পরিবার
যে রাজু পরিবারে জন্ম নেবার জন্য শ্রী সত্য সাই বাবা স্থির করেছিলেন তা বিখ্যাত ঋষি ভেংকটাবধুতের সময় হতেই ধর্মপ্রাণ পরিবার হিসেবে খ্যাত ছিল।
শ্রী সত্য সাই বাবার ঠাকুর্দা ছিলেন শ্রী রত্নাকর কোন্ডামা রাজু, যিনি একশত ষোল বছর বেঁচে ছিলেন। তিনি ছিলেন ভদ্র, শান্ত, সংগীতে পারদর্শী, অভিনয়ে নিপুণ ও নাটকের রচনা করতে সক্ষম এবং সমগ্র সংস্কৃত রামায়ণ তাঁর মুখস্থ ছিল।
এখানে বিখ্যাত মহাকাব্যটি হতে নানা কাহিনী গানের মাধ্যমে তুলে ধরা হত এবং দক্ষ কোন্ডামা রাজু শ্রীরামের অনুগত ভাই লক্ষণের ভূমিকায় অভিনয় করতেন। লক্ষণের অবিচল ভক্তিকে তিনি এমনভাবে ফুটিয়ে তুলতেন যে, তা সকল দর্শকের হৃদয়কে স্পর্শ করত এবং ঐ বিশেষ ভূমিকায় অভিনয় করবার জন্য তাঁকে সবাই ডাকত।
এই রাজু পরিবারই গোপালস্বামী মন্দির নির্মাণ করে গ্রামকে উপহার দিয়েছিলেন এবং এই সর্বজন শ্রদ্ধেয় “ঠাকুর্দা” শ্রীকৃষ্ণের সহধর্মিনী সত্যভামার জন্য একটি মন্দির নির্মাণ করেছিলেন।
শ্রী কোন্ডামা রাজুর দুই পুত্র ছিল, পেড্ডা ভেংকাপা রাজু এবং চিন্না ভেংকাপা রাজু। উভয়েই ছিলেন পিতার সংগীত, সাহিত্য ও নাটকের দক্ষতার উত্তরাধিকারী। জ্যেষ্ঠ পুত্র, যিনি পরবর্তী জীবনে সাইবাবার ‘পিতা’ বলে পরিচিত হতে পূর্বনির্দিষ্ট ছিলেন, তিনি এক দূর সম্পর্কের আত্মীয় সুব্বারাজুর কন্যা ঈশ্বরাম্মাকে বিয়ে করেছিলেন। ঈশ্বর কর্তৃক অনুপ্রাণিত এই মিলন শেষমা রাজু নামে এক পুত্র এবং ভেংকাম্মা ও পার্বতীআম্মা নামে দুই কন্যার দ্বারা আশীর্বাদধন্য হয়েছিল।
শ্রী কোন্ডামা রাজুর ধর্মপত্নী লক্ষাম্মার শুধু জীবনের একটিই বাসনা ছিল – তা হল ভগবানের আশীর্বাদ লাভ করা। শাস্ত্র বলেছে যে, এমন লোকেদের এই আশীর্বাদ বর্ষিত হবে যারা পবিত্র উপবাস, ব্রত পালন, নিশিপালন ইত্যাদি করে থাকেন এবং তাই তিনি পরম ভক্তির সঙ্গে এগুলো পালন করতেন।
বৃদ্ধ হয়ে যাবার জন্য বাবার ঠাকুর্দা আর নাটকে অভিনয় করা কিংবা নাটক রচনা করতে পারতেন না বলে তিনি গ্রামের শিশুদের নিজের বিছানার চারপাশে জড়ো করে ভগবান ও অবতারদের কাহিনী বলে আনন্দ পেতেন। শিশুরাও এই সকল গল্প শুনতে ভালবাসত, কারণ তিনি প্রতিটি চরিত্রকে এবং উত্তেজনাপূর্ণ ঘটনাকে প্রাণবন্ত করে তুলতেন।
এমনই সহজ, সরল, ভক্তিপূর্ণ পরিবারে সাই বাবা জন্মেছিলেন।
কোন্ডামা রাজু ছিলেন কঠোর নিরামিষভোজী। সে কারণেই তাঁর নাতি, শিশু সত্যের উপর তাঁর ছিল বিশেষ স্নেহ, কারণ যে অঞ্চলেই আমিষ রান্না হত, তার ধারে কাছেও সত্য থাকত না। মাত্র সাত বছর বয়সেই ঐ বুদ্ধিমান ও উদ্ভাবনী শক্তির অধিকারী শিশুটি ভাত, তরকারি, চাটনি ইত্যাদি সুস্বাদু খাবার রান্না করতে পারতেন, এবং তাও কন্যাদের সাহায্য নিয়ে তাঁর মাতা যতটুকু সময়ে রান্না করতেন তার অনেক কম সময়েই তিনি সেকাজ করতেন।
বৃদ্ধ ঠাকুর্দার আনন্দের বিষয় হল যে ঐ ছোট বালক অতি মনোহর স্বরে গান গাইতে, অভিনয় করতে, এমন কি নাটক রচনা করতে পারতেন।
পরবর্তী বছরগুলোতে শ্রী কোন্ডাম্মা রাজুর কাছে বহু ভক্ত আসতে শুরু করল, এই সকল ভক্তরা তাঁর নাতির আশীর্বাদ পেতে আসত। পরমেশ্বর তাঁরই পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছেন জেনে আনন্দে তাঁর চোখ উজ্জ্বল হয়ে উঠত। তাঁর গুরু ভেংকটাবধূতের কথা তাঁর মনে পড়ে গেল, “ভূদেবী কাঁদছেন, নারায়ণ আসবেন। তুমি তাঁকে দর্শন করতে পারবে।” এবং তদানুযায়ী তাঁর গৃহে সত্য সাই এর রূপ ধরে স্বয়ং নারায়ণ আসেন এবং তিনি তাঁর জীবনের শেষ বছরগুলোকে অপার আনন্দ দিয়ে ভরে দিয়েছিলেন।
এই পুণ্য প্রাণটি ভগবানের সেবায় কাটিয়ে ১৯৫০ সালে সমাপ্ত হয়। রামায়ণের শ্লোক উচ্চৈঃস্বরে গাইতে গাইতে এই পরম শ্রদ্ধেয় বৃদ্ধের জীবনাবসান ঘটে।
[Source : Lessons from the Divine Life of Young Sai, Sri Sathya Sai Balvikas Group I, Sri Sathya Sai Education in Human Values Trust, Compiled by: Smt. Roshan Fanibunda]