সংশ্লিষ্ট গল্প
ভগবান বিষ্ণু শান্তাকারং হিসেবে বর্ণিত, যিনি সদা শান্ত আর অবিচল মানসিকতার। একবার ঋষি কাশ্যপ একটি যজ্ঞের আয়োজন করেন। এবং বহু ঋষিগণ একত্রিত হন সেই যজ্ঞের সাক্ষী হওয়ার জন্য। এবার সেখানে উপস্থিত সকলের মনে সংশয় জাগে যে দেবতাদের মধ্যে কে সর্বোচ্চ। ঋষি নারদ বলেন ত্রিত্ব – ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও মহেশ্বর কিন্তু বিষ্ণু সর্বশ্রেষ্ঠ। উঁনি কখনও প্রশংসা বা নিন্দা দ্বারা সংবিগ্ন হন না। তিনি সদা শান্ত ও সুখী। অন্যান্য ঋষিগণ নারদকে এটি প্রমাণ করতে বললেন। নারদ ভৃগু মুণিকে আড়ালে ডাকলেন, এবং কানে কানে কিছু বললেন। ভৃগুকে নারদের বিবৃতি যাচাই করতে পাঠানো হল।
উনি প্রথমে গেলেন ব্রহ্মালোকে। ওখানে উনি দেখলে ব্রহ্মা সৃষ্টির কাজে ব্যস্ত। দূর থেকে ভৃগু ব্রহ্মার নিন্দা করতে শুরু করলেন। উনি বললেন, “হে ব্রহ্মা ! আপনার সৃষ্টি সম্বন্ধে সঠিক জ্ঞান নেই। আপনার সৃষ্টি ত্রুটিতে ভরা। তাই আপনার সকল প্রচেষ্টা বৃথা। আপনার সৃষ্ট একটি বস্তুও প্রশংসার যোগ্য নয়। “ ব্রহ্মা এই কথা শুনে উত্ত্যক্ত হলেন। উঁনি আসন ত্যাগ করে ভৃগুর কাছে এলেন, শাস্তি দেওয়ার জন্য। কিন্তু ভৃগু ব্রহ্মালোক থেকে পালিয়ে শিবালোকে গেলেন। সেখানে দেখলেন শিব তান্ডব নৃত্যে রত। দূর থেকে শিবের সমালোচনা করতে শুরু করলেন। উনি বললেন, “হে, প্রভু! আপনি আপনার বিভাগের ঠিকমত দেখাশোনা করছেন না। আপনার কাজ বিশ্বের যা কিছু মন্দ তার বিনাশ করা। কিন্তু আজ পৃথিবী মন্দে পরিপূর্ণ। আপনি সারাদিন নৃত্য করতে ব্যস্ত, যে কাজ আপনাকে বন্টন করা হয়েছে সেটা না করে, তাহলে আমরা আপনাকে পূজা করব কেন? “ শিব প্রচন্ড রেগে গেলেন এই কথা শুনে এবং উঁনি ওঁনার তৃতীয় নয়ন উন্মীলিত করার আগেই ভৃগু সেখান থেকে পালিয়ে যান।
এবার ভৃগু আসেন বৈকুন্ঠে। উনি দেখলেন ভগবান বিষ্ণু শেষনাগের ওপর শায়িত। ভৃগু ভগবানকে দেখে প্রচন্ড রেগে গেলেন কারণ তিনি ভক্তের কাছে না এসে আত্ম সুখে রত। উনি ভগবান বিষ্ণুর নিকট গিয়ে তাঁর বক্ষে প্রচন্ড জোরে পদাঘাত করলেন। এর পরিনতি কল্পনা করে ভৃগু ভীত হন এবং পলায়ণ করতে উদ্যত হন এমন সময় তাঁকে আশ্চর্য করে ভগবান বিষ্ণু তাঁর আসন থেকে উঠে এসে ভৃগুর সামনে নতজানু হয়ে বলেন, “হে, মুনিবর! আপনি আমাকে ক্ষমা করুন, আমি আপনাকে দেখতে পাইনি তাই অবজ্ঞা করেছি। আপনার মধ্যে ক্রোধের সঞ্চার করেছি। আমার লোহার মতো শক্ত বক্ষ নিশ্চয়ই আপনার চরণে আঘাত করেছে। আপনার পদসেবা করে আপনাকে স্বস্তি দিতে দিন। “ কি সহ্যশক্তি। কি শান্তিপূর্ণ ভাব। ভৃগু অবাক হয়ে যান প্রভুর কথা শুনে আর প্রভুর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
তারপর ভৃগু মুণি ঋষিদের পরিষদে ফিরে আসেন এবং সম্পূর্ণ বর্ণনা করেন। সব শুনে ঋষিগণ বিশ্বাস করেন যে ভগবান বিষ্ণুই একমাত্র শান্তাকারং এবং তাদের সকল সংশয় পরিষ্কার হয়ে যায়।