শিখধর্ম
পৃথিবীর সবচেয়ে কনিষ্ঠতম ধর্ম হল শিখধর্ম। এটা হল সেই ধর্ম যা পৃথিবীর সমস্ত ধর্মের মধ্যে একটা সামঞ্জস্য ও সমন্বয় সাধনের চেষ্টা করেছে, বিশেষত হিন্দু ও মুসলিম, এই দুটি ধর্মের মধ্যে।
শিখধর্মের প্রবর্তক গুরু নানক ১৪৬৯ খ্রীস্টাব্দে লাহোর জেলার তালওয়ানি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ছোটবেলা থেকেই নানক ছিলেন আধ্যাত্মিক মনোভাবাপন্ন । যখন তিনি তার গবাদিপশুদের মাঠে চরাতে নিয়ে যেতেন, সেখানে তাকে মাঝে মাঝেই গভীর ধ্যানস্থ অবস্থায় পাওয়া যেতো।
সেই সময় হিন্দুরা কুসংস্কার ও অন্ধ বিশ্বাসে আবদ্ধ ছিলো এবং মুসলমানেরা ছিলো ধর্মান্ধ ও গোড়া ও রক্ষণশীল দৃষ্টিভঙ্গি সম্পন্ন।ধর্মের নামে সর্বত্র অবিরাম যুদ্ধ চলতো।
গুরু নানক একটি নতুন ধর্ম প্রবর্তনের কাজের ভার নিজের কাঁধে তুলে নিলেন, যে নতুন ধর্ম এই দুই ধর্মের সবটুকু ভালো নিয়ে গঠিত যাতে হিন্দু ও মুসলমান উভয়েই শুভ চিন্তা নিয়ে শান্তিতে একসাথে বসবাস করতে পারে। খুব ছোটবেলা থেকেই তিনি ভালোবাসার এক নতুন নীতি, এক অকাট্য সত্য প্রচার করতে শুরু করেছিলেন।ঈশ্বরের সাথে সংযোগ স্থাপন ও দৈব প্রেরণায় সতস্ফূর্ত ভাবে যেসব কবিতা ও শ্লোক তার মনে উদিত হত, তার মধ্য দিয়েই তিনি লোক শিক্ষা দিতেন। সেই সব কবিতা ও শ্লোকগুলি শিখ ধর্ম গ্রন্থে ‘গুরু গ্রন্থ সাহেব’ এ সংগৃহিত ও সংরক্ষিত রয়েছে। এই গ্রন্থের অন্তর্গত মূলপাঠকে বলা হয় গুর্বানি। এই ‘গুরু গ্রন্থ সাহেব’ রাখা হয় শিখ মন্দিরে যা গুরুদ্বার নামে পরিচিত।
গুরু নানকের অনুগামী বা শিষ্যদের বলা হয় শিখ। ‘শিখ’ শব্দটির অর্থ হল ‘যে শেখে বা শিক্ষা গ্রহণ করে ‘বা’ শিষ্য’।
দশজন শিখগুরুরা হলেন, যথাক্রমে:
- গুরু নানক
- গুরু অঙ্গদ
- গুরু অমর দাস
- গুরু রাম দাস
- গুরু অর্জুন দেব
- গুরু হর গোবিন্দ
- গুরু হর রাই
- গুরু হর কিষণ
- গুরু তেজ বাহাদুর
- গুরু গোবিন্দ সিং
যদিও এই নতুন ধর্মের নীতিবাক্য ছিলো শান্তি ও শুভ ইচ্ছা তবুও পরবর্তী কালে এই ধর্মের অনুগামীরা গুরু গোবিন্দ সিংএর নেতৃত্বে সংগ্রাম ও যুদ্ধের বেছে নিয়েছে ও হাতে অস্ত্র তুলে নিয়েছে যখন তারা মুসলিম শাসকদের হাত নির্যাতিত ও নিপীড়িত হয়। যেহুতু তারা মুসলিম শাসকদের বিরুদ্ধে সাহসের সাথে যুদ্ধ করেছে, তাদের নামের সাথে সিংহ উপাধিটি যুক্ত হয়।
শিখ ধর্মাবলম্বীরা মূর্তি পূজোয় বিশ্বাস করে না। তারা শুধু প্রার্থনা সঙ্গীত ও স্তব গান করে ও মহা সাধুসন্তদের বাণী উচ্চারণ করে। এই ধর্মের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল একনিষ্ঠ উৎসর্গীকৃত শিষ্যত্ব।
শিখেরা গুরু নির্দেশিত নিম্নবর্ণিত পাঁচটি প্রয়োজনীয় জিনিস দ্বারা তাদের স্বাতন্ত্র্য চিহ্নিত করেন। এগুলিকে পাঁচটি ‘ক’ বলা হয়।
- চুল অকর্তিত রাখা (কেশ)
- সবসময় একটি লোহার চিরুনী রাখা (কাংঘা)
- লোহার বালা হাতে পরা (কড়া)
- ছোটো তলোয়ার সঙ্গে রাখা (কৃপাণ)
- সর্বদা অন্তর্বাস পরিধান করা (কাছা)
শিখদের ধর্মনীতি প্রকৃতপক্ষে হিন্দুদেরই মত কিন্তু তারা জাতিভেদ প্রথা মানে না।
প্রতীক
শিখধর্মের প্রতীককে বলা হয় খন্ড। দ্বি- প্রান্ত তলোয়ারের মাঝখানে খন্ড। খন্ডের ডান প্রান্ত হল স্বাধীনতা এবং নৈতিক ও আধ্যাত্মিক মূল্যবোধ দ্বারা পরিচালিত কর্তৃপক্ষ বা কর্তৃত্ব। বাঁ প্রান্ত হল দৈব ন্যায়বিচারের প্রতীক; এই বিচারে যারা মন্দ কাজ করে তারা শাস্তি পায়। বৃত্ত বা চক্রটি প্রতিনিধিত্ব করছে ঈশ্বরের অখন্ডতাকে যার কোনো শুরুও নেই শেষও নেই। আড়াআড়ি করে রাখা ক্রশ চিহ্নের মত তলোয়ার দুটি প্রতিনিধিত্ব করছে আধ্যাত্মিক কর্তৃত্ব ও রাজনৈতিক ক্ষমতা বা শক্তির।
বহে গুরু বহে গুরু বহে গুরুজী বোলো
সৎনাম সৎনাম সৎনাম জী বোলো।