মুচির সৌভাগ্য
এই ঘটনাটি যখন ঘটেছিল তখন ভগবান বাবার বয়েস কুড়ির কাছাকাছি। এই ঘটনায় ভগবান বাবার প্রেম ও করুণার আরেকটি নিদর্শণ আমরা পেয়ে থাকি। ব্যাঙ্গালোরের এক রাস্তার ধারে বসে এক মুচি তার ব্যবসা চালাত। যে যেখানে বসত ঠিক তার উল্টোদিকের এক বাংলো বাড়ীতে সে বাবাকে দর্শণ করেছিল। বাংলো হতে এবং বাংলোর ভিতর বহু গাড়ী যাওয়া আসা করছিল এবং বহু লোক ভিতরে যাচ্ছিল ও বাইরে বেরিয়ে আসছিল। সে লক্ষ্য করল যে, যারা বাড়ী হতে বেরিয়ে আসছিল তাদের মুখমন্ডল উজ্জ্বল এবং আনন্দময় ছিল এবং তারা ভগবান শ্রীকৃষ্ণের এবং সাইবাবার অবতারের কথা বলতে বলতে বেরিয়ে যাচ্ছিল। মুচিটিও গেটের ভিতর যাবার সাহস সঞ্চার করল এবং ভয়ে ভয়ে উকি মেরে ভিতরে দেখতে পেল একটা বিশেষ চেয়ারে বাবা বসে আছেন এবং পুরুষরা একদিকে এবং মহিলারা আরেকদিকে বসে আছেন। তার চোখ যখন বাবার উপর পড়েছিল তখন বাবাও তার দিকে তাকিয়েছিলেন। বাবা সঙ্গে সঙ্গে উঠে দরজার দিকে এগিয়ে যেখানে মু্চি দাড়িয়ে ছিলেন সেখানে এলেন। মুচির হাতে আধশুকনো ফুলের মালা ছিল। কিন্তু যে মালাটি বাবার কাছে নিবেদন করবার আগেই। তার হাত হতে বাবা মালাটি তুলে নিলেন এবং মুচি যে ভাষাটি শুধু জানত সেই তামিল ভাষায় বাবা জিজ্ঞেস করলেন যে, যে তার কাছ। হতে সে কি চায়। ইচ্ছা করতে এবং তাকে এতগুলো কথায় প্রকাশ করবার ক্ষমতা নিশ্চয় বাবাই তাকে দিয়েছিলেন, কারণ কোনও প্রকার ইতঃস্তত না করে এবং সকলকে অবাক করে দিয়ে প্রার্থণা নিবেদন করেছিল, “দয়া করে আমার বাড়ীতে এসে একটা কিছু গ্রহণ করুন।” বাবা তার পিঠে অত্যন্ত প্রেমের সঙ্গে হাত বুলিয়ে বলেছিলেন “ঠিক আছে, আমি আসব।” এবং তারপর হলের ভিতর চলে গিয়েছিলেন।
তার বাড়ীটি কোথায় তা বাবাকে জানাতে এবং বাড়ী ঘর পরিষ্কার করে বাবাকে অভ্যর্থনা জানাবার জন্য বাবা কখন তার বাড়ীতে আসবেন সে কথা জানতে সে কিছুক্ষণ বাইরে অপেক্ষা করেছিল। কিন্তু রাস্তার উপর যে চামড়ার বান্ডিল ও পুরোনো জুতো ফেলে রেখে এসেছিল তার জন্য তাকে শীঘ্রই ফিরে যেতে হয়েছিল। সমানে লোক আসা যাওয়া করছিল বলে তাকে ধাক্কা খেতে হচ্ছিল। যে যখন বলছিল যে বাবা তার বাড়ীতে যাবেন বলে কথা দিয়েছেন তখন কেউই তার কথায় কান দেয় নি। বাবা কখন তার বাড়ীতে আসবেন সে কথা জেনে নিতে তিনি তাদের অনুরোধ করছিলেন। কেউ কেউ তার কথা শুনে হাসাহাসি করছিল, কেউ কেউ আবার তাকে মাতাল অথবা পাগল আখ্যা দিচ্ছিল। বেশ কিছু দিন পার হয়ে গেল এবং বাবার সঙ্গে দেখা হবার সকল আশা মুচিটি ত্যাগ করেছিল।
হঠাৎ একদিন ঐ বৃদ্ধ মুচির সামনে একটি গাড়ী এসে থামল। সে অবাক হয়ে গেল, আবার ভয়ও পেল যে ঐ গাড়ীটি করে পুলিশ অথবা কোনও অফিসার এসে ফুটপাতে বসে ব্যবসা চালাবার জন্য তাকে হয়ত ধরে নিয়ে যাবে। কিন্তু না, উনি হলেন সাইবাবা! তিনি মুচিকে মধুর ভাষায় গাড়ীতে উঠে বসতে বললেন। মুচিটি এতটাই বিভ্রান্ত হয়ে গেল যে ড্রাইভারকে তার বাড়ীর পথের কথা বলতেও সে মুখ খুলতে পারছিল না। কিন্তু মনে হল যে বাড়ীটি কোথায় তা বাবা জানেন।
রাস্তার ধারে গাড়ীটি দাড় করিয়ে বাবা নামলেন এবং খোয়া বিছানো রাস্তা ধরে ছোট গলিতে ঢুকে বস্তির ভিতর একেবারে সঠিক ঘরটির সামনে থামলেন! পরিবারের লোকেদের জানাতে মুচি ঘরে ঢুকল। বাবা কিছু মিষ্টি ও ফল সৃষ্টি করে পরিবারের লোকেদের দিলেন। তারপর দেওয়ালের পাশে একটি কাঠের টুকরোর উপর বসলেন। মুচির চোখ দিয়ে সমানে আনন্দাশ্রু বেরিয়ে আসছিল। বাবা মুচিকে আশীর্বাদ করলেন এবং তাকে আনন্দ দেবার জন্য কয়েকটা কলা গ্রহণ করলেন। কলাগুলো পাশের এক দোকান হতে মুচি দৌড়ে গিয়ে কিনে এনেছিল। বাবা তারপর ঐ বস্তির কুড়ে ঘরটি হতে বেড়িয়ে চলে গেলেন আর সমগ্র এলাকার লোকেদের কাছে ঐ কুড়েঘরটি একটি তীর্থস্থান হয়ে উঠল।