মহাগণপতে – বিশদ পাঠ
[ভগবান শ্রী সত্য সাইবাবার দিব্যবাণী থেকে সংগৃহীত]
গণেশের হস্তীমস্তকের আভ্যন্তরীণ অর্থ-
- হাতি সুপরিচিত তার তীক্ষ্ণ ও গভীর বুদ্ধিমত্তার জন্য। গণেশের হস্তিমস্তক চিহ্নিত করে বুদ্ধির তীব্রতা ও বিচার বিবেচনার চূড়ান্ত ক্ষমতা। তার বুদ্ধিমত্তার শুদ্ধতার জন্য, বিনায়ককে বুদ্ধি প্রদায়কও বলা হয়। তিনি সব ভক্তদের ডাকে সাড়া দেন এবং সেই কারণে তিনি সিদ্ধি বিনায়ক ( বিনায়ক যিনি মঞ্জুর করেন তার কাছে যা চাওয়া যায়) নামে পরিচিত।
- গভীর জঙ্গলের মধ্য দিয়ে যখন একটি হাতি ঘুরে বেড়ায়, সে অন্যদের চলার জন্য পথ পরিস্কার করে দেয়।
- ঠিক একই ভাবে, গণেশকে আবাহন ও পুজো ক’রে আমরা দায়িত্ব ও কর্মসম্পাদনের পথ বাধাহীন করে । হাতির পা এত বড় যে যখন সে হেঁটে যায় অন্যান্য জীবজন্তুদের পায়ের ছাপ তার পায়ের চাপে মাটিতে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় । এখানেও, আবার, সেই প্রতীকী অর্থ হল এই যে পথের সব বাধাই দূরীভূত হয় যখন গণেশ তোমার শ্রদ্ধা ও তপস্যা বা কাজের সাথে সঙ্গতিবিধান করে বা একমত হয় । গণেশের আশীর্বাদেই আমাদের জীবন যাত্রার পথ সুগম ও সুখের হয়।
- বিঘ্নেশ্বরকে এমন একজন হিসেবে গণ্য করা হয় যিনি হাতির জ্ঞান ও বুদ্ধি দ্বারা ভূষিত। হাতি তার তীক্ষ্ণ ও গভীর বুদ্ধির জন্য সুবিদিত, তার প্রভুর প্রতি তার চূড়ান্ত আনুগত্যের জন্যও জন্যেও সে সুপরিচিত। এর প্রত্যক্ষ প্রমাণ হল সাইগীতা (ভগবান বাবার হাতি)। শ’য়ে শ’য়ে সাধারণ গাড়ি রাস্তা দিয়ে চলে যাবে। সাইগীতা সেগুলো লক্ষ্যও করবে না। কিন্তু স্বামীর গাড়ি যখনই সেই পথে যাবে, সে প্রকৃতিগতভাবেই তা লক্ষ্য করবে। সে ছুটে যাবে রাস্তার দিকে তার আবেগ মথিত আহ্লাদ মিশ্রিত কান্না সপ্তমে চড়িয়ে। স্বামীর জন্য তার কী অসম্ভব প্রেম! একটুও অতিরঞ্জিত করা হবেনা যদি ‘বিশ্বাস’ শব্দটিকে সাইগীতার সমতুল্য বলে গণ্য করা হয়।
- যখন একটি হাতি জঙ্গলের মধ্যে ঝোপঝাড়ে ঘুরে বেড়ায়, তার চলার পথ অন্য প্রাণীদের নিয়মিত যাতায়াতের পথে পরিণত হয়। এটা এভাবে গতি নির্ধারক পথে পরিণত হয় যার মধ্য দিয়ে সব প্রাণীরা ছুটে চলতে পারে।
ইঁদুর – প্রভু গণেশের বাহন
- ইঁদুর হল গণেশের বাহন। ইঁদুর একটি চতুর ও প্রাণবন্ত প্রাণী। এর প্রতীকী অর্থ আমাদের বলে দেয় যে প্রতিটি কাজে আমাদের চতুর ও পরিশ্রমী হওয়া উচিত। ইঁদুর রাতের অন্ধকারেরও প্রতীক। ইঁদুর রাতের আঁধারে ভালো দেখতে পায়। বিনায়কের বাহন হিসেবে
- সূচিত করে সেই মাধ্যম যা মানুষকে অন্ধকারের মধ্য দিয়ে সঠিক ভাবে পরিচালিত করে আঁধার থেকে আলোয় নিয়ে আসে। তাই বিনায়ক তত্ত্বর অর্থ হল যা মানুষের ভিতরের সবরকম খারাপ গুণ, দোষত্রুটি, খারাপ অভ্যাস, খারাপ চিন্তা দূর করে দেয় এবং ভালো গুণ, ভালো আচরণ, ভালো চিন্তার আভ্যন্তরীণ বিকাশ সাধন করে।
- সুচতুর বুদ্ধিদীপ্ত বিচারবিবেচনা ছাড়া কোনো দক্ষতা বা শক্তিকে লাভজনক ভাবে বা হিত সাধনের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা সম্ভব নয়। উদাহরণ স্বরূপ, একজন অবশ্যই জানবে আগুন বা বিদ্যুৎশক্তিকে ঠিক কি ভাবে ব্যবহার করতে হবে এবং আমাদের প্রয়োজন মেটাবার জন্য যন্ত্র হয়ে একজন কতদূর পর্যন্ত সেই শক্তির সাথে কাজ করতে পারবে। মানুষের ইন্দ্রিয়গুলিও আগুনের মত। তাদের বাধ্যতামূলক ভাবে সতর্ক প্রহরা ও নিয়ন্ত্রণে রাখতেই হয়।
- কোন পুজোই সফল হবে না যতক্ষণ না পর্যন্ত হৃদয় পবিত্র হবে অর্থাৎ চিত্ত শুদ্ধ হবে এবং ইন্দ্রিয়গুলিকে দমন করা হবে। গণেশ হলেন সেই দেবতা যিনি এইসব বাধা অতিক্রম করতে আমাদের সাহায্য করেন; কিন্তু যখন কোনো ভালো প্রচেষ্টা কোনো খারাপ প্রভাবের দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হয়, তখন তিনি স্বয়ং বাধা সৃষ্টি করবেন; নিষ্ঠাবান সাধকের পথ তিনিই পরিষ্কার করে দেবেন। যখন তুমি ভালো কিছুর জন্য, সার্বিক মঙ্গলের জন্য তার কাছে প্রার্থনা করবে, তিনি প্রসন্ন বদন, করুণাময়, মঙ্গলদায়ী স্বরূপ। কিন্তু তাঁকে এই রূপে তুমি পাবেনা যদি তুমি কোনো অসাধু চতুর কৌশলের অধিকারী হবার জন্য তার সাহায্য চাও। তিনি হলেন প্রণব স্বরূপ, মূর্তিমান ওমকার; সুতরাং তিনি স্বয়ং হলেন পবিত্রতা।
- বিনায়ক হলেন সব দেবতাদের নায়ক বা নেতা। বিনায়ক সব দেবতাদের আদর্শস্বরূপ, এইকথা উপলব্ধি করে বিনায়কের প্রতি বিশ্বাস গড়ে তোলা উচিত এবং তাঁকে দেবত্বের প্রতিরূপ বা স্বরূপ হিসেবে পুজো করা উচিত।