শৈশব লীলাকাহিনী – ২
শৈশব লীলাকাহিনী – ২
অতি অল্প বয়সেও বাবা মানবিক মূল্যবোধকে তুলে ধরে এবং অর্থ রোজগারের জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে আদর্শকে নীচে নামিয়ে না আনে, এমন সব বই ও সিনেমা দেখাটা অপছন্দ করতেন। যখনই কোনও ভ্রাম্যমান “সবাক-চলচ্চিত্র প্রদর্শনী” গ্রামে তাঁবু খাটাত, চারপাশের কয়েক মাইল দূর হতে গ্রামবাসীরা তাদের স্বল্প আয়ের অর্থ ব্যয় করে যতগুলি সম্ভব সিনেমা দেখত। কিন্তু অন্য সব ছেলের সঙ্গে সত্য যেতে রাজী হত না। ঐ সিনেমাগুলো মিথ্যা মূল্যবোধ প্রদর্শন করে, শাস্ত্রের ভুল ব্যাখ্যা করে এবং সংগীতের জগাখিচুড়ি তৈরী করে, এই সব কথা বলে সত্য দৃঢ় হয়ে থাকতেন।
তাঁর যখন দশ বছর বয়স তখন তিনি আঠারো জন বালককে একই রকম গেরুয়া পোশাক পরিয়ে ‘পান্ডারী ভজন দল’ তৈরি করেছিলেন। প্রত্যেকের হাতে একটি করে পতাকা এবং খঞ্জনী ও পায়ে মল থাকত। লোক-সংগীত এবং প্রভু পান্ডুরঙ্গের দর্শনের জন্য তীর্থযাত্রীদের আকুতির বর্ণনা সম্বলিত লোক-গাথার সুরের তালে তালে তারা নাচত। কাব্য ও সংগীতের সাহায্যে সত্য দীর্ঘ তীর্থযাত্রার কঠিন পরীক্ষার বর্ণনা তাদের শিখিয়ে দিতেন। ভাগবত পুরাণ হতে শ্রীকৃষ্ণের জীবন কাহিনীর উপর কয়েকটি গানও তিনি রচনা করেছিলেন। হয় শিশু কৃষ্ণের নয়তো মাতা যশোদার ভূমিকায় সত্য অভিনয় করতেন। তাঁর নাচ, সংলাপ ও গান ভক্তিগীতিগুলোর ভিতর একটা মুগ্ধকর সৌন্দর্য্য নিয়ে আসত। তাঁর কৃষ্ণের রূপায়ণ এমন হত যেন বৃন্দাবনের এবং মথুরার কৃষ্ণ গ্রামবাসীদের সামনে আবির্ভূত হয়েছেন।
তাঁর পরিবেশনা এতটাই বাস্তবানুগ ছিল যে, নরসিংহ অবতারের বর্ণনা দেওয়া একটি গান গাইবার সময় তিনি নরসিংহের রূপে পরিবর্তিত হয়ে গিয়েছিলেন এবং এতটা হিংস্রতার সঙ্গে লাফ দিয়েছিলেন যে তাঁকে যারা দেখেছিলেন তাদের সবাই ভীত হয়ে গিয়েছিলেন। লোকেরা তাঁকে পূজো করলে তিনি আবার শিশু সত্য হয়ে যান এবং পুনরায় গান শুরু করেন। এ ঘটনা এই কথাই প্রচার করে থাকে যে, ঐ ভজন দল পুট্টাপর্তীতে গান গাইলে ও নাচলে স্বয়ং ঈশ্বর নিজেকে মূর্ত করে থাকেন।
প্রচলিত বিষয়বস্তুর সম্পর্কে গান রচনার সঙ্গে সঙ্গে তিনি এক নতুন দেবতা এবং নতুন মন্দিরের সম্পর্কে গান লিখেছিলেন যার কথা কেউ শোনেনি পৰ্য্যন্ত। মন্দিরটি ছিল শিরডি এবং দেবতা ছিলেন সাইবাবা। “এই সাইবাবা কে হতে পারেন?” বয়স্ক লোকেরা অবাক হয়ে ভাবতেন যখন শিশুরা তাঁর কথা নিয়ে রাস্তায় নেচে নেচে যেত।
আশেপাশের গ্রামে কলেরা মহামারী রূপে দেখা দিয়ে পুরো পরিবারের পর পরিবারকে মেরে ফেলতে আরম্ভ করলেও পূট্টাপর্তী গ্রামের কিন্তু কোনও অনিষ্ট হয় নি। জ্ঞানী লোকেরা পরস্পর আলাপ করবার সময় বলতেন যে, ভজন দলের তৈরী করা ঐশ্বরীক পরিবেশ হল পুট্টাপর্তীর নিরাপত্তা ও সুস্বাস্থ্যের জন্য দায়ী। সুতরাং ঐ ছোট দলকে নানা গ্রামে অভিনয় করবার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হত। এই নাটকগুলি পুরাণের কাহিনী হতে নেওয়া হত এবং মিথ্যার উপর সত্যের জয় এবং ভক্তের জন্য ভগবানের প্রেম ও সুরক্ষা কে তুলে ধরত। সত্য নিজের জন্য নানা ভূমিকা স্থির করতেন, বিশেষ করে কৃষ্ণ এবং মোহিনীর ভূমিকা। তাঁর চলনে এমন ছন্দ এবং এক কমনীয়তা ও মনোহরতা ছিল, যা তারা আগে কেউ দেখেনি। তাদের কাছে মনে হত যে, তিনি কখনই মাটি স্পর্শ করছেন না এবং তিনি স্বর্গীয় পরিবেশের মানুষ। এমনই ছিল শিশুর অভিনয় যে, তিনি যখন হরিশচন্দ্রের স্ত্রী তারার ভূমিকায় অভিনয় করছিলেন তখন তাঁর নিজের মাতা স্টেজে উঠে পড়েছিলেন তারা- বধকে আটকাতে, তিনি ভুলে গিয়েছিলেন যে এটা অভিনয় মাত্র।
[Source : Lessons from the Divine Life of Young Sai, Sri Sathya Sai Balvikas Group I, Sri Sathya Sai Education in Human Values Trust, Compiled by: Smt. Roshan Fanibunda]