প্রার্থনা
কিরণ তার মা-বাপের একটি মাত্র ছেলে। সে বাধ্য, বিনীত ও ভদ্র- যেমন বাড়ীতে, তেমনি স্কুলে। তার নম্র, মিষ্টি মধুর আচার ব্যবহারের জন্য গুরুজনেরা ও শিক্ষকেরা তাকে ভালবাসতেন। কিরণের মাত্র দশ বছর বয়স হলেও সে তার বাবা-মার কাজকর্ম খুব আগ্রহের সঙ্গে লক্ষ্য করতো। তার বাবা জেলা-জজ ছিলেন। তার সততা ও ন্যায়বিচারের জন্য খুব সুনাম ছিল। কিরণের মায়ের ঈশ্বরের উপর অগাধ ভক্তি ছিল, তিনি দরিদ্রদের সাহায্য করতেন, তাদের উপর তার দরদ ছিল। কিরণ তার বাবা-মাকে ভালবাসত ও তাদের জন্য গর্ব বোধ করতো। কিন্তু তারা ঈশ্বরের ব্যাপারে এত আগ্রহী কেন, এত গুরুত্বই বা কেন দেন ভেবে তার অবাক লাগতো। সে যখন তখন তার মাকে জিজ্ঞাসাও করতো, “মা, প্রত্যেক রবিবার বাবা কেন শিবমন্দিরে যান
আর গ্রাম্য লোকেদের মতন সৎসঙ্গে যোগ দেন? মা, তুমি যে প্রত্যহ সকালে আর সন্ধ্যায় চোখ বুজে ধ্যান কর, এতে তোমারর কি লাভ হচ্ছে? প্রত্যেক দিন মা দুর্গার স্তবস্তুতি মন্ত্র পড়ে পূজো কর কেন? তোমার অবসর সময়কে আরো ভাল কাজে লাগাতে পারো না?”
এর উত্তরে কিরণের মা শুধু একটু হাসতেন। তিনি নীরবে প্রার্থনা। করতেন, “মা দুর্গা, কিরণ অবোধ, অজ্ঞান, কিন্তু সে নির্দোষ। তাকে বিশ্বাস আর ভক্তি দাও মা।”
একদিন সন্ধ্যায়, কিরণ স্কুল থেকে বাড়ী ফিরে এলে, প্রতিবেশীরা তাকে এক দুঃসংবাদ দিল। কিরনের বাবা রাস্তায় এক চলন্ত গাড়ির নীচে চাপা পড়েছেন, তিনি সকাল থেকে অজ্ঞান অবস্থায় হাসপাতালে আছেন।
কিরণ অস্থির হয়ে হাসপাতালে যাবার জন্য ছুটে বার হতে গেলো-আর সেই সময়ই তার চোখ পড়লো দুর্গা প্রতিমার দিকে; ফুল দিয়ে তার মা সুন্দর করে সাজিয়েরেখে ছিলেন। সে তো তার মাকে প্রায়ই বলতে শোনে, “মা দুর্গা হলেন শক্তিস্বরূপিণী। তিনি সমস্ত জীব জগতের মা।তিনি সর্ব শক্তিময়ী।” কিরণের চোখে জল, সে জোড় হাতে প্রার্থনা জানালো, “মা দুর্গা তুমি জানো যে আমি বাবাকে ছাড়া এক মুহূর্ত থাকতে পারি না। দয়া করে তাঁর জীবন রক্ষা কর।“ সে দেবী মূর্তির পায়ে প্রণাম করে, সেখান থেকে একটি লাল ফুল তুলে নিয়ে চললো।
তার বাবার কাছে পৌছে গেল। তাকে অজ্ঞান অবস্থায় দেখে তার বুক ফেটে কান্না আসতে লাগলো; সে তার মায়ের দিকে তাকালো আর তখনই, তার সমস্ত ভয়ভাবনা দূর হয়ে গেল। তিনি তার চোখ দুটি বন্ধ করে ধ্যানে ও প্রার্থনায় ডুবে ছিলেন। কিরণ তার মায়ের কানে কানে বললো, “মা, আমি মা দুর্গার পায়ের তলা থেকে এই প্রসাদী ফুল বাবার জন্য নিয়ে এসেছি।”
তিনি চোখ খুলে তাকালে কিরণ তার বাবার কপালে লাল ফুলটি ঠেকিয়ে রাখলো। অল্প সময়ের মধ্যেই কিরণের বাবার জ্ঞান ফিরে আসার লক্ষণ দেখা গেল। ডাক্তারেরা তাকে পরীক্ষা করে বললেন, “এর বিপদের ভয়। কেটে গেছে, ইনি বেঁচে গেলেন। তার মায়ের প্রার্থনার সঙ্গে কিরণের প্রার্থনার সাড়া মিলল।
এই অভিজ্ঞতা থেকে সে বিরাট শিক্ষা পেলে। হাসপাতাল থেকে এক মাস পরে বাড়ী ফিরে তার বাবা তার ভিতরে আশ্চর্য পরিবর্তন লক্ষ্য করলেন। কিরণ তার মায়ের সঙ্গে ধ্যানে যোগ দিতো, ছুটির দিনে তার পূজোর সময়েও সে সাহায্য করতো। মন্দিরেও যেতো। যিশুখ্রীষ্ট, গৌতম বুদ্ধ ইত্যাদি মহাপুরুষদের জীবনী পড়তো। কিরণ এখন বুঝতে পেরেছে যে, বিশ্বাস, ভক্তি ও প্রার্থনার নিরাময় শক্তি আছে।
এতে আমাদের হৃদয়ে আশা, শক্তি ও সাহস এনে দেয়। এরা আমাদের ঠিক পথে চালিয়ে নেবে ও আমাদের মনকে শান্তি, সন্তোষ ও আনন্দে ভরে দেবে।
প্রশ্নঃ:
- তোমার নিজের ভাষায় একজন সৎ ছাত্র কিংবা সৎ ছাত্রীর বর্ণনা দাও (১০ লাইন)।
- কেন আমাদের বিশ্বাস ও ভক্তি থাকা উচিত?
- কিরণ যদি তার পরীক্ষায় পাশ করার জন্য ঈশ্বরের সাহায্য চাইতো, তাহলে কি হতো? তোমার এ বিষয়ে কি মনে হয়? তাকে কি কঠিন পরিশ্রম করতে হবে না?