করাগ্রে বসতে শ্লোক – বিশদ পাঠ
ব্যাখ্যা:
পরিশ্রম ও আন্তরিকতা থাকলে ধর্মপথে অর্থ উপার্জন করা সম্ভব। এর জন্য প্রতিটি আঙুলের ডগাকে একত্রিত করতে হবে এবং তারপর তাদের সহযোগিতায় আমরা ভালো কাজ করতে পারবো এবং অর্থ উপার্জন করতে পারবো। এই জন্যেই বলা হয় যে ধনসম্পদের দেবী লক্ষী করাগ্রে বাস করেন। তিনি আমাদের ভালো কাজ করতে ও তার সাহায্যে অর্থ উপার্জন করতে প্রেরণা দেন।
জ্ঞান অর্জন করার জন্য আমাদের, বই হাতে ধরতে হয় এবং পড়বার ও লেখবার জন্য হাতের সাহায্য নিতে হয়। এই জন্যই বলা হয় যে বিদ্যা, জ্ঞান বা শিক্ষার দেবী সরস্বতী আমাদের হাতের তালুতে বিরাজ করেন। এই হাতের সাহায্যেই আমরা বই ধরি এবং পূর্ণ মনোযোগের সঙ্গে সেটি পড়ে জ্ঞান আহরণ করি। অন্য মানুষ, পশু বা জীব যেমন সাপ ইত্যাদির আক্রমণ থেকে নিজেদের বাঁচাতে করমূলের সঞ্চালন অত্যন্ত সহায়ক। এই জন্য বলা হয় যে গোবিন্দ বা শ্রীবিষ্ণু যিনি জগৎকে রক্ষা ও পালন করেন তিনি করমূলে বাস করেন। তিনি আমাদের অন্যের আক্রমণ থেকে নিজেদের রক্ষা করতে সাহায্য করেন এবং ধর্মপথে থেকে সকল কর্ম ও প্রচেষ্টায় আমাদের প্রেরণা দেন পালন করেন এবং পথ দেখান।
সুন্দর হাতের কাহিনী
একবার ঈশ্বর সবচেয়ে সুন্দর হাতের সন্ধানে দেবদূতকে পাঠালেন। তিনি বললেন, “যাও পৃথিবী থেকে এমন একজনকে আমার কাছে নিয়ে এস, যার হাতদুটি সবচেয়ে বেশি সুন্দর।”
দেবদূত মধ্যরাত্রে পৃথিবীতে এলো। সে ভাবলো যে এই সময়ে সকলেই বিশ্রাম করবে। দেবদূতের কাজটা তাহলে সহজ হয়ে যাবে, কারণ সে তাহলে খুব কাছ থেকে তাদের হাতগুলি দেখতে পাবে।
দেবদূত প্রথমে রাজপ্রাসাদে গেলো। সে ভাবলো যে রানীর হাতদুটিই সবচেয়ে সুন্দর হবে কারণ তা অলংকারের দ্বারা সুসজ্জিত এবং প্রসাধনীর দ্বারা সযত্নে রক্ষিত হবে।
কিন্তু সে যখন রানীর কক্ষে প্রবেশ করলো, তখন বাতাসে দুর্গন্ধ পেলো। রানী যেসমস্ত খারাপ কাজ করেছেন, এ ছিল তারই গন্ধ। তাঁর হাত অনেক নিষ্ঠূর কাজ করেছিল। রাজার ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার হলো। এরপর দেবদূত অভিজাত ব্যক্তিদের বাড়ী, রাজার পারিষদ বর্গের বাড়ী এবং ব্যবসায়ীদের বাড়ী গেলো। তার মনে হলো এদের হাত হয়তো ভালো কাজ করেছে এবং তার ফলে তাদের হাতগুলি সুন্দর হবে। কিন্তু দেবদূতকে হতাশ হতে হলো।
তখন দেবদূত খুব খুশি মনে একটি মঠের দিকে চললো। তার মনে হলো একজন সাধুর হাত নিশ্চয়ই সুন্দর হবে। কিন্তু হায়! সেখানেও তাকে হতাশ হতে হলো। পৌরোহিত্যের আড়ালে, তাদের হাত অনেক পাপ কাজ করেছিল। তাদের হৃদয়গুলিও ছিল অহংকারে পূর্ণ।
দেবদূতের খুব মন খারাপ হয়ে গেলো। ভারাক্রান্ত হৃদয়ে সে খোলা মাঠে গিয়ে একটি গাছের তলায় বসলো। দেবদূত ভাবছিলো যে ঈশ্বর তাকে যে কাজের জন্য পাঠিয়েছিলেন, তা শেষ না করে সে কীকরে তাঁকে মুখ দেখাবে!
এমন সময় হঠাৎ কোথাও থেকে এক অপূর্ব সুগন্ধ তার দিকে ভেসে এলো। দেবদূত চারিদিকে তাকিয়ে কোনো ফুল, গাছ বা সুগন্ধী গুল্ম দেখতে পেলোনা। অন্ধকারের মধ্যে দেবদূত চারিদিকে খুঁজলো।
দেবদূত দেখলো যে একজন চাষী, খোলা মাঠে মাটিতে শুয়ে ঘুমোচ্ছে। সে তখন লোকটির কাছে গিয়ে তার হাতদুটি দেখলো। যদিও হাতদুটি ছিল রুক্ষ ও বাদামী তবুও তা এক অদ্ভুত দীপ্তিতে ঝলমল করছিলো। চাষি গাঢ় নিদ্রায় অভিভূত ছিল আর তার হাত থেকে এক অপূর্ব সুগন্ধ নির্গত হচ্ছিলো। চারিদিকের আবহাওয়া ছিল শীতল ও মনোরম।
দেবদূত চাষীকে ঈশ্বরের কাছে নিয়ে গেলো। কিন্তু সে ঠিক করে কিছু বুঝে উঠতে পারছিলো না। তাই দেবদূত ঈশ্বরকে জিজ্ঞাসা করলো যে একজন চাষির হাত কি করে রাজা বা রানীর হাতের চেয়েও সুন্দর হতে পারে? দেবদূতের নির্ণয় সঠিক হওয়ায় ঈশ্বর খুবই খুশি ছিলেন। তিনি দেবদূতকে ব্যাখ্যা করে বললেন যে, ঈশ্বর তাকে দুটি সবল ও সক্ষম হাত দিয়েছেন ভেবে ওই চাষী ঈশ্বরের কাছে খুবই কৃতজ্ঞ ছিল। চাষীটি এটাও উপলব্ধি করতে পেরেছিলো যে তার হাতদুটি যন্ত্রমাত্র। ঈশ্বরের উদ্দেশ্য পূরণের জন্যই তাকে হাতদুটি দেওয়া হয়েছিল।
অতএব ওই চাষী জ্ঞান অর্জনের জন্য সেই হাতদুটি ব্যবহার করেছিল এবং অন্যদের মধ্যেও সেই জ্ঞান বন্টন করেছিল। ক্ষেতে কাজ করার জন্যও সে তার হাতদুটি ব্যবহার করতো। সে ক্ষেতে ভুট্টা উৎপন্ন করতো। তার থেকে সে সমৃদ্ধিও লাভ করেছিল। সে ওই হাত দিয়ে অভাবী মানুষের হাতে ভুট্টা তুলে দিতো। তাদের ক্ষত থাকলে তাও নিরাময় করতো। নিজের কাজের জন্য তার মনে কোনো অহংকার ছিলোনা। সে সবসময় ঈশ্বরের সামনে হাত জোড় করে থাকতো। এইভাবে সেই চাষি নিজের চেষ্টায় জ্ঞান, সম্পদ ও সমৃদ্ধি লাভ করেছিল। তার সেই সৎ বা মহান কাজের জন্য, সে ঈশ্বরের কাছে পৌঁছে গেলো এবং ঈশ্বরে লীন হয়ে গেলো। এইভাবে সেই চাষী ঈশ্বরত্ব প্রাপ্ত হলো।
[Illustrations by Dhanusri, Sri Sathya Sai Balvikas Student]
[Source: Gurus Handbook – Group I First Year]