ভদ্রাচলম
ভদ্রাচলম অন্ধ্রপ্রদেশের তেলেঙ্গানা অঞ্চলের প্রত্যন্ত গ্রামে, গোদাবরী নদীর উত্তর পাড়ে অবস্থিত। ভদ্র নামে এক ঋষির নামে এই স্থানটি নামাঙ্কিত, যিনি এই স্থানে দীর্ঘ সময় বাস করেন।
শ্রী রাম, সীতা ও লক্ষণ ভদ্রাচলমে যান ও বসবাস করেন, তাই স্থানটি এতো বিখ্যাত। কিংবদন্তি অনুযায়ী, পর্ণশালা (পাতার কুটীর) নামে একটি স্থানে, ভদ্রাচলম থেকে ৩২ কিলোমিটার দূরে, শ্রীরাম, সীতা ও লক্ষ্মণ বনবাস যাপন করেন। এখান থেকেই রাবণ সীতাকে হরণ করে নিয়ে যান। ছোট্ট কুটীরটি, শ্রীরাম ও সীতা যে ওখানে থাকতেন তার সাক্ষ্য বহন করে। যে স্থানে রাক্ষস মারীচ সোনার হরিণের ছদ্মবেশে সীতাকে প্রলুব্ধ করার জন্য আবির্ভূত হয় এবং যে রেখাটি লক্ষ্মণ টেনে (লক্ষ্মণ রেখা) সীতাকে নির্দেশ দেন যতক্ষন পর্যন্ত তিনি শ্রীরামকে খুঁজে ফিরে না আসেন, সীতা যেন ওই রেখা লঙ্ঘন না করেন, এখনও ওই কুটীরের সামনে দৃশ্যমান।
নিকটে একটি ছোট্ট জলধারা, স্বচ্ছ জলে পরিপূর্ণ আজও বয়ে চলেছে, যেখানে বলা হয় শ্রীরাম, সীতা ও লক্ষ্মণ রোজ স্নান করতেন। কথিত আছে কাছে ভাল জল না খুঁজে পাওয়ায়, লক্ষণ মাটিতে তীর ছুঁড়ে একটি ফোয়ারা সৃষ্টি করেন, যেটা এই জলধারার উৎস।
বলা হয় ভদ্রাচলমের মন্দিরটি যে স্থানে নির্মিত হয়, সেখান থেকে শ্রীরাম গোদাবরী নদী পেরিয়ে লঙ্কা অভিযানে যান সীতাকে উদ্ধার করতে। ভদ্রাচলম যে তহসিলের অন্তর্গত, সেই তহসিলের তহসিলদার গোপান্না, সপ্তদশ শতাব্দীতে, গোলকন্ডার কুতুব শাহ বংশের শেষ রাজা আব্দুল হাসান থানের আমলে এই মন্দিরটি নির্মাণ করেন।
গোপান্না শ্রী রামের পরম ভক্ত ছিলেন। শ্রী রামের প্রতি গভীর ভক্তিতে নিমগ্ন হয়ে, গোপান্না তার সমস্ত তহসিলের কাজ উপেক্ষা করে, রাজস্বের সংগৃহিত অর্থ থেকে ৬ লক্ষ টাকা ব্যয় করে ভদ্রাচলমে শ্রীরামের মন্দির নির্মাণ করেন। এই ব্যাপারে রাজা থানে শাহ যখন জানতে পারেন, তখন তিনি গোপান্নাকে গ্রেফতার করেন অর্থ অপব্যয়ের জন্য। তাকে গোলকন্ডা দূর্গের একটি অন্ধকূপে বন্ধি রাখা হয়। দীর্ঘ সময় বন্দি থাকায়, গোপান্না হতাশ হয়ে আত্মাহত্যা করার সিদ্ধান্ত নেন। এমন সময়, একদিন শ্রীরাম তার স্বপ্নে এসে দেখা দিয়ে বলেন মন্দির নির্মাণের অর্থ রাজাকে শোধ করে দেওয়া হয়েছে এবং গোপান্নাকে শ্রীরাম রসিদ দেখান।
পরের দিন সকালে, রাজা থানে শাহ গোপান্নার সঙ্গে গোলকন্ডার কারাগারে দেখা করতে এসে তাকে গল্প করেন – কিভাবে একজন অপরিচিত ব্যক্তি তার কাছে এসে গোপান্না দ্বারা অপব্যবহৃত ৬ লক্ষ টাকার সম্পূর্ণ রাশি শোধ করে গিয়েছেন। যখন গোপান্না তার স্বপ্নে শ্রীরামের আভির্ভূত হয়ে টাকা শোধের ঘটনা ও রসিদ দেখানোর বর্ণণা করে, রাজা গভীর ভাবে প্রভাবিত হন এবং গোপান্নার সঙ্গে এইরূপ আচরণ করার জন্য ক্ষমা চান। গোপান্নাকে মুক্ত করে দেন এবং পবর্তীকালে তার সঙ্গে খুবই শ্রদ্ধা ও ভক্তিপূর্ণ ব্যবহার করতে থাকেন। শুধু তাই ই নয়, রাজা প্রত্যেক বছর মন্দির রক্ষণা বেক্ষণ করার জন্য আর্থিক অনুদানের ব্যবস্থা করেন। এই অনুদান ২৫০ বছর ধরে থানে শাহের উত্তরাধিকারী মুসলমান রাজারা বহন করেন। আধ্যাত্মিক জ্ঞানলাভের পর গোপান্না রামদাস নামে প্রসিদ্ধ হন।
প্রতি বছর পক্ষকাল ব্যাপী রাম নবমী উৎসবে অংশগ্রহণ করার জন্য হাজার হাজার তীর্থ যাত্রী সমগ্র ভারতবর্ষ থেকে এসে ভদ্রাচলমে একত্রিত হয়। এই সময় অনুষ্ঠিত একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান হল “সীতা কল্যাণম”। ওই দিন, ছোট ও সুন্দর শ্রীরাম ও সীতার মূর্তি গোদাবরীর পবিত্র জলে স্নান করিয়ে, ঝলমলে আভরণে ভূষিত করে রূপোর পাল্কি করে বিরাট কল্যাণমন্ডপে আনা হয়, যেখানে বৈদিক মন্ত্র উচ্চারণের মাধ্যমে ও সকল ধর্মীয় আচার অনুযায়ী অসংখ্য ভক্তদের উপস্থিতিতে শ্রীরাম ও সীতার বিবাহ দেওয়া হয়।
শ্রীরাম সীতার একটি ছোট্ট মন্দির আছে পর্ণশালায়, যেটির রক্ষণাবেক্ষণ মূল ভদ্রাচলমের মন্দিরের তহবিল থেকে করা হয়। একটি বিশেষ অলৌকিক ঘটনা সম্প্রতি পর্ণশালার মন্দিরে ঘটেছে ।এখানে কয়েক বছর আগে, মাটির নীচে প্রচন্ড শব্দ সহ ভূমিকম্প হয়। ভূমিকম্পের সময় স্থানীয় বাসিন্দা ভীত হয়ে পড়ে, মন্দিরের পবিত্র গর্ভগৃহের চারি দিকে দু মিটার গভীর গর্ত হয়ে যায়, এবং অন্যান্য স্থানেও অনেক ক্ষয় ক্ষতি হয়। আশ্চর্য গর্ভগৃহটি সম্পূণ অক্ষত থাকে, এমন কি মূর্তিদুটিরও সামান্যতম ব্যাঘাত ঘটেনি। এত বড় অলৌকিক ঘটনায় স্থানীয় মানুষের মনে বিশ্বাস এতটাই বর্ধিত হয়েছে যে এখন এখানে এমন কোন মানুষ নেই যে এই মন্দিরে দৈনিক পূজা দেয় না।
প্রশ্ন
- ভদ্রাচলম কোথায় অবস্থিত?
- ওখানে কাকে পূজা করা হয়?
- কে এই মন্দিরটি নির্মাণ করেন ? কী ভাবে তিনি মন্দিরটি নির্মাণ করেন?
- রামদাসকে কারাগারে নিক্ষিপ্ত করা হয় কেন?
- কখন তাঁকে মুক্ত করা হয়?