মানব সেবাই ঈশ্বর সেবা
এক সময়ে এক খ্রীষ্টান মহাসন্ত জেরুসালেমে এসেছিলেন। প্রত্যেকদিন কাছের ও দূরের লোকজন তাকে দেখার ও তার আশীর্বাদ নেবার জন্য সেখানে যেতো।
জেরুসালেমের কাছাকাছি এক গ্রামে একজন ধর্মনিষ্ঠ বৃদ্ধা ছিলেন। তিনি এত দুর্বল ও ক্ষীণ ছিলেন যে,তিনি তার বাড়ীতেই কয়েক পা মাত্র হাঁটতে পারতেন-তাও লাঠি হাতে নিয়ে। তিনি প্রত্যহ দেখতেন যে, স্ত্রী-পুরুষ, ছোট-বড়ো সবাই সার বেঁধে তার বাড়ীর সামনে দিয়ে জেরুসালেমের দিকে যায়। তার মনে হল, আমিই বা কেন মরবার আগে জেরুসালেমে গিয়ে ঐ সন্তের আশীর্বাদ নিয়ে আসিনা? পথে যদি মরে যাই, ঈশ্বর আমাকে আশীর্বাদ করবেন, আমার আত্মাকে স্বর্গে নিয়ে যাবেন। পরদিন সকালেই বৃদ্ধা বাড়ী ছেড়ে জেরুসালেমের দিকে রওনা হলেন। প্রত্যেক পদক্ষেপে তিনি কাঁপছেন ও পড়ে পড়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু তিনি লাঠি হাতে ধরে, ঈশ্বরকে চিন্তা করে, নিজেকে টেনে নিয়ে চলছিলেন। অর্ধেক পথও পৌঁছাননি, এই সময়ে রোদের তাপে তিনি ক্লান্ত, দুর্বল ও শক্তিহীন হয়ে পড়লেন, তার মাথা ঘুরতে লাগলো। অনেক কষ্টে রাস্তার পাশে একটা বড় পাথরের উপরে তিনি বসলেন ও ঈশ্বরের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করতে লাগলেন। খানিক বাদে, অল্পবয়সী কয়েকজন ছেলে মেয়ে সেখান দিয়ে যেতে দেখে, বৃদ্ধা অনুনয় করে বললেন, “বাছারা তোমরা আমাকে জেরুসালেম যেতে সাহায্য করবে?” এই শুনে কয়েকজন তার দিকে রে গেমেগে তাকিয়ে দেখলো কয়েকজন অবাক হয়ে তার দিকে চেয়ে রইল আর বাকী কয়েক জন বলে উঠলো, ঠাকুমা, তোমাকে জেরুসালেম নিয়ে যাওয়ার চাইতে চলনা তোমাকে কবরে নিয়ে যাই।” সব ছেলেমেয়েরা বৃদ্ধাকে বিদ্রুপ কর হা হা করে হাসতে হাসতে। সেখান থেকে চলে গেল।
একজন অল্পবয়সী ধর্মযাজক ঐ পথ দিয়ে আসছিলেন। আশায় আশায় বৃদ্ধা তাকে ডেকে বললেন, “ও ভাই, তুমি কি আমাকে জেরুসালেমে নিয়ে যেতে পারবে?” দয়ালু ধর্মযাজক তার কাছে এসে বললেন, “আপনি কোন চিন্তা করবেন না ঠাকুমা। আপনি আমার কাঁধের উপর বসে আমার মাথাটা চেপে ধরে থাকুন। আমি আনন্দ করে আপনাকে জেরুজালেমে নিয়ে যাবো।
সবাই পুণ্যক্ষেত্রে পৌঁছে গেলেন। সেখানে হাজার হাজার লোক একটা উঁচু মঞ্চের চারধার ঘিরে ভিড় করে আছে, ঐ মঞ্চের উপর বসে আছেন মহাসন্ত স্বয়ং। অল্পবয়সী ছেলেমেয়ের দল মাথায় খাটো হওয়ায়, আর, তাদের সামনে বড় মানুষেরা থাকায় সন্তকে দেখতে পাচ্ছিলো না। সুতরাং, তারা একজন আর একজনের কাঁধের উপর চড়ে ঐ সাধুপুরুষের দর্শন নেবে বলে ঠিক করলো। যে ছেলেটি প্রথমে এক বন্ধুর কাঁধে উঠলো, সে এক বিরাট ধাক্কা খেল। মহাসন্তের জায়গায় সে দেখতে পেলো পাকা চুলের, চামড়া কোঁচকানো মুখের সেই বুড়ি ঠাকুমা, যাকে তারা বিদ্রুপ করে এসেছিল। সে বারে বারে চোখ ঘষতে লাগলো। কিন্তু সেই একই কোঁচকানো, তোবড়ানো মুখ তার দিকে তাকিয়ে হাসছে। সে চীৎকার করে উঠলো, “আমি সন্তকে দেখতে পাচ্ছি না। তার জায়গায় আমি পথে যে বুড়ি ঠাকুমাকে ফেলে এলাম তাকেই দেখতে পাচ্ছি।” এরপর তাদের প্রত্যেককে, নিজের ভাগ্য পরীক্ষা করতে গিয়ে একই অভিজ্ঞতায় হতাশ হতে হলো।
এর চাইতেও আশ্চর্য অভিজ্ঞতা হলো দয়ালু ধর্মযাজকের। মহাসন্ত যখন ভক্তদের আশীর্বাদ করার জন্যে শুধু তাঁর হাত তুলেছিলেন সেই সময়ে ঐ ধর্মযাজক তাকে পুরোপুরি ভাবে পরিষ্কার দেখতে পেলেন। শুধু তাই নয়। এক সময়ের জন্যে তিনি অনুভব করলেন যে, ঐ বৃদ্ধার বদলে স্বয়ং সন্ত তার কাঁধের উপরে বসে আছেন ও তাকে আশীর্বাদ করছেন। স্বর্গীয় সমস্ত সুখ ও শাস্তি তাঁর অন্তরে তিনি অনুভব করলেন। ঐ বছরের জেরুসালেম তীর্থযাত্রীদের মধ্যে বস্তুতঃ তিনিই ধন্য কেননা, তিনি ঈশ্বরকে ভালোবাসার সঙ্গে সঙ্গে ঈশ্বরের সন্তান-সন্ততিকেও একই ভাবে ভালবেসেছিলেন।
প্রশ্নঃ:
- ধর্মযাজক কেন বৃদ্ধাকে জেরুসালেম যেতে সাহায্য করতে চাইলেন? এতে তিনি কি লাভ করলেন?
- ছেলে মেয়ের দল কেন বৃদ্ধাকে জেরুসালেমে নিয়ে যেতে অস্বীকার করলো? পরিণতিতে কি হলো?
- মনে কর তুমি ঐ অল্পবয়সী ছেলেমেয়েদের একজন। তুমি কি করতে?