গুরুবায়ুর, দক্ষিণের দ্বারকা
গুরুবায়ুরাপ্পমের আরাধ্য মূর্তি যা কিনা ভগবান মহা বিষ্ণুর প্রকাশ, যা কৃষ্ণ অবতরণের সময় দেবকী ও বাসুদেবের কাছে প্রকট হয়। কাশ্যপ ও অদিতি বাসুদেব ও দেবকী হয়ে জন্মগ্রহণ করেন, এবং ভগবান পর পর তিন বার তাঁদের সন্তান রূপে জন্মগ্রহণ করেন।
স্বয়ং নারায়ণ প্রথমে গুরুবায়ুরের মূর্তি পূজা করেন, তারপর সেটি ব্রহ্মাকে দেন আর এই দেবতার আনুগ্রহে ব্রহ্মা সৃষ্টির কাজ চালিয়ে যান। এটাই সেই একই মূর্তি যেটি দেবকী ও বাসুদেব দ্বারা পূজিত, আর যখন কৃষ্ণ দ্বারকার রাজা হন, তিনি মন্দির নির্মাণ করে মূর্তিটি প্রতিষ্ঠা করেন ওখানে।
দ্বাপর যুগের শেষে ভগবান কৃষ্ণ উদ্ধবকে বলেন তাঁর পৃথিবীতে অবতার হয়ে আসার উদ্দেশ্য সম্পূর্ণ হয়েছে এবং তিনি শীঘ্রই বৈকুণ্ঠে ফিরে যাবেন। উদ্ধব গভীর শোকে নিমজ্জিত হন, এই ভেবে যে ভয়ানক দুর্ভাগ্য পৃথিবীতে নেমে আসবে কলিযুগে। কিন্তু ভগবান তাঁকে শান্তনা দেন যে তিনি গুরুবায়ুরের মূর্তিতে প্রকট হবেন এবং ভক্তদের ওপর তাঁর আশীর্বাদ বর্ষণ করবেন। ভগবান উদ্ধবকে নির্দেশ দেন যেন আসন্ন প্রলয়ের হাত থেকে মূর্তিটিকে রক্ষা করেন এবং বৃহস্পতির (দেবতাদের গুরু), সঙ্গে আলোচনা করে পবিত্র স্থানটিতে মূর্তিটি প্রতিষ্ঠা করেন।
সেই মতো, বৃষপতি ও বায়ু দায়িত্ব নিয়ে সমগ্র জায়গায় মূর্তিটি স্থাপনা করার উপযুক্ত পবিত্র জায়গা খুঁজতে শুরু করলেন। পথে তাঁদের সঙ্গে পরশুরামের দেখা হয়, যিনি নারদের পরামর্শে একই মূর্তির সন্ধান করছেন। তাঁরা পদ্মফুলে ভর্তি একটি সুন্দর পুষ্করিণীর কাছে এলেন। এক দিকে শিব ও পার্বতী তাঁদের অভ্যর্থনা জানালেন। শিব তাঁদের বললেন বহু আগে থেকে এই স্থানটি নারায়ণ এর মূর্তি স্থাপনের জন্য নির্ধারিত এবং শিব পবিত্র বারি মূর্তিটির ওপর সিঞ্চন পূর্বক তাঁর শ্রদ্ধা মূর্তির উদ্দেশে জ্ঞাপন করেন, এবং বৃহস্পতিও বায়ুর দিকে ঘুরে বললেন, “তোমরা দুজনে একত্রে এই মূর্তি প্রতিষ্ঠার কার্য সম্পন্ন করবে, এবং যেহেতু তোমরা এই পবিত্র মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা তাই এই মন্দিরটি গুরুবায়ুর নামে প্রসিদ্ধ হবে।” এই বলে, শিব ও পার্বতী অপর পাড়ে চলে যান। আজও, গুরুবায়ুর মন্দিরের এক কিলো মিটার অদূরে একটি শিব মন্দির এই ঘটনার সাক্ষ্য বহন করে।
গুরুবায়ুরের মাহাত্ম্য এই মূর্তির দিব্যত্বের ওপর নির্ভর। এই সেই ভুবনমোহিনী কৃষ্ণ মূর্তি যাঁর চারটি চাকচিক্যময় হাত শঙ্খ, চক্র, গদা ও পদ্ম ধারণ করে আছে। স্বয়ং ভগবান তুলসী ও মুক্তোর মালায় সজ্জিত, ভগবান এখানে পূর্ণ দীপ্তিতে আবির্ভূত। ভক্তের ডাকে সাড়া দেন এমন দেব মূর্তিদের মধ্যে অন্যতম গুরুবায়ুরের নাম সহজেই মনে ভেসে ওঠে।
শরণাগতকে ভগবান সর্বদা রক্ষা করেন, এই বিষয়ে একটি কাহিনী আছে। এক ব্যক্তি পক্ষাঘাতে কষ্ট পাচ্ছিল, ডাক্তাররা জবাব দিয়ে দিলে পরে লোকটি ভগবান গুরুবায়ুরের চরণে আশ্রয় চায়। সেই একই সময়, এক দরিদ্র ব্যক্তিও আসে ওখানে ভগবান কে তুষ্ট করে সম্পদ লাভ করার আশায়। টাকার ব্যাগ নদীর তীরে রেখে পক্ষাঘাতে আক্রান্ত লোকটি নিজেকে আস্তে আস্তে ঝোঁকায় নদীতে ডুব দেবার জন্য। টাকার খোঁজে ঘুরে বেরানো দরিদ্র লোকটির চোখে ব্যাগটি পড়ার সঙ্গে সঙ্গে সে ব্যাগটি সময় নষ্ট না করে ছোঁ মেরে তুলে নেয়। পক্ষাঘাতগ্রস্ত লোকটি চোরের পিছন পিছন ছোটে। সে বুঝতেই পারে না যে অলৌকিকভাবে সে সুস্থ হয়ে গেছে। ঠিক তখনই সে একটি কন্ঠস্বর শুনতে পায় –“সন্তুষ্ট হও। তোমার প্রার্থনাও মঞ্জুর হয়েছে, আর ওরও।
এই ভাবে, স্বার্থপর ও লোভী, অমোঘ টানে ভগবানের কাছে আসলে, তাঁর আশীর্বাদই পায়, আর যে ব্যক্তি ক্ষমতা ও অর্থ চাইতে আসে, শেষ পর্যন্ত সে ভগবানের অনুগ্রহ বই আর কিছু চায় না; কারণ ভগবান বলেছেন চার প্রকার মানুষ তাঁর পূজা করেঃ আর্তি, অর্থার্থী, জিজ্ঞাসু ও জ্ঞানী। ভগবান যে নিজে একজন জাদুকর, অবশেষে নিজেই যারা তাঁর কাছে আসে জ্ঞানীতে রূপান্তরিত হয়।