শৈশব লীলা কাহিনী – ৩
সত্যের বাবা মায়ের ইচ্ছা হল যে, সত্যকে উচ্চশিক্ষিত করে তুলতে হবে, তাই তারা ঠিক করলেন যে সত্য কমলাপুরমে গিয়ে তাঁর দাদা, শেষমা রাজুর সঙ্গে থাকবেন। তাঁর শান্ত, শিষ্ট আচরণের জন্য তিনি শীঘ্রই কমলপুরম হাইস্কুলের শিক্ষকদের প্রিয় হয়ে উঠেছিলেন।
স্কুলের স্কাউট মাষ্টার চাইছিলেন যে, সত্য তার স্কাউট দলে যোগ দিক। তাই, অন্য ছেলেরা যেমন দলে যোগ দিয়েছে তেমনি সত্যকেও যোগ দেওয়াবার জন্য তিনি চেষ্টা করতে লাগলেন। ঐ সময় সত্যের শুধু এক প্রস্হ পোষাক – একটি সার্ট ও দুটো হাফ প্যান্ট ছিল, এবং তিনি এই পোষাকের খুবই যত্ন নিতেন। প্রতিদিন স্কুল হতে ফিরবার পর তিনি একটা তোয়ালে জড়িয়ে নিয়ে তার জামা প্যান্ট ধুয়ে নিতেন। তারপর একটা পিতলের ঘটির ভিতর জ্বলন্ত কয়লা ফেলে তা দিয়ে সেগুলোকে ইস্ত্রি করে নিতেন। সুন্দর ভাঁজের জন্য তিনি তাঁর শার্ট ও প্যান্ট একটা ভারী ট্রাঙ্কের নীচে সারা রাত রেখে দিতেন। এভাবেই তাঁর পোষাক সব সময় পরিচ্ছন্ন ও তাতে সুন্দর ভাঁজের দাগ থাকত।
ঐ স্কাউট দলের পুষ্পগিরি মেলায় ও পশু প্রদর্শনীতে যাবার কথা হল, সেখানে তারা লোকেদের সেবা কাজে, যেমন পানীয় জল বিতরণ, মেলা প্রাঙ্গণের পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা এবং হারিয়ে যাওয়া শিশুদের পিতা-মাতার কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার কাজে নিযুক্ত হবে।
রমেশ নামে এক সহপাঠী জানত যে সত্যের স্কাউট পোশাক নেই, তাই সে সত্যকে একটা পোশাক উপহার দিতে চাইল। কিন্তু সত্য রমেশের উপহার নিতে রাজী না হয়ে বলেছিলেন যে, এমন উপহার দেওয়াটা বন্ধুত্বকে নষ্ট করে দেবে এবং বন্ধুত্ব হবে হৃদয়ের সঙ্গে হৃদয়ের সম্পর্কের উপর, জাগতিক বস্তু দেওয়া এবং নেওয়ার উপর নয়।
ক্যাম্পের জন্য প্রতিটি ছেলের কাছ থেকে ১২ টাকা করে নেওয়া হচ্ছিল। যে দিন স্কাউট দলের রওয়ানা হবার কথা, সত্যের কাছে টাকা ছিল না বলে সে পেট ব্যাথার ভান করে শুয়ে রইল। বাকী ছেলেরা বাসে করে রওয়ানা হলে সত্য বিছানা থেকে উঠে পড়লেন এবং নয় মাইল হেঁটে পুষ্পগিরি পৌঁছালেন। তারপর নিজে আদর্শ স্থাপন করে তার সহপাঠীদের নিঃস্বার্থ সেবায় অনুপ্রাণিত করবার কাজে আত্মনিয়োগ করলেন। ফিরে আসবার সময় হলে তিনি নীরবে ক্যাম্প হতে বেরিয়ে এসে আবার পুরো রাস্তা হেঁটে ফিরে এলেন এবং কেউ কিছু জানতে পারল না।
সুতরাং আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, শিশু বয়স হতেই ভগবান বাবা সমাজ হতে মন্দ গুণাবলী সরাবার ও সৎ গুণাবলী পালন করবার কাজে নিজেকে উৎসর্গ করেছিলেন।
এরপর শেষমা রাজু উড়ভকোণ্ডা হাইস্কুলে তেলেগু শিক্ষকের কাজে নিযুক্ত হলে সত্য তার সঙ্গে সেখানে গেলেন। স্কুলে প্রতিটি শিক্ষক বালক সত্যের সম্পর্কে জানতে আগ্রহী ছিলেন, কেউ কেউ শ্রদ্ধাবশতঃ কেউ কেউ কৌতুহলবশতঃ।
শীঘ্রই সত্য নিজেকে সকলের প্রিয় করে তুললেন – শুধু স্কুলে নয়, উড়ভকোন্ডা শহরেও। ক্লাস শুরু হবার আগে তিনিই সকালের প্রার্থনা পরিচালনা করতেন এবং নিজ নিজ কর্তব্য পালন করতে তিনি শিক্ষক ও ছাত্র উভয়কেই সমানভাবে অনুপ্রাণিত করতেন।
তাঁর অতুলনীয় সংগীত, সাহিত্য এবং নাট্যপ্রতিভা শীঘ্রই তাঁর শিক্ষকদের মনোযোগ আকর্ষণ করল। নাটক ইত্যাদির ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক সত্যকে অনুরোধ করেছিলেন একটি নাটক লিখবার জন্যে। সত্য খুবই উৎসাহের সঙ্গে ঐ কাজে লেগে গেলেন এবং “চেপ্পিনাট্টু চেস্তারা” অর্থাৎ “তোমরা কি তোমাদের কথা অনুযায়ী কাজ কর” শীর্ষক নাটকটি সাফল্যের সঙ্গে মঞ্চস্থ হয়। নাটকটির বিষয়বস্তু ছিল অপরকে যে উপদেশ দেওয়া হয় তদনুযায়ী লোকেরা নিজেরা কাজ করতে অসমর্থ হয়। বারো বছর বয়েসের সত্য নিজে মূল চরিত্রে নিপুণভাবে অভিনয় করেছিলেন। এর দ্বারা তিনি তার সহপাঠীদের, শিক্ষকদের এবং গ্রামবাসীদের মনে দাগ কাটতে পেরেছিলেন যে, এক কথা বলা আর অন্য কাজ করাটা হল পরম কপটতা মাত্র। এই নাটক বয়স্কদের চোখ খুলে দিয়েছিল এবং সত্যের দূরদর্শিতা ও প্রকৃত শিক্ষার প্রতি উৎসাহকে প্রকাশ করেছিল।
[Source : Lessons from the Divine Life of Young Sai, Sri Sathya Sai Balvikas Group I, Sri Sathya Sai Education in Human Values Trust, Compiled by: Smt. Roshan Fanibunda]