চিন্তা, বাক্য এবং কর্মের শক্তি ; ধ্রুবর কাহিনী- সত্যসাই দিব্যবাণী
মহা ভাগবতে ধ্রুবচরিত্র তোমাদের সবার কাছে পরিচিত। সে ছিলো পাঁচ বছর বয়সী একটি ছেলে যার পার্থিব জগত সম্পর্কে কোনো জ্ঞানই ছিলো না। শুধুমাত্র ঈশ্বরের প্রতি তার দৃঢ় বিশ্বাস যা তার মা একটু একটু করে তার মধ্যে গড়ে তুলেছিলেন এবং যে বিশ্বাস স্বর্গের ঋষি নারদ আরও দৃঢ় করে তুলছিলো, সেই বিশ্বাসটুকু সম্বল করেই সে গভীর অরণ্যে প্রবেশ করেছিলো এবং ঈশ্বরকে দেখার জন্য কঠোর তপস্যা করেছিলো।
আমাদের গুরুজনদের কথার ওপর বিশ্বাস রাখতে হয়। স্বর্গের ঋষি নারদের ওপর ধ্রুবর বিশ্বাস ধ্রুবকে ঈশ্বর দর্শনের সৌভাগ্য এনে দিয়েছিলো। কিন্তু ধ্রুব ছিলো নেহাত শিশু। যখন স্বয়ং প্রভু বিষ্ণু তার সম্মুখে উপস্থিত হলেন এবং তাকে জিজ্ঞাসা করলেন যে সে কি চায়, সে বললো, “হে প্রভু! আপনি জানতে পেরেছিলেন আমি কোথায় এবং আপনি এই গভীর জঙ্গলে এসেছেন। আপনি কি জানেন না আমি কি চাই?”
ঈশ্বর অজ্ঞানী নন। তিনি জ্ঞানীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ জ্ঞানী। ঈশ্বর বললেন, “আমি জানি তুমি কোথায় এবং তোমার ইচ্ছা কি। কিন্তু আমার একটা নির্দিষ্ট কার্যপদ্ধতি আছে। মানবজাতির সঠিক পাঠ হল মানুষ। চিন্তা বাক্য ও কর্ম সঙ্গতিপূর্ণ হওয়া উচিত।কেবলমাত্র তখনই আমি তোমার ইচ্ছা পূরণ করতে পারবো। তুমি তোমার বাড়িতে বলেছিলে যে তুমি ঈশ্বরের তপস্যা করবে ও ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করবে যাতে তার আশীর্বাদে তুমি তোমার বাবার কোলে বসতে পারো। তদনুসারে তুমি কৃচ্ছসাধন ও তপস্যা করেছো। কিন্তু তুমি প্রথমে যা ভেবেছিলে বা চেয়েছিলে তা কিন্তু এখন চাইছো না। আমার প্রয়োজন তোমাকে আরও পরীক্ষার সম্মুখীন করা যাতে নিশ্চিত ভাবে বোঝা যায় তোমার ব্যাকুল কামনা বা আকাঙ্ক্ষা ঠিক কিসের জন্য।”
ধ্রুব বললো ,”হে প্রভু! আমার আসল কামনা হল মূল্যহীন একখন্ড কাঁচের টুকরো চাওয়ার মত। কিন্তু আপনার দিব্যদর্শন তো হীরের মত। আমি কতটা ভাগ্যবান যে আমি একখন্ড কাঁচ খুঁজতে গিয়ে হীরের সন্ধান পেয়েছি। সুতরাং আমি আর কাঁচের খন্ড চাইনা। ঈশ্বর বললেন,” তোমার চিন্তা বাক্য ও কর্মের মধ্যে দুটো বিষয় (চিন্তা ও কর্ম) একই সারিতে আছে কিন্তু তোমার চাওয়া (বাক্য) একটু আলাদা। ঠিক আছে, দুটো বিষয়ে এগিয়ে আছো বলে ঈশ্বরের কৃপার অধিকাংশই তোমার প্রাপ্য। তাই আমি তোমায় আশীর্বাদ করছি তুমি ফিরে গিয়ে রাজা হয়ে রাজ্য শাসন করবে।”
সবকিছুর মধ্যেই ঈশ্বর চিন্তা বাক্য ও কর্মের ঐক্য দেখতে চান। অন্যথায় তিনি তা পছন্দ করেন না। দেখো! এরকম কঠোর কৃচ্ছসাধনের ও তপস্যার পরেও ও প্রভু বিষ্ণুর দর্শন লাভের পরেও ধ্রুব মোক্ষ লাভ হল না। এর কারণ তারা চিন্তা ও কর্মের সাথে বাক্যের অনৈক্য ঘটেছিলো। সুতরাং, খুব সাবধানে চিন্তা ভাবনা করে কথা বলা উচিত।