বিজ্ঞান ও মানবিকতা
বিজ্ঞান ও মানবিকতা
কয়লা তোমরা সবাই দেখেছো। কয়লাখনির কথাও তোমরা সবাই শুনেছ। তোমাদের মধ্যে আসল কয়লার খনি অনেকে হয়ত দেখেছ, আর অন্যেরা হয়ত সিনেমায় বা টিভিতে কয়লার খনি দেখেছ।
কয়লাখনির মাটির তলায় কয়লা থাকে। গর্ত করে সেখানে গিয়ে কয়লাকে তুলে নিয়ে আসা হয়।
অনেকদিন আগে, এইসব কয়লাখনি থেকে কয়লা তোলবার জন্য যেসব মানুষের নীচে নামতো, তারা হাতে মশাল নিয়ে নীচে নামতো। কেননা মাটির তলায় অন্ধকার গুহা, সেই অন্ধকারে দেখবার জন্য হাতে মশাল নিয়ে তাদের নামতে হতে। কয়লা থেকে একরকম বিষাক্ত গ্যাস বের হয়, এই গ্যাস যেখানে জমা থাকত সেখানে মশাল নিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সেই গ্যাসে আগুন ধরে যেত ; আর যারা এই মশাল নিয়ে যেত তারা পুড়ে মারা যেত।
একজন বৈজ্ঞানিক, তার নাম ;’হামফ্রি ডেভি’, তিনি এই ঘটনাটা যখন জানতে পারলেন তখন তার ভীষণ দুঃশ্চিন্তা হল এইসব মানুষদের জন্য, এইসব গরীব মানুষ যারা দুটো পয়সা রোজগারের জন্য খনিতে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে এবং খনির মালিক যাতে লাভ করতে পারে তার জন্য কয়লা তোলবার জন্য নিজের জীবনকে জেনে শুনে বিপন্ন করতে বাধা হচ্ছে। তিনি এদের বিপদ থেকে বাঁচার উপায় চিন্তা করতে লাগলেন। চিন্তা করতে করতে তিনি এমন একটি আলো তৈরী করলেন, যে আলোটি পরবর্তী কালে ‘ডেভিস ল্যাম্প’ বলে অতি বিখ্যাত হয়। এই আলো নিয়ে খনিতে নামলে গ্যাস থাকলেও কিন্তু আগুন ধরবার সম্ভবনা থাকত না। ডেভিস যখন এই আলো আবিষ্কার করলেন তখন এর কথা তিনি ঘোষণা করে দিলেন। কি করে এই আলো তৈরী করা যায় সবাইকে তিনি জানিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলেন।
তার বন্ধুরা তাকে বললেন, তুমি আগে এটার পেটেন্ট নিয়ে নাও। পেটেন্ট নেওয়া মানে, ধর, আমি একা নতুন ধরনের যন্ত্র তৈরী করেছি, এই যন্ত্রটা যদি আমি পেটেন্ট নিয়ে নিই, তাহলে এই রকম যন্ত্র যেই তৈরী করবে তাকেই আমাকে একটা কর দিতে হবে, রয়্যালটি দিতে হবে, একেই বলে পেটেন্ট নেওয়া।
হামফ্রি ডেভিকে সবাই বলল তুমি এর পেটেন্ট নিয়ে নাও। হামফ্রি ডেভি কিন্তু একটা আশ্চর্য উত্তর দিলেন ; বললেন, “তোমরা আমাকে যতটা বোকা ভাবছ আমি ঠিক তত বোকা নই, আমি জানি যে আলোটার যদি আমি পেটেন্ট নিই তাহলে আমি অনেক অনেক টাকা রোজগার করতে পারব, কিন্তু আমি এও জানি অনেক অনেক টাকায় যে আমার অনেক অনেক বেশী সুখ আসবে এটা সত্য নয়। আমি সত্যি করে সুখ পাব, যদি আমার আবিষ্কার করা এই আলো, ব্যবহার করে ঐ গরীব শ্রমিকেরা তাদের জীবন বাঁচাতে পারে। আমি এই জন্যই পেটেন্ট করব না কারণ আমাকে রয়্যালটি দেওয়ার ভয়ে হয়ত সব মালিক এই আলো ব্যবহার করবে না। কিন্তু আমি চাই, সবাই এই আলো ব্যবহার করুক, আমি চাই, সবাই শ্রমিকদের জীবন বাঁচাতে আগ্রহী হোক।”
হামফ্রি ডেভিকে আলো আবিষ্কারের জন্য পরবর্তী কালে “নাইটহুড’ দেওয়া হয়েছিল। তিনি স্যার হামফ্রি ডেভি নামে পরিচিত, বৈজ্ঞানিক হিসাবে বিখ্যাত। কিন্তু বৈজ্ঞানিক হিসাবে যতখানি বিখ্যাত, তার চেয়ে অনেক বেশী বিখ্যাত একজন শ্রেষ্ঠ মানুষ বলে।
প্রশ্নঃ
- হামফ্রি কি আবিষ্কার করেছিলেন?
- সেটি আশীর্বাদ স্বরূপ ছিল কেন?
- তাঁর বন্ধু তাঁকে কি উপদেশ দিয়েছিল?
- হামফ্রি ডেভি কি উত্তর দিলেন?