স্থিতপ্রজ্ঞ
শুকদেব একবার মিথিলার কাছে একটি বনে তার শিষ্যদের শিক্ষা দিচ্ছিলেন। রাজা জনক যিনি তার সব কাজ ঈশ্বরকে সমর্পণ করে করার অভ্যাস করেছিলেন, তিনি যখন শুনতে পেলেন শুকদেব এই বনে শিষ্যদের শিক্ষা দিচ্ছেন, তখন তিনি সেখানে গিয়ে ঐ শিক্ষন শিবিরে অংশ নেবার জন্য শুকদেবের কাছে অনুমতি প্রার্থনা করলেন। শুকদেব তাকে অনুমতি দিলেন এবং রাজা জনক এই শিষ্যদের মধ্যে অন্যতম হয়ে প্রতিদিন শিক্ষন শিবিরে যেতেন।
একদিন যে কোনো কারণেই রাজা জনক এই শিক্ষন শিবিরে যোগ দিতে যেতে পারলেন না। শুকদেব তার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলেন এবং অন্যান্য শিষাদের বললেন, “তিনি রাজা জনকের জন্য অপেক্ষা করছেন। জনক এলে তিনি শিক্ষা শুরু করবেন।” এই কথায় অন্যান্য শিষ্যদের মনে প্রশ্ন জাগল যে, “এই শুকদেব ধনী দরিদ্রের পার্থক্য করেন না, ইনি একজন ত্যাগী মহাপুরুষ জেনেই তারা এই শিক্ষা নেবার জন্য এসেছেন কিন্তু এখন দেখছেন এই জনক, রাজা বলে শুকদেব যেন বেশী খাতির করছেন।” এই জন্য তাদের গুরুর প্রতি শ্রদ্ধা কমে গেল এবং শুকদেবের প্রতি একটা বিদ্বেষ এসে গেল।
অন্তর্যামী গুরু এটি বুঝলেন। এবং তাদের শিক্ষা দেবার জন্য একটি ব্যবস্থা করলেন। একদিন যখন শুকদেব শিক্ষা দিচ্ছেন, মনে হল যেন মিথিলা নগরীতে আগুন লেগে গেছে। সব শিষ্যরা যে যার বাড়ী, সম্পত্তি রক্ষা করবার জন্য দৌড়ল কিন্তু রাজা জনক যেমন বসেছিলেন তেমনি বসে রইলেন। শুকদেব সবই নিঃশব্দে লক্ষ্য করছিলেন। কিছুক্ষণ পরে অন্যান্য সব শিষ্যরা ফিরে এল। তারা বলল, “গুরুদেব, আমরা মিথ্যেই ছুটে গিয়েছিলাম। মিথিলাতে কোনো আগুন লাগেনি।” শুকদেব একটু হাসলেন এবং রাজা জনককে জিজ্ঞাসা করলেন, “রাজা, আপনি গেলেন না? আপনার রাজপ্রাসাদ, বিষয়সম্পত্তি তাদের রক্ষা করতে গেলেন না?”
তাতে রাজা জনক বললেন, “আমার মিথিলা নয়, আমার রাজ্যও নয়। ভগবানের ইচ্ছাই পূর্ণ হয়। আমি এখানে শিক্ষা নেবার সংকল্প নিয়ে এসেছি, কাজেই সে সংকল্পে বাধা পড়ার মতন তেমন কিছু ঘটনা ঘটেনি যাতে করে আমার এখান ছেড়ে যাবার দরকার পড়ে।”
শুকদেব অন্যান্য শিষ্যদের বললেন, “এরকম শৃঙ্খলাযুক্ত, একাগ্রমনা একজন ছাত্র, বহু অন্যমনস্ক ছাত্রের থেকে অনেক বেশী প্রার্থনীয়।”
প্রশ্নঃ
- শুকের ছাত্ররা জনককে কেন হিংসা করত?
- শুক কি উপায় চিন্তা করলেন?
- জনক কি করলেন?
- শিষ্যদের প্রতিক্রিয়া কি ছিল?