শান্তাকারং শ্লোক – বিশদ পাঠ
শ্লোকটির অর্থ :-
ভগবান বিষ্ণু সদা শান্ত, যিনি বিশাল সর্পের শয্যায় শায়িত থাকেন, যাঁর নাভিমূল থেকে পদ্মের আবির্ভাব যা সৃজনশীল শক্তি ও সকল দেবতাদের নিয়ন্ত্রক। যাঁর রূপ হল সমগ্র বিশ্ব, যিনি আকাশের মতো সর্বব্যাপী, মেঘের মতো রঙ যাঁর, আকর্ষণীয় সৌন্দর্য, লক্ষ্মীর প্রভু, পদ্মলোচন, যিনি যোগীদের হৃদয়ে বাস করেন। যাঁকে ছোঁয়া বা অনুভব করা যায় ধ্যানের মাধ্যমে। ইনি সংসারে ভয়ের অপহন্তা, আমরা তাই প্রভুর কাছে মাথা নত করছি।
শান্তাকারং
শান্তম মানে মনের সমভাব, নির্বিকার। প্রভুর মুখাবয়ব অভ্যন্তরীণ শান্তভাব, আনন্দ, ভারসাম্য, অভ্যন্তরীণ করুণা ও দয়া, শক্তির সচেতনতা ও সর্বভৌমত্ব বর্ণন করে – শান্ত অবিচলিত চিত্র। ( সকল দেবদেবী তাঁদের ভাব ও ভঙ্গিমা তাঁদের মুখের মাধ্যমে প্রদর্শন করেন।
ভূজগশয়ণং
প্রভু স্বয়ং শান্তি ও অবিচলতার প্রতিমূর্তি, যদিও সহস্র ফণাতোলা সর্পের ওপর শায়িত অবস্থায় থাকেন। সর্প এখানে পার্থিব জগতের প্রতীক, তার বিষাক্ত দাঁত নিয়ে। জগতের মধ্যে থেকেও জগতের নন, জগতে বদ্ধ নন – সেটাই রহস্য। বিশ্বে পরিব্যাপ্ত, তবুও বিশ্বকে অতিক্রম করছেন। যে সমুদ্রে তিনি শায়িত অবস্থায় থাকেন সেটি ভবসাগরের প্রতীক। (শ্রী সত্য সাই স্পীকস ৫ম খন্ড ২২৪)
পদ্মনাভং
এখানে প্রভুর নাভিমূল থেকে পদ্মের আবির্ভাব বোঝায়। বর্ণিত হয় ব্রহ্মা এই পদ্মে বসে আছেন। ব্রহ্মা সৃষ্টির প্রতীক। পদ্মের ডাঁটি নাভি রজ্জু / নাড়ি বোঝায়। ঠিক যেমন একটি গর্ভস্থ শিশু মায়ের থেকে পুষ্টিসাধন করে নাড়ির সাহায্যে, ঠিক তেমনই সৃষ্টি প্রভুর কাছ থেকে পুষ্টিসাধন করে, প্রভু হলেন বিশ্বধারং বা বিশ্বের ভিত্তি।
গগণসদৃশং
প্রভু আকাশের মতো, সর্বব্যাপী, সবকিছুতে পরিব্যাপ্ত, তিনি সর্ব সময়ের, সর্ব স্থানের, তাঁর সন্তানদের পাশে থাকেন। তিনি একাধারে দূরবর্তী তারার মধ্যে আছেন আবার তৃণের মধ্যেও। তিনি সবকিছুর মূল, দুধের প্রতিটি ফোঁটায় মাখন যেমন। যে ব্যক্তি এটি বুঝেছে সে ভয়হীন। তাই প্রভুকে বলা হয় ভবভয়হরং। হতাশা হল ভগবানের বিরুদ্ধে পাপ। যখন তিনি তোমার মধ্যে আছেন, তাহলে কেন আশা হারাচ্ছ? সেই জন্য প্রভু বলছেন — “যখন আমি এখানে আছি, কেন তুমি ভয় পাচ্ছো? “ সদা আনন্দে থাকো, আশাবাদী ও সাহসী হও” – বাবা।
মেঘবর্ণং
প্রভুর গাঢ় অন্ধকারের মতো রঙ গভীর সমুদ্র আর অসীম আকাশের রঙ। অতল, অগম কে সূচিত করে। তার রহস্য আমাদের নাগালের বাইরে, (শ্রী সত্য সাই স্পীকস ৪র্থ খন্ড পৃষ্ঠা১৬৮)।যত বেশি তুমি চেষ্টা করবে, যেই জানার চেষ্টা করে যে কোন মাধ্যমে, তাঁর মহিমার রহস্য উপলব্ধি করতে পারে
শুভাঙ্গম
তাঁর রূপ কমনীয়তাপূর্ণ, মনোহর যা শুদ্ধতা বিকিরণ করে (সত্য সাই স্পীকস ৫ম খন্ড,পৃষ্ঠা ৩২৯)
লক্ষ্মীকান্তং
তিনি ঐশ্বর্যের উৎস। তিনি সকল সম্পদ প্রদান করেন।
লক্ষ্মী অর্থ
- ১) পঞ্চভূত যা জীবন ধারণ করে – ভূমি, অপ, তেজ, মরুত, ব্যোম।
- ২) সক্রিয় ইন্দ্রিয় ও সুস্বাস্থের সম্পদ। না।
- ৩) নৈতিক উৎকর্ষতার সম্পদ। ভগবান হলে পঞ্চভূতের প্রভু। উঁনি নৈতিক উৎকর্ষতার উৎস। তিনি সুস্থ দেহ, মন ও বুদ্ধি প্রদান করেন।
কমলানয়নং
ভগবান পদ্মের মতো, তাঁর চারিদিকের পরিমন্ডল দ্বারা অপ্রভাবিত। এবং সেই জন্য তাঁর নয়ন ও চরণ পদ্মের সঙ্গে তুলনীয়। (শ্রী সত্য সাই স্পীকস ৫ম খন্ড,পৃষ্ঠা৭৩)
সর্বলৌকেক নাথম্
সকল বিশ্বের প্রতিপালক।
শান্তাকারং ভূজগাশয়ণং
পরমাত্মা ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর কণায় অবস্থিত, সবকিছুর মধ্যে রয়েছেন, এবং অপ্রভাবিত ভাবে অবস্থান করেন।
গগণসদৃশং
যে সর্বজনীন চেতনা (বিষ্ণু) সৃষ্টির সবকিছুর মধ্যে পরিব্যাপ্ত।
শুভাঙ্গম
উঁনি শুভ্র তুষারের চাইতেও পবিত্র।
লক্ষ্মীকান্তং সর্বলৌকেক নাথম্
এই সর্বজনীন চেতনা ত্রিলোক আলোকিত ও পুষ্টিসাধিত করে।