জোয়ান অফ আর্ক

Print Friendly, PDF & Email
জোয়ান অফ আর্ক

ফরাসী দেশের একটি ছোট্ট গ্রাম, নাম লোরেন। এখানে একটি লোক বাস করতেন, নাম ‘জেকস ডি আর্ক’। তার মেয়ে, ‘জোয়ান অফ আর্ক’। আমরা যে সময়ের কথা বলছি, সে সময়ে জোয়ানের বয়স কুড়ি বছর। ছোটবেলা থেকেই জোয়ান নিঃসঙ্গ ছিল। সে একা একা মাঠে গরু, ভেড়া চরাতে যেত। এমনদিনও গেছে যেদিন সে সারাদিন কারুর কথাও শুনতে পায় নি, এমন কি মানুষের মুখও দেখেনি। তার এই বিশাল অবসর সময়টা কিন্তু জোয়ান খুব সৎভাবে ব্যবহার করত। তাদের গ্রামে যে একটা ছোট্ট অন্ধকার চার্চ ছিল, সেই চার্চে গিয়ে সে ঘণ্টার পর ঘণ্টা প্রার্থনা করত। এবং জোয়ান বিশ্বাস করত যে, এই অন্ধকারের মধ্যে সে কিছু মুর্ত্তির দেখা পায়, যাদের সঙ্গে সে কথা বলে। গ্রামের কিছু লোকও বিশ্বাস করতে লাগল যে জোয়ান এই সব মুর্ত্তির সঙ্গে কথা বলে।

Joan of Arc Praying in the Church

জোয়ান একদিন তার বাবাকে বলল যে, “এই অলৌকিক কণ্ঠস্বর তাকে বলেছে ‘দ্য ফিন’কে সাহায্য করতে এবং জোয়ান আরো জানাল যে এই অলৌকিক কন্ঠস্বর সে শুনতে পায় যখন গির্জার ঘণ্টাগুলি বাজে”। জোয়ান এই অলৌকিক কন্ঠস্বরকে বিশ্বাস করতেন কিন্তু তার বাবা এগুলিকে বিশ্বাস করতেন না। বলতেন, “জোয়ান, এগুলি সবই তোমার কল্পনা। তুমি বরং কোনো সহৃদয় লোককে বিয়ে কর এবং সুখে ঘর কর”। কিন্তু জোয়ানের উত্তর একই ছিল যে, আমি বিয়ে করব না। আমি যাব এবং ‘দ্য ফিন’ কে সাহায্য করব”। শেষ পর্যন্ত, জোয়ান তার এক কাকার সঙ্গে বেরিয়ে পড়ল। ‘বদ্‌-রি-কোর্ট’ বলে এক লর্ডের কাছে যাবে এবং তার কাছে থেকেই সে দ্য ফিরে ঠিকানা সংগ্রহ করবে। এই বদ্‌-রি-কোর্ট থাকতেন অনেক দূরে। অনেকদূর যাওয়ার পর একদিন সে এই বদ্‌-রি-কোর্টের বিশাল প্রাসাদের সামনে এসে পৌছল, লর্ডের পরিচারক তাকে খবর দিল যে একজন গরীব মেয়ে তার সঙ্গে দেখা করতে চান। লর্ড তখুনি তাকে ফিরিয়ে দিলেন। বললেন, “দেখা হবে না।” কিন্তু এটা বলার পরেই তার মনে কিরকম একটা পরিবর্তন হল। তিনি শেষ পর্যন্ত বললেন, “জোয়ানকে নিয়ে এস।”

জোয়ানকে দেখার পর তিনি তাকে বহু বহু প্রশ্ন করলেন। তিনি ঠিক করলেন যে, ‘দ্য ফিন’ যেখানে থাকেন সেই চিন শহরে তাকে পাঠাকেন। তিনি পাঠাবার সমস্ত বন্দোবস্ত করলেন। এরপরের দিন তিনি জোয়ানকে দিলেন একটি তলোয়ার। জোয়ান পুরুষের পোষাক পরলেন। দুজন পুরুষ সঙ্গী নিয়ে তিনি চিন শহরে দ্য ফিনের সঙ্গে দেখা করার উদ্দেশ্যে রওনা হলেন।

দ্য ফিনের সঙ্গে দেখা হওয়ার পর সে জানাল যে, ঈশ্বর তাকে দ্য ফিনের শত্রুদের দমন করে, দ্য ফিনকে রেনস্‌ – এর রাজা হিসেবে ঘোষণা করতে বলেছেন। দ্য ফিন এসব কথা শুনে আশ্চর্য হয়ে গেলেন। তার সঙ্গে যেসব পুরোহিত ছিল তাদের সঙ্গে তিনি পরামর্শ করলেন। পুরোহিতরা জোয়ানকে নানা প্রশ্ন করতে লাগলেন এবং তারা বিশ্বাস করলেন যে জোয়ানের ভেতর কিছু দৈব শক্তি বয়েছে। জোয়ান এর পর অর্লিনস গিয়ে পৌঁছলেন। তখন অর্লিনশ শহর ব্রিটিশ সৈনারা ঘেরাও করে রেখেছে। জোয়ান তার শরীরকে ঢাকল ঝকককে বর্ম দিয়ে। কোমরে নিল একটি বড় তলোয়ার। তার হাতে রইল তার পতাকা এবং সে একটি সাদা ঘোড়ায় চড়ল। এই সাদা ঘোড়ায় চড়ে সে অবরুদ্ধ শহরের দিকে যেতে লাগলো।

যখন সে অর্লিনস শহরে পৌঁছল তখন সেই অবরূদ্ধ শহরের দুর্গের উপর প্রহরারত সৈন্যরা তাকে দেখতে পেল এবং তারা চেঁচিয়ে উঠল, “সেই কুমারী এসেছে, যে আমাদের বাঁচাবে”। এই আওয়াজ এবং জোয়ানের চেহারা ইংরেজ সৈন্যদের মনোবল নষ্ট করে দিল, যার ফলে জোয়ান সহজেই অবরোধ ভেঙে অর্লিনস শহরে ঢুকে পড়ল। এরপর থেকে জোয়ান খুব বিখ্যাত হয়ে গেল এবং অলির্নসের কুমারী বলে পরিচিত হতে লাগল। এরপরে একদিন সে ফরাসী সৈন্যদের একজোট করে ব্রিটিশ সৈন্যদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করল এবং তাদের বিতাড়িত করল।

Joan, The Maid of Orleans

এইভাবে অলির্নস মুক্ত হবার পর জোয়ান ফের দ্য ফিনের কাছে ফিরে এলেন। দ্য ফিনকে রেনস্‌-এর বড় গির্জায় নিয়ে গেলেন এবং তার মাথায় রাজমুকুট পরিয়ে তাকে রেনস্‌-এর রাজা বলে ঘোষণা করলেন। এরপর থেকে এই দ্য ফিন সপ্তম চার্লস বলে বিখ্যাত হলেন।

এই অভিষেক হয়ে যাবার পর জোয়ান হাঁটু গেড়ে নম্র হয়ে বসে বললেন, ঈশ্বর প্রদত্ত আদেশ আমি পালন করেছি। এখন আমি বাড়ী ফেরার জন্য আপনার কাছে অনুমতি চাই এবং আমার আর অন্য কোনো প্রার্থনা নেই।” জোয়ান না চাওয়া সত্ত্বেও রাজা কিন্তু কৃতজ্ঞতায় জোয়ান-এর নামে বড় সম্পত্তি নির্দিষ্ট করে দিলেন। কিন্তু জোয়ানের ফিরে যাওয়া শেষ পর্যন্ত হয় নি। সে এই রাজাকে এর পরেও সাহায্য করে যেতে লাগল। এই সাহায্যের পেছনে কিন্তু তার কোনো স্বার্থ ছিল না। সে নিজে খুব সাধারণ জীবনযাপন করত। সেই যুদ্ধটিকে সে ধর্মযুদ্ধ মনে করে প্রাণপণে রাজাকে সাহায্য করত। এই যুদ্ধে শেষ পর্যন্ত জোয়ান একদিন ব্রিটিশদের হাতে ধরা পড়ে গেল। তারা নিষ্ঠুরভাবে তাকে পুড়িয়ে মারল। আগুনে জোয়ানের শরীর পুড়ে গেল কিন্তু তার বাণী অমর হয়ে রইল, সমস্ত ফরাসী দেশকে উদ্বুদ্ধ করল ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে এবং আস্তে আস্তে ফরাসীরা ইংরেজদের সমগ্র ফ্রান্স থেকে বিতড়িত করতে সক্ষম হল।

প্রশ্নঃ
  1. যে কন্ঠস্বর জোয়ান শুনতে পেত তার সম্পর্কে সে কি ভাবত?
  2. কে তাকে দ্য ফিনের কোর্টে পাঠালো?
  3. দ্য ফিন কি করলো?
  4. তাকে কেন অর্লিনসের কুমারী বলা হত?
  5. জোয়ানের শেষ পরিণতি কি হলো?

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।