বিশ্বজনীন প্রেম
ধর্ম প্রবর্তক মহম্মদ তার নতুন ধর্ম ‘ইসলাম’ জগতের সম্মুখে তুলে ধরেছিলেন। তিনি ঈশ্বর প্রেরিত মহাপুরুষ, মানুষের মধ্যে তিনি সত্য, প্রার্থনা, শান্তি ও প্রেমের বাণী প্রচার করেছিলেন। মহম্মদ যখন ইসলাম ধর্ম প্রবর্তনে মন দিলেন, অনেকেই তার বিরুদ্ধতা করে। কিছু কিছু লোক তাদের অজ্ঞতার জন্যে তার সঙ্গে একমত হতে পারেনি; কিছু লোক তার জনপ্রিয়তা বাড়তে দেখে ঈর্ষান্বিত হয়। অনেকে তার বিরুদ্ধে লোকেদের মন বিষিয়ে দেবার জন্যে, তার সম্বন্ধে মিথ্যে সব গল্প রটাতে লাগলো। অনেকে তাকে আক্রমণ করে, তার দৈহিক ক্ষতি পর্যন্ত করার জন্যে মতলব আঁটতে লাগলো। এসব বিরুদ্ধবাদীদের মধ্যে একজন বয়স্ক আরব মহিলা ছিলেন। তিনি যখন দেখলেন যে, মহম্মদের অনুগামীর দল দিনে দিনে বেড়ে চলেছে, তখন তিনি রাগে, বিদ্বেষে ফেটে পড়লেন। তিনি একদিন জানতে পারলেন যে, মহম্মদ রোজ সকালে মসজিদ যাবার পথে তারই বাড়ীর সামনে দিয়ে হেঁটে যান। সেইদিন তিনি বাড়ীতে যত ধুলো- ময়লা নিয়ে একটা প্লেটে জড়ো করে রেখে তাকে অপমান করার মতলব ঠিক করে নিলেন। পরদিন সকালে মহম্মদ ঐ পথ দিয়ে আসছেন দেখে তিনি তার বাড়ীর উপরতলায় উঠে গেলেন ও সমস্ত জঞ্জাল মহম্মদের মাথার উপরে ছুঁড়ে ফেললেন। কিন্তু মহম্মদ উপরের দিকে তাকিয়ে দেখলেন না। তার মাথা আর কাঁধের উপর থেকে জঞ্জালগুলো ফেলে দিয়ে শান্তভাবে মসজিদের দিকে হাঁটতে লাগলেন। মহিলাটি কিন্তু তাঁর ঐ দুর্দশায় প্রাণভরে হাসতে লাগলেন। তিনি নিজের মনেই বললেন, বাঃ,বাঃ, ঠিক এইভাবেই প্রত্যেকদিন এ আমার কাছ থেকে অভিনন্দন পাবে।
প্রতাহ সকালে মহিলা মহম্মদকে অপমান করার জন্যে এই কুকাজ করে যেতে লাগলেন। কিন্তু, তিনি যখন দেখলেন যে মহম্মদ একেবারেই ব্যাপারটাকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না, উপেক্ষা করে চলেছেন, তখন তিনি ক্রমশ আরো ক্ষেপে যেতে লাগলেন। একদিন, ঐ বাড়ীর সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় মহম্মদ হঠাৎ খেয়াল করলেন যে, গত তিনদিন যাবৎ তার মাথার উপর জঞ্জাল পড়ছে না। আনন্দ হওয়ার বদলে তার চিন্তা। হলে, “আজ আমার মাথায় জঞ্জাল পড়লো না কেন? আমার অনুগামীরা এই কুকাজের কথা জানতে পেরে লোকটিকে শাস্তি দেয়নি আশা করি। দেখে আসতে হচ্ছে লোকটির কি হলো।” যাই হোক, ভেতরে ঢুকে দেখে মহম্মদ সিড়ি বেয়ে উঠে, অর্ধেক ভেজানো দরজায় ধাক্কা দিলেন। একটা ক্ষীণ কন্ঠ শোনা গেল, “ভেতরে আসুন।” মহম্মদ ভেতরে ঢুকে বর্ষীয়সী মহিলাকে অসুস্থ অবস্থায় বিছানায় শুয়ে যন্ত্রণায় কাতরাতে দেখে সস্নেহ স্বরে বললেন, “মা, আপনাকে তো খুব অসুস্থ মনে হচ্ছে। কোন ওষুধ এর জন্যে খেয়েছেন কি?” মহিলা বললেন, “বাড়ীতে কেউই নেই যে আমার দেখাশোনা করবে। আমার কোন কিছু দরকার হলে আমি অতি কষ্টে হেঁটে গিয়ে করি।” মহম্মদ তার তিনদিনের অসুখের ইতিবৃত্তান্ত শুনে, বাড়ীর বাইরে গেলেন। কিছুক্ষণ পরে, তনি হাতে একটা বোতল নিয়ে ফিরে এলেন। তিনি কাপের মধ্যে ওর থেকে কিছুটা ঢেলে দিয়ে বললেন, এই ওষুধ হাকিমের (ইউনানী পদ্ধতির চিকিৎসক) কাছে গিয়ে নিয়ে এসেছি; দিনে তিনবার করে খাবেন এটা, শীগগীৱই ভালো হয়ে উঠবেন।”
মহম্মদের অন্তকরণের নির্মলতায় মহিলার চোখে জল এসে গেল। তিনি নিজের মনে চিন্তা করতে লাগলেন, এই মহানপুরুষ কতদুর সহিষ্ণু, স্নেহপরায়ণ,ক্ষমাশীল।“ তিনি মহম্মদের দিকে ফিরে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলেন। কম্পিত স্বরে তিনি বললেন, “আপনি ঈশ্বর প্রেরিত মহাপুরুষ; আপনার বিরুদ্ধে কোন পাপ কি তিনি আমার ক্ষমা করবেন? ঈশ্বরের দিকে যাওয়ার ন্যায় পথ দয়া করে আমাকে দেখিয়ে দিন।”
মহম্মদ বললেন, “আপনি এত দুঃখ করবেন না মা। ঈশ্বর যে সর্ব শক্তিমান, সর্বজ্ঞ ও সর্বব্যাপী এ বিশ্বাস যদি আপনার থাকে, তিনি কখনই আপনার কাছ থেকে দূরে সরে যাবেন না। কিন্তু, শুধুমাত্র আরাধনা করলে তিনি খুসী হন না। সকলের প্রতি নিঃস্বার্থ ভালবাসা ও প্রার্থনা, সত্যবাদিতা, ক্ষমা, দয়া, সেবা ও আত্মত্যাগের ভিতর দিয়ে তার অনুশীলন,-শুধুমাত্র এইগুলি ঈশ্বরের কাছে আমাদের প্রিয় করে তোলে।
প্রশ্নঃ
- বর্ষীয়সী আরব মহিলা কি ভুল করেছিলেন?
- মহম্মদ তাকে কি শিক্ষা দিলেন?
- আমরা কি করে ঈশ্বরের প্রিয়জন হতে পারি?