সত্যই ঈশ্বর (১)
মহাপুরুষদের যে সমস্ত মহৎ গুণ থাকে, তার মধ্যে একটি হলো সত্যপ্রিয়তা। এমনকি, শিশুকালেও তারা বিশ্বাস করতেন যে, সত্যপরায়ণতা ভগবানকে খুশী করে। বাল্যাবস্থার এই সত্যপ্রিয়তা তাদের পরবর্তী জীবনে পৃথিবীতে দুষ্কর্মের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করার মতন শক্তি ও সাহস জুগিয়েছিল। এই মূল্যবান কথাটি আমরা জানতে পারি স্বামী বিবেকানন্দের মতন সাধু-সন্ন্যাসীদের জীবনী থেকে, লোকমান্য তিলকের মতন দেশপ্রেমিকদের জীবনী থেকে। তারা তাদের শিশুকাল থেকেই সত্যকে স্বয়ং ভগবানের মতন ভালবাসতেন, শ্রদ্ধা করতেন।
স্বামী বিবেকানন্দ তার স্কুলে নরেন্দ্র নাথ দত্ত নামে পরিচিত ছিলেন। যখন তিনি একেবারে শিশু, তখনই তার বাবা মা তার সত্যবাদিতা ও সাহসের জন্য গর্ব বোধ করতেন। তিনি কখন ও একটি মিথ্যা কথা উচ্চারণ করতেন না কিংবা কোন ভুল করলে তা স্বীকার করতে পিছপা হতেন না। একদিন, তার শিক্ষক ভূগোলের মৌখিক পরীক্ষার ক্লাস নিচ্ছিলেন। শিক্ষকের প্রশ্নে ছাত্ররা পরের পর উত্তর দিয়ে যাচ্ছিল। এইবার নরেনের পাশে বসা ছেলের পালা এলো। তাকে শিক্ষক একটি কঠিন প্রশ্ন করলেন, ছাত্রটি ভয়ে ভয়ে একটু আমতা-আমতা করে উত্তর দিল। শিক্ষক তক্ষুনি চেঁচিয়ে উঠলেন, “কি? এই তোমার ভূগোলের জ্ঞান? ক্লাসে যা শেখাই কান দিয়ে শোনো না, বাড়ীতে পড়াশোনা কর না।” বেত উচিয়ে তিনি গর্জন করে উঠলেন, “হাত পাতো”।
ঐ ছাত্রের হাতে বেত পড়ার আগেই নরেন উঠে দাড়ালো ও নির্ভীক ভাবে বললো, “স্যার, ওকে বেত মারবেন না। ও ঠিক বলেছে। ওর উত্তর নির্ভুল। গোটা ক্লাস স্তম্ভিত হয়ে গেল। এবারে শিক্ষকের রাগত চোখ নরেনের দিকে পড়লে, তিনি চিৎকার করে উঠলেন, “তুমি আমাকে ভূগোল শেখাতে এসেছো? দেখি, তোমার হাত দেখি।”
হাত বাড়িয়ে দেবার পরে, শিক্ষক যখন বেত মারতে লাগলেন, তখনও নরেন বলে যেতে লাগলো, “স্যার, ও ঠিক উত্তর দিয়েছে। এরপর সে হাতের যন্ত্রণায় কাদতে কাদতে অনুনয় করে বললে, “স্যার, দয়া করে ভূগোল বই মিলিয়ে দেখুন। আমি সত্যি কথা বলছি।
সত্য কথা শব্দটা শিক্ষকের অন্তর স্পর্শ করলো। তা সত্ত্বেও তিনি নরেনের কথাটা ভুল প্রমাণ করার আশায় ভূগোল বই যে পাতায় ঐ প্রশ্নের পুরো উত্তর দেওয়া আছে সেই পাতা আস্তে আস্তে পড়ে যেতে লাগলেন। সমস্ত ছেলের উদ্বেগ নিয়ে শিক্ষককে লক্ষ্য করছিলো, তারা দেখলো যে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে তার মুখটা বিবর্ণ হয়ে যাচ্ছে। ছাত্র দুটির সামনে এসে শিক্ষক বললেন, “আমি দুঃখিত। আমি এর উত্তর বুঝতে ভুল করেছি। ও যা বলেছে ঠিকই বলেছে।” তারপর নরেনের দিকে ফিরে বললেন, আমি তোমার সাহস আর সত্যপ্রিয়তার প্রশংসা করি। তুমি আদর্শ ছাত্র। এই কথা শুনে নরেনের হাতে বেত মারার ব্যথা চলে গল। এতেই সে সুখী। সত্য যে যুদ্ধে জিতেছে।
এই সত্য অনুসন্ধিৎসার জন্যেই পরের দিকে নরেন্দ্র রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের কাছে ঈশ্বর ও তার সৃষ্টির সত্যতা শেখার জন্য গিয়েছিলেন। স্বামী বিবেকানন্দ হওয়ার পরে তিনি এই সত্য সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে দেবার জন্যে কঠোর পরিশ্রম করেছিলেন, যাতে মানুষ আরো বেশী জ্ঞানী হতে পারে ও আরো সুখে জীবনযাপন করতে পারে।
প্রশ্নঃ:
- শিক্ষকের বেতের হাত থেকে বন্ধুকে বাঁচানোর জন্যে নরেন তার শক্তি আর সাহস কিসের থেকে পেয়েছিল?
- কিসের জন্য শিক্ষক নরেন্দ্রকে বেত মারা বন্ধ করলেন?
- তুমি কি কখনও সত্যি বলার জন্যে ব্যথা কিংবা শাস্তি পেয়েছে?
- সত্যি কথা বলার জন্যে তুমি কি কোন সময়ে আনন্দ পেয়েছো? তোমার অভিজ্ঞতা বিস্তারিত ভাবে বল।