ক্রোধ থেকে সাবধান
শ্রী রাজেন্দ্র প্রসাদ যে সময়ে ভারতের রাষ্ট্রপতি ছিলেন, সে সময়ে রত্ন নামে তার একজন ভৃত্য ছিল। রত্ন খুব সৎ ছিল আর তার মনিবের বিশ্বস্ত ছিল। সে তার মনিবের যা কিছু দরকার, সেসব বিষয়ে ওয়াকিবহাল ছিল। তার যখন যা দরকার, সব কিছু সে সময় মত ঠিক করে রেখে দিতো। একদিন রত্ন তার মনিবের টেবিলটা ঝেড়েঝুড়ে গুছিয়েগাছিয়ে রাখছে। একটা ফাইল সরিয়ে সেই জায়গা ঝাড়তে গিয়েছে, সেই সময়ে ঐ ফাইলের ভেতর থেকে একটা কলম টুপ করে মাটিতে পড়ে গেল। সে তখুনি কলমটা উঠিয়ে নিয়ে দেখে যে, তার নিবের ডগাটা ভেঙ্গে গেছে। কলমটার এই দশা হতে দেখে রত্ন ভীষণ ভয় পেয়ে গেল। ঠিক সেই মুহূর্তে রাজেন্দ্রপ্রসাদ ঘরে ঢুকে এই ব্যাপার দেখলেন। তাঁর বন্ধুর দেওয়া কলমের এই অবস্থা দেখে তিনি সাংঘাতিক বিচলিত হলেন। ঐ বন্ধুকে তিনি খুবই শ্রদ্ধা করতেন ও ভালবাসতেন। কাজেই তিনি রত্নর উপর রেগে গিয়ে চেঁচামেচি করতে লাগলেন ও তাকে জবাব দিয়ে দিলেন।
রত্ন তার মনিবকে অতান্ত ভালবাসতো, সে এই কাজ ছাড়তে চাইল না। সে তার পায়ের উপর পড়ে কাঁদতে লাগলো ও দোষ করার জন্যে মাপ চাইলো। কিন্তু, রাজেন্দ্র প্রসাদ অটল হয়ে রইলেন এবং তাকে তখুনি ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে বললেন।
সেই রাতে, বিছানায় শুয়ে রাজেন্দ্র প্রসাদের হঠাৎ ঐ অপ্রীতিকর ঘটনা মনে পড়লো। এখন তার শান্ত, স্থির মনে আবার চিন্তা শুরু হলো, “রত্নর কি দোষ ছিল?” তিনি নিজের মনেই বলতে লাগলেন, আমি কলম খুলে রেখেছিলাম বলেই নিব ভেঙে গেল। আর, কলমটাকে আমি ফাইলের মধ্যে রেখেছিলাম বলেই ও কলমটা দেখতে পায়নি। রত্ন নির্দোষ ঠিকই। তাছাড়াও, সে তো খুব বাধ্য, সৎ, স্নেহশীল, মন প্রাণ দিয়ে কাজ করে! ওঃ, সকাল বেলায় রূঢ় হয়ে কি অবিচার ওর উপর আমি করেছি।” অনুশোচনা আর অনুতাপে এই সৰ চিন্তা ওকে এত অস্থির করে তুললো যে, সারা রাত তিনি ঘুমোতে পারলেন না।
তিনি ভোর হবার অপেক্ষায় ছটফট করতে লাগলেন। বিছানা ছেড়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে তার প্রথম কাজ হলো—রত্নকে ডেকে পাঠানো। সে আসামাত্রই রাজেন্দ্র প্রসাদ তার হাত নিজের হাতের মধ্যে নিলেন-যেন তাঁর কোন বন্ধুকে অভিবাদন জানাচ্ছেন; তিনি বললেন, “রত্ন, আমায় মাপ করে নাও। গত কাল আমি তোমার উপর খুবই রূঢ় হয়েছিলাম। তুমি যেমন কাজ করছিলে, সেই রকম করবে। আমি তোমায় ছাড়তে পারবো না। রত্ন তার মনিবের মুখে ঐ কথা শুনে, তার মহৎ অন্তঃকরণের পরিচয় পেয়ে বিচলিত হলো। সে তার পায়ের উপর পড়ে শিশুর মতন ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলো, এ হলো তার ভালবাসা ও কৃতজ্ঞতার অভিব্যক্তি।
এরপর থেকে, রাজেন্দ্র প্রসাদ অন্যদের কাছে প্রায়ই এই ঘটনার উল্লেখ করতেন আর তারা যাতে তাদের মেজাজ গরম করার আগে কি বা কাউকে শাস্তি দেবার আগে ভাল করে ভেবে দেখে তার জন্য সাবধান করে দিতেন। “ক্রোধ হলো বিপজ্জনক কুকুরের মতন। তিনি এই কথা বলে বলতেন যে,” একে ভিতরে শেকল দিয়ে ঠিকমতো বেঁধে রাখবে। নিশ্চিত যখন জানবে যে অন্য কেউ চোর কিংবা ডাকাত, কেবল তখনই তাকে শেকল খুলে দেবে। তা না হলে এ প্রত্যেককেই ঘেউ ঘেউ করে তেড়ে যাবে, এমনকি নির্দোষ কোন লোককে কামড় বসিয়ে দিতেও পারে। আমাদের এ কথাও মনে রাখা উচিত যে, মানুষই ভুল করে, ক্ষমা করেন দেবতা।”
প্রশ্নঃ:
- “ক্রোধ হলো কুকুর, প্রেম হলো ঈশ্বর” — ব্যাখ্যা কর।
- কেউ কেউ বলে গেছেন: “ক্রোধিত হওয়ার অর্থ অন্যের ভুলের জন্য নিজেকে শাস্তি দেওয়া।“ তুমি কি এ বিষয়ে একমত? তোমার উত্তর্রের কারণ দেখাও।
- ক) সঠিক কারণ ছাড়া যখন কোন একজনের উপর ক্রোধ প্রকাশ কর খ) কেউ কোন সাংঘাতিক দোষ করেছে বলে তার উপর যখন ক্রোধ প্রকাশ কর- সেই সময়ে তোমার অভিজ্ঞতা বর্ণনা কর।ঐ সমস্ত অভিজ্ঞতা সম্বন্ধে চিন্তা করলে এখন তোমার কি রকম মনে হয়?