পুট্টাপতী গ্রাম ও তার নামের অতীত উপাখ্যান
চিত্রাবতী নদীর ধারে পাহাড়ের মালার মাঝে ছোট্ট একটি রত্নের মতই বসানো অতি ক্ষুদ্র একটি গ্রাম, পূট্টাপর্তী। চারধারের পাহাড়ের মন্দিরগুলো হতে ধ্বনিত ও প্রতিধ্বনিত ঘন্টাধ্বনিতে মুখরিত এই জনপদটিকেই অবতার পুরুষ ভগবান শ্রী সত্য সাই বাবা তাঁর আবির্ভাব ভূমি বলে নির্বাচন করেছেন। অতীতে এই গ্রামটি ছিল কবি, পণ্ডিত ও বীরযোদ্ধাদের লীলাভূমি এবং একে সৌভাগ্যের ও বাগদেবীর আবাসভূমি বলে গণ্য করা হত।
দক্ষিণ ভারতের এই গন্ডগ্রামটি ঘিরে নানা কাহিনী প্রচলিত আছে। ‘পুট্টা’ বলতে বোঝায় “একটি উইয়ের ঢিবি যেখানে একটি সাপ বাসা বেঁধেছে” এবং “পর্তী” বোঝায় যা সংখ্যা বৃদ্ধি করে।
বহু বছর আগে এই গ্রামটির নাম ছিল ‘গোল্লাপল্লী’ অর্থাৎ রাখাল বালকদের বাসগৃহ। নামটি শ্রীকৃষ্ণের বাল্যলীলার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। এটি ছিল রাখাল বালকদের উচ্চহাসির কলরবে পূর্ণ এক অতি সুখময় স্থান। গাভীরা ছিল মোটাসোটা তেল চকচকে। তুলনাহীন ঘন, মিষ্ট ও নবনীময় দুধ দিয়ে গাভীরা ভরে দিত এবং প্রতিটি গৃহ ঘি ও মাখনে ভর্তি থাকত।
গ্রামের লোকেরা শান্তিপ্রিয় ও সৌভাগ্যশালী ছিল, কিন্তু একদিন এক রাখাল বালক লক্ষ্য করল যে তার প্রিয় গাভীটি পাহাড়ের গোচারণ ভূমি হতে ফিরে আসবার পর তার বাঁটে আর কোনও দুধ নেই। এর কারণ খুঁজে বের করবার জন্য পরদিন রাখাল বালকটি লুকিয়ে থেকে গাভীটির আশ্চর্যজনক আচরণ দেখতে পেল। গাভীটি নিজের ছোট বাছুরটিকে ফেলে রেখে গোশালা হতে বেরিয়ে গ্রামের বাইরের একটি উইয়ের ঢিবির কাছে সোজা গিয়ে উপস্থিত হলো। রাখাল বালকটি তাকে অনুসরণ করে গিয়ে দেখতে পেল যে, ঐ উইয়ের ঢিবি হতে একটি গোক্ষুর সাপ বেরিয়ে এসে লেজের উপর ভর দিয়ে মাথাটি উঁচু করে গাভীর সবটুকু দুধ খেয়ে নিল।
সাপটির ঐ কাজের ফলে তার যে ক্ষতি হল তাতে প্রচণ্ড রেগে গিয়ে রাখাল বালকটি একটি বড় পাথরের চাই মাথায় তুলে নিয়ে সাপটির উপর আছড়ে ফেলল। প্রবল ব্যাথায় কাতর গোক্ষুরটি তখন রাখাল বালকদের ও গ্রামটির উপর শাপ দিয়ে বলল যে, ঐ গ্রামটি উইয়ের ঢিবিতে ভর্তি হয়ে যাবে এবং তা সমানে বেড়ে যাবে ও সাপেদের আবাসস্থল হয়ে উঠবে।
এবং তাই ঘটল! গাভীদের স্বাস্থ্য ও সংখ্যার ক্ষয় হতে লাগল, সারা গ্রামে উইয়ের ঢিবি ছড়িয়ে পড়তে লাগল। গ্রামবাসীরা গ্রামের নাম পাল্টে বল্মিকপুরি অর্থাৎ উইয়ের ঢিপির জায়গা রাখল। ঐ নামটি তাদের কিছুটা সান্ত্বনা দিল কারণ বাল্মীকি ছিলেন মুনি ও কবি, যিনি বিশ্বকে অমর কাব্য রামায়ণ উপহার দিয়েছিলেন।
আজকের দিনেও পুট্টাপর্তীর গ্রামবাসীররা ঐ দুঃখজনক কাহিনীর সাক্ষ্য হিসেবে একাদিক চ্যাপ্টা একটি গোল পাথর দেখিয়ে থাকে, যা দিয়ে সাপটিকে আঘাত করা হয়েছিল। পাথরটিতে লম্বা লাল একটি রয়েছে যাকে গোক্ষুর সাপটির রক্তের দাগ বলে বিশ্বাস করা হয়। শাপ হতে অব্যাহতি পাওয়ার জন্য এবং গাভীদের কল্যাণের জন্য ঐ পাথরটি শীঘ্রই পূজোর বস্তু হয়ে উঠল। তাছাড়া রাখাল রাজা শ্রীকৃষ্ণের প্রতীক রূপেও পাথরটি বিবেচিত হতে লাগল। সুতরাং একটি মন্দির তৈরী করে তাতে পাথরটিকে প্রতিষ্ঠা করা হল এবং প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে নারী ও পুরুষরা তাঁর পূজা করে চলল।
কয়েক বছর আগে পাথরটির অজানা বৈশিষ্ট্যটিকে তুলে ধরবার জন্য পাথরটিকে ভাল করে ধুয়ে চ্যাপ্টা দিকটিতে চন্দন লেপে দিতে ভগবান বাবা নির্দেশ দিয়েছিলেন। তা করা হলে গাভীর গায়ে হেলান দিয়ে ঠোঁটে বাঁশী সহ শ্রীকৃষ্ণের একটি খোদাই করা মূর্তি তাতে ফুটে উঠেছিল। গ্রামবাসীরা আজকের দিনেও বলে থাকে যে বাঁশীর সুমধুর সুর তারা শুনতে পায়।
ঐদিন হতে পুট্টাপর্তী আবার একটি সমৃদ্ধশালী জনপদ হয়ে উঠল, গাভীরা মোটাসোটা শক্তিশালী ও সংখ্যায় বাড়তে লাগল। আশেপাশের এলাকার উপর পুট্টাপর্তীর প্রভূত্ব এবং তার রাজার ক্ষমতার পরিচয় হিসেবে এখনও পূর্বদিকে প্রাচীন কেল্লাটির চূড়ো মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে।
[Source : Lessons from the Divine Life of Young Sai, Sri Sathya Sai Balvikas Group I, Sri Sathya Sai Education in Human Values Trust, Compiled by: Smt. Roshan Fanibunda]