দশেরা উৎসবের তাৎপর্য্য
নবরাত্রি উৎসব হল ধন্যবাদ জ্ঞাপন ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনের উৎসব
(ক) দেবী সরস্বতীর কাছে জ্ঞানের উপহার প্রাপ্তি,
(খ) দেবী লক্ষ্মীর কাছে প্রাথমিক প্রয়োজনের জন্য,
(গ) ভিতরে ও বাইরের মন্দ প্রভাবের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য, প্রথমটি থেকে কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, মদ ও মাৎসর্যৈর উৎপত্তি। এই দৈত্যরা দৈবী শক্তি দ্বারা পরাভূত ও পরিবর্তিত হয়।. নবরাত্রি দৈত্যের ওপর দেবতার জয়ের উৎসব। এটি অন্যতম জনপ্রিয় উৎসব যা সমগ্র ভারতবর্ষে বিভিন্ন রূপে পালিত হয়।
অনেক জায়গায়, এটি দুর্গা পূজা নামে খ্যাত, যেখানে দেবী দুর্গা যোদ্ধার রূপে পূজিতা, মহিষাসুরকে সংহার করছেন সমগ্র মানব জাতিকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাতে।
নবরাত্রি অন্যতম জনপ্রিয় উৎসব যা শুরু হয় আশ্বিন মাসের শুক্লা পক্ষের প্রথম দিনে (প্রতিপদে)। এটাই সম্ভবত হিন্দু ধর্মের একমাত্র উৎসব যেটা পালিত হয এত দীর্ঘ সময় ধরে। এই উৎসবকে নবরাত্রি বলা হয় কারণ এটি নয় রাত্রি ধরে পালিত হয়। নয় রাত্রি ধরে উৎসব পালনের মহান তাৎপর্য আছে। প্রথম তিন দিন দেবী কালীর পূজা করা হয়, পরের তিন দিন দেবী লক্ষ্মী ও শেষের তিন দিন দেবী সরস্বতীর পূজা করা হয়।
কালী দুষ্টের দমন করেন। তাই তাকে পূজা করা হয় মানুষের মধ্যে দুষ্ট গুণের দমনের জন্য। লক্ষ্মী গুণ সম্পত্তি বর্ধন করেন যা হল ভালো ও গঠনমূলক চিন্তা, যা বৃদ্ধি পায় যখন হৃদয়ের খারাপ গুণকে পরাজয় করা যায়। সুতরাং লক্ষ্মীকে পূজা করা হয় মানুষের ভাল গুণের সম্পদকে বাড়ানোর জন্য। একবার যখন খারাপ গুণ উধাও হয়ে ভালো গুণের ধারা বয়, কেবল তখনই জ্ঞান প্রাপ্ত ও রপ্ত করা সম্ভবপর হয়। সরস্বতী হলেন জ্ঞানের দেবী — জ্ঞান মানুষের বুদ্ধিকে পবিত্র করে এবং সৎ পথে চালিত করে।
তাই দেবী সরস্বতীর পূজা শেষ তিন দিন মানুষকে জীবনের নিম্ন থেকে উচ্চ স্তরে উত্তরণ ঘটায়। শ্রী রামচন্দ্র দেবী দুর্গা, যিনি শক্তি ও নীতির প্রতিমূর্তি, ন’দিন ধরে রাবণকে ধ্বংস করার ক্ষমতা অর্জনের জন্য। এমনও কথিত আছে যে তিন বছর থেকে দশ বছরের মেয়েদের নয় দিন ধরে খাওয়ানো, কাপড় পরানো ও পূজা করা হয়।
উত্তর ভারতে, দশেরা পালিত হয় রামলীলা মঞ্চস্থ করে যেখানে রামায়ণের বিভিন্ন ঘটনা দেখানো হয়। রাম রাবণের যুদ্ধের ঘটনা দেখানো অত্যাবশ্যক। দৈত্যের ওপর জয়লাভ হয় দশম দিনে— এই দিনটিকে বিজয়া দশমীও বলা হয়। রাবণের কুশপুত্তলিকা নির্মাণ করা হয় এবং এই দিন এইটি দহন করা হয়।
দক্ষিণ ভারতে, বিভিন্ন পুতুল সাজানো হয় এই দশদিন ধরে আর শহর ও আসেপাশের বসতি থেকে মহিলাদের আমন্ত্রণ করা হয়।
শেষ দিনটি আবার আয়ুধ পূজা ও হয়। এই দিন সমস্ত যন্ত্র পাতি যা দিয়ে মানুষ রুজি রোজগার করে– সেগুলি পূজা করা হয়। ছুতোর, রাজমিস্ত্রী প্রভৃতি বিশ্বাস করে যে দেবী তাঁদের দক্ষতা ও সৌভাগ্য প্রদান করবেন এই আয়ুধ পূজার দিন আশীর্বাদ চাওয়ার পর।
এই দশেরা উৎসবে ভগবান বেদ পুরুষ জ্ঞান মহা যজ্ঞের আয়োজন করেন সাত দিন ব্যাপী, যা সমাপ্ত হয় বিজয়া দশমীর দিনে, এটি সমগ্র বিশ্বের মঙ্গলের জন্য করা হয়।
এই সময় ভগবান তাঁর ছাত্রদের পুট্টাপর্তীর নিকটবর্তী গ্রামে পাঠান গ্রামসেবার জন্য, গ্রামবাসীদের ঘরে ঘরে পবিত্র প্রসাদ আর বস্ত্র পৌঁছে দেওয়ার জন্য।