদ্ধ হল। একটা সময় উপস্থিত হল যখন তাকে শরীর ছেড়ে চলে যেতে হল। জয়দেব সোজা হয়ে বসে উচ্চস্বরে ওঁকার জপ করতে লাগল। এবার কী হল !যেখান থেকে সে এসেছিল সেই ওমে সে লীন হয়ে গেল। এইভাবে ওঁকার জপ জয়দেবকে পার্থিব সুখ এবং মোক্ষ দুটিই এনে দিল।
[Illustrations: Priyadarshnee, Sri Sathya Sai Balvikas Student]
[Source: Sri Sathya Sai Balvikas Guru Handbook Group I]