বৌদ্ধ ধৰ্ম - Sri Sathya Sai Balvikas

বৌদ্ধ ধৰ্ম

Print Friendly, PDF & Email
বৌদ্ধ ধৰ্ম

আনুমানিক খৃষ্টপূর্ব ৫০০ সনে গৌতম বুদ্ধের দ্বারা বৌদ্ধ ধর্মের প্রতিষ্ঠা হয়।

গৌতম বুদ্ধের জীবন

গৌতম বা সিদ্ধার্থ এই নামেই তিনি শৈশবে সকলের কাছে পরিচিত ছিলেন। তাঁর পিতা ছিলেন কপিলাবস্তুর রাজা এবং মা রানী মায়া। খুবই বিলাসিতার মধ্যে তিনি বড় হন। যশোধরার সঙ্গে তাঁর বিবাহ হয়। তাঁর পুত্রের নাম ছিল রাহুল। সিদ্ধার্থ জাগতিক দুঃখকষ্ট থেকে দূরে রাজপ্রাসাদে সুরক্ষিত জীবন যাপন করতেন। একবার তিনি প্রাসাদের বাইরে বেরিয়ে, একজন বৃদ্ধ, একজন পীড়িত ব্যক্তি, একটি শবদেহ ও একজন সন্ন্যাসীকে দেখেন। বৌদ্ধরা এগুলিকে চার প্রকার দর্শন বলেন। গৌতম বুঝতে পারলেন যে জরা, ব্যাধি, দুঃখ এবং মৃত্যু সকল মনুষ্য জীবনের অবশ্যম্ভাবী অঙ্গ ও পরিণতি। সন্ন্যাসীর সৌম্যকান্তি তাঁর হৃদয়ে মুদ্রিত হয়ে যায়। গৌতম স্থির করেন যে তিনিও গৃহত্যাগ করবেন। সেইমত তিনি বনে গিয়ে সত্যের অনুসন্ধানে অভিনিবিষ্ট হন।

গৌতম একজন যোগীর মতন জীবন শুরু করলেন। তিনি নানা প্রকার কৃচ্ছসাধন করতেন। কঠিন উপবাস ছিল তার অঙ্গ। একদিন যখন উপবাস তাঁকে মৃত্যুর দরজায় পৌঁছে দিল , তখন তিনি একটি গ্রাম্য বালিকার কাছ থেকে অল্প পায়েস গ্রহণ করলেন। এই অভিজ্ঞতা সিদ্ধার্থকে যে শিক্ষা দিল, তা হল, উপবাস, প্রাণায়াম, দুঃখ সহ্য করা ইত্যাদি যৌগিক অভ্যাসগুলি থেকে যে আধ্যাত্মিক উপকার হয় ,তা খুবই সামান্য। তিনি কৃচ্ছসাধন ত্যাগ করে’ অনাপনসতি’ ধ্যানে মনোনিবেশ করলেন। (অর্থাৎ কেবল স্বীয় শ্বাস প্রশ্বাস সম্বন্ধে অবহিত থেকে,তাতে মনঃসংযোগ করা। )এইভাবে তিনি সেই সত্যকে জানলেন, যাকে বৌদ্ধরা বলেন ‘মধ্যপন্থা’। এটি হল চরম আত্মপ্রশ্রয় এবং চরম কৃচ্ছসাধনের মধ্যবর্তী পন্থা।

সাত বছর পরে বুদ্ধগয়ায় বোধিবৃক্ষের তলায় গভীর ধ্যানমগ্ন অবস্থায় তিনি বোধি বা প্রজ্ঞান লাভ করেন। তখন তিনি ‘বুদ্ধ’ (অর্থাৎ যিনি আলোকপ্রাপ্ত হয়েছেন ) নামে খ্যাত হন। এরপর বুদ্ধদেব স্থান থেকে স্থানান্তরে ভ্রমণ করতে থাকেন। তিনি হাজার ,হাজার লোকের জীবনকে প্রভাবিত করেন। তার মধ্যে উচ্চবংশ জাত ব্যক্তি যেমন ছিল, তেমনি নিম্নশ্রেণীর মানুষও ছিল। রাজকুমার ছিলেন এবং ছিলেন চাষি, কেউ বাদ ছিলনা। বুদ্ধদেব এরপর তাঁর অবশিষ্ট জীবন’ ধর্মের /ধম্মের’ প্রচারে অতিবাহিত করেন।

৪৫ বছর বুদ্ধদেব মানুষকে যে শিক্ষা দেন, তাতে তিনি সৌন্দর্য্য, ত্যাগের আনন্দ, সরল জীবন যাপনের প্রাথমিক প্রয়োজনীয়তা এবং হৃদয়কে সর্বদা দয়ায় ভরে রাখার কথা বলেন। বুদ্ধদেব আশি বছর বয়সে, কুশিনগরে পরিনির্বাণ লাভ করেন। বৌদ্ধদের বর্ষপঞ্জিতে এই দিনটিকে পবিত্রতম দিন বলে গণ্য করা হয়।

খুব তাড়াতাড়ি বুদ্ধের মতবাদ ধর্ম হিসাবে স্বীকৃতি লাভ করল। এশিয়ার অধিকাংশ জায়গায় বৌদ্ধধর্মের অনুশীলন প্রচলিত হল।

বৌদ্ধ ধর্ম
  1. বৌদ্ধ ধর্মের চারটি প্রধান নীতি
  2. সর্বম দুঃখম—– সবকিছুই দুঃখময়;
  3. সর্বম ক্ষণিকম—- সবকিছুই ক্ষণস্থায়ী;
  4. সর্বম অনাত্মম—- সবকিছুই অনাত্মা;
  5. নির্বাণম শান্তম—- নির্বাণই শান্তি।
২। চারটি মহান সত্য
  1. জীবন দুঃখময়;
  2. কামনা, বাসনাই দুঃখের মূল ও কারণ;
  3. কামনা, বাসনা খর্ব করে দুঃখের উপশম করা যায়;
  4. অষ্টাঙ্গ মার্গই দুঃখ নিবৃত্তির পন্থা।
৩। নির্বাণের অষ্টাঙ্গ মার্গ
  1. সম্যক দৃষ্টি –(চারটি মহান সত্যের দর্শন);
  2. সম্যক সংকল্প (তদনুযায়ী জীবন যাপনের সংকল্প );
  3. সম্যক বাক—– (বাক সংযম);
  4. সম্যক আচরণ — (পঞ্চশীলের অনুশীলন);
  5. সম্যক আজীব — (পঞ্চশীল লঙ্ঘন না করে জীবন যাপন);
  6. সম্যক প্রয়াস —– (মনকে সৎ চিন্তায় পরিপূর্ন করা);
  7. সম্যক চিন্তা/ স্মৃতি —- (জীবনের অনিত্যতা এবং ক্ষণিকত্ব স্মরণে রাখা);
  8. সম্যক ধ্যান/ সমাধি —- (নিরবচ্ছিন্ন ভাবে এই সত্যের স্মরণে প্রজ্ঞা লাভ হয়)।

বুদ্ধদেব পঞ্চশীলের কথা বলেছেন। এগুলি সাধারণ মানুষকে তাদের জীবনে পালন করতে হবে। এগুলি হল:

  1. কোন প্রাণীর প্রতি হিংসা করা থেকে দূরে থাকতে হবে। (অহিংসা)
  2. মিথ্যা কথন থেকে বিরত থাকতে হবে। (সত্য)
  3. কখনও চুরি করা চলবে না। (অস্তেয়)
  4. ইন্দ্রিয় ভোগ থেকে বিরত থাকতে হবে। (ব্রহ্মচর্য)
  5. কোন প্রকার মাদক দ্রব্য গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে হবে।

বুদ্ধের শিক্ষা খুবই সরল। তিনি তাঁর শিক্ষায় কখনই ঈশ্বর বা আত্মার কথা বলেননি। তিনি সকল কর্মের প্রণোদক ‘মানস’ এর কথা বলেছেন। ঠিক এই কারণেই তিনি বলেন যে মনের বিশুদ্ধতা, আবেগের শুদ্ধতা, শব্দের এবং ক্রিয়ার শুদ্ধতা যাতে বজায় থাকে, তার জন্য অবশ্যই সচেষ্ট থাকতে হবে।

ভারতে বৌদ্ধ ধর্ম হিন্দু ধর্মের মধ্যে ঢুকে পড়ে এবং হিন্দুরা বুদ্ধকে বিষ্ণুর অবতার বলে গ্রহণ করেন। বৌদ্ধধর্ম দেশ দেশান্তরে ছড়িয়ে পড়ে। আজ এশিয়ার বহু দেশের মানুষ বৌদ্ধধর্মকে তাদের আপন ধর্ম বলে গণ্য করেন।

বৌদ্ধ প্রার্থনা

বুদ্ধং শরণং গচ্ছামি
আমি বুদ্ধের শরণ নিলাম
ধম্মম শরণং গচ্ছামি
আমি ধর্মের শরণ নিলাম
সংঘ্ং শরণং গচ্ছামি
আমি সংঘের শরণ নিলাম।

ধর্মচক্র

এটি হল বৌদ্ধধর্মের প্রতীক। এই চক্রটিতে আটটি দন্ড আছে। এর প্রত্যেকটি বৌদ্ধধর্মের এক একেকটি নীতির প্রতীক। চক্রটি বৌদ্ধধর্মের সম্পূর্ণতার প্রতীক।

বৌদ্ধ ধর্মশাস্ত্র (পালি ত্রিপিটক)

পালি ত্রিপিটক (ত্রি, অর্থাৎ তিন। পিটক অর্থাৎ ঝুড়ি বা পাত্র)

  1. বিনয় পিটক- এটিতে বৌদ্ধ শ্রমণ ও শ্রমণাদের পালনীয় আচরণ বিধির কথা বলা হয়েছে। কি কারণে এবং কীভাবে এই নিয়মগুলি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সেকথাও এখানে বলা হয়েছে। তার সঙ্গে রয়েছে বিধিগুলির সমর্থনে সকল লেখা।
  2. সুত্ত পিটক- এখানে ভগবান বুদ্ধের ভাষণগুলি সংবলিত হয়েছে।
  3. অভিধম্ম পিটক- এটিতে বুদ্ধের শিক্ষার ব্যাখ্যা লিপিবদ্ধ হয়েছে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: <b>Alert: </b>Content selection is disabled!!