একটি সৎ কাজ
এক সময়ে রোমনগরীতে অ্যানড্রোক্লিস নামে একজন ক্রীতদাস ছিল। তার মনিব, যিনি তাকে কিনেছিলেন, তিনি অত্যন্ত নিষ্ঠুর ছিলেন। তিনি তাকে দিনরাত অকথ্য পরিশ্রম করাতেন ও সামান্য ভুল করলেই তাকে চাবুক মারতেন। সেজন্যে অ্যানড্রোক্লিস্ তার মনিবের প্রাসাদ থেকে পালিয়ে এক বনের ভিতর লুকিয়ে রইলো। সেখানে সে একটা গুহার মধ্যে আশ্রয় নিল।
একদিন ভোরবেলায় এক ভয়াবহ গর্জনে অ্যাড্রোক্লিস জেগে উঠলো, শব্দটা ক্রমশঃই কাছে এগিয়ে আসতে লাগলো। এটা একটা সিংহের যন্ত্রণায় আর্তনাদের শব্দ। কিছুক্ষণ পর সে দেখতে পেল যে, সিংহটা আর্তনাদ করতে করতে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে গুহার ভিতরে ঢুকলে। একটা কোণায় গিয়ে শুয়ে পড়ে তার ফুলে যাওয়া পা চাটতে লাগলো। সিংহের ঐ দুরবস্থা দেখে অ্যানড্রোক্লিসের মন ভিজে গেল। সে সাহস করে সিংহের কাছে হামাগুড়ি দিয়ে গিয়ে ক্ষতটা দেখলে। একটা বড় কাঁটা তার থাবার ভিতরে ঢুকে রয়েছে দেখা গেল। সে সাবধানে কাঁটা বার করে দিয়ে ক্ষতে ঔষধি লতার প্রলেপ লাগিয়ে দিলো। তিনদিন পরে ক্ষত জায়গা একেবারে সেরে গেল। কৃতজ্ঞ সিংহ অ্যানড্রোক্লিসের হাত আদর করে চেটে দিয়ে চলে গেল।
কয়েকদিন ঐ গুহার মধ্যে বাস করে অ্যানড্রোক্লিস কাছাকাছি এক শহরে চলে এলো। দুর্ভাগ্যক্রমে তার সেই নিষ্ঠুর মনিব ঐ শহরেই সে সময় আসেন ও বাজারে তাকে দেখতে পেয়ে যান। তক্ষুণি তিনি তাকে ধরে নিয়ে গিয়ে বন্দী করে রাখেন। ক্রীতদাসেরা তাদের মনিবের কাছ থেকে পালানোর চেষ্টা করলে তখনকার দিনে রোমের আইনে গুরুতর শাস্তির ব্যবস্থা ছিল। পলাতক ক্রীতদাসকে একটা খাঁচার মধ্যে ক্ষুধার্ত সিংহের সামনে ফেলে দেওয়া হতো, সিংহের সঙ্গে যুদ্ধ করবার জন্যে তার হাতে শুধু ছোট্ট একটা ছুরি দেওয়া হতো। জানোয়ারের সঙ্গে যুদ্ধে নিহত হয়ে ক্রীতদাস তার পেটে যেতো আর এই নিষ্ঠুর খেলা দেখার জন্য বিরাট জনসমাগম হতো, রাজা ও তার পরিবারবর্গ নিয়ে এই খেলা দেখতে উপস্থিত থাকতেন।
আইন অনুযায়ী অ্যানড্রোক্লিসের হাতে একটি ছুরি দিয়ে লোহার বিশাল খাঁচায় ঢুকিয়ে দেওয়া হলো। অল্পক্ষণ পরেই, এক ক্ষুধার্ত সিংহকে সেই খাঁচায় ছেড়ে দেওয়া হলো। ক্রুদ্ধ স্বরে গর্জন করতে করতে সে অ্যানড্রোক্লিস দিকে ছুটে গেল। কিন্তু অ্যানড্রোক্লিস ছুরি তুলে ধরার আগেই সিংহটা হঠাৎ থেমে গেল, সঙ্গে সঙ্গে তার গর্জনও থেমে গেল। ধীর পায়ে নিঃশব্দে সে অ্যানড্রোক্লিসের দিকে এগিয়ে এসে, তার হাত-পা চাটতে শুরু করলো। অ্যানড্রোক্লিস তার বনের গুহার বন্ধুকে চিনতে পেরে, সিংহের গলা জড়িয়ে ধরলো।
এই দৃশ্য দেখে দর্শকদের মনে হল যে, তাদের সামনে এক অলৌকিক ঘটনা ঘটে গেল। তারা আনন্দে হাততালি দিয়ে চীৎকার করতে লাগলো। রাজা ও তার পরিবারের সবাই অ্যানড্রোক্লিসকে ডেকে পাঠিয়ে তার মনিবের নিষ্ঠুরতার হাত থেকে বনে পালিয়ে যাওয়ার সব কথাই তারা শুনলেন। রাজা জিজ্ঞাসা করলেন, “কিন্তু গুহার মধ্যে আহত সিংহের কাছে যেতে তোমার ভয় করলো না?” অ্যানড্রোক্লিস উত্তর দিলো, ”একেবারেই না। আমার মনে হলো যে, সারাজীবন এক অত্যাচারী মনিবের ক্রীতদাসত্ব করার চাইতে ক্ষুধার্ত সিংহের আহার্য হওয়া অনেক ভালো।” এই উত্তর রাজা কে স্পর্শ করলে। তিনি জনমণ্ডলীর সামনে ঘোষণা করলেন, ”অ্যানড্রোক্লিস আর ক্রীতদাস নয়। তার অত্যাচারী মনিবকে, তাকে মুক্তি দেবার জন্যে আদেশ দিচ্ছি। আজ থেকে অ্যানড্রোক্লিস একজন স্বাধীন মানুষ।”
অ্যানড্রোক্লিস সিংহ উপকার করেছিলো। তার বদলে, সিংহ যে শুধু খাঁচার মধ্যে তার জীবন রক্ষা করলো তাই নয়, দাসত্বের শৃঙ্খল থেকে চিরকালের জন্য তাকে মুক্ত করে দিলো।
প্রশ্নঃ
- অ্যানড্রোক্লিসকে খাঁচার মধ্যে নিজের কাছে পেয়েও সিংহ তাকে আক্রমণ করেনি কেন?
- এই গল্প থেকে কি শিক্ষা পেলে?
- তুমি কোন জন্তুকে পছন্দ কর? কেন তাদের পছন্দ কর তাদের কোন সেবা কখনও করেছো?