আপনি আচরি ধর্ম অপরে শিখাও
মহাপুরুষেরা নিজেরা যা করেন শুধু সেই সম্বন্ধে আমাদের শিক্ষা দিয়ে থাকেন। সেই জন্যই তাদের উপদেশে এমন শক্তি থাকে, যা আমাদের ভালো করতে পারে। মহান গুরু শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের শিষ্যদের মধ্যে একজন দরিদ্র স্ত্রীলোক ছিলো। একদিন সে তার ছেলেকে নিয়ে তাঁর কাছে এসে বললো, “গুরুদেব, আমার ছেলে রোজই মিষ্টি খেতে চায়।এই অভ্যাসে তার দাঁত নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। মিষ্টি দামী জিনিষ, রোজ কিনে দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়। আমার উপদেশ, সাবধানতা, এমন কি মারধোরেও কোন কাজ হচ্ছে না। অনুগ্রহ করে তাকে এ বিষয়ে কিছু বলুন, আর সেই সঙ্গে আশীর্বাদ করুন।”
দুসপ্তাহ বাদে ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে স্ত্রীলোকটি আবার এলো। দুজনে বসার পরে, শ্রীরামকৃষ্ণ কোমল দৃষ্টিতে ছেলের দিকে তাকিয়ে বললেন, “হ্যাঁ বাবা, সত্যিই কি তুমি তোমার মাকে মিষ্টি কিনে দেবার জন্য রোজ জ্বালাতন কর? ছেলেটি মাথা নীচু করে বলল, “হ্যাঁ মহাশয়।” আর কিছু সে বললো না। “তুমি বুদ্ধিমান ছেলে। তুমি জানবে যে, মিষ্টিতে তোমার দাঁত নষ্ট করে দিচ্ছে। তোমার মা ও তোমার জন্য চিন্তা করছেন। রোজ যদি মিষ্টিতেই টাকা খরচা করতে হয়, তবে তিনি তোমার জন্যে নতুন বই, ভালো জামাকাপড় কি করে কিনবেন? তোমার কি মনে হয় না যে তুমি এটা ভুল করছো?”
শ্রীরামকৃষ্ণের কথা ছেলেটির হৃদয় স্পর্শ করলো। সে তাঁর দিকে তাকিয়ে বললো, “হ্যাঁ মহাশয়”, এবারও সে আর কোন কথা বললো না। রামকৃষ্ণদেব অনুনয়ের সুরে বললেন, “তাহলে আজ থেকে তুমি মিষ্টির জন্যে আবদার বন্ধ করে দেবে তো?” এবারে ছেলেটি হেসে বলল, “হ্যাঁ মহাশয়, আজ থেকে মিষ্টির জন্য মাকে বিরক্ত করা আর মিষ্টি খাওয়া বন্ধ করে দেবো।” শ্রীরামকৃষ্ণ ছেলেটির উত্তরে সুখী হয়ে, তাকে কাছে টেনে নিয়ে তোমার পক্ষে কি ভালো, কি মন্দ তা তা তুমি বুঝতে পেরেছো। বড় হয়ে নিশ্চয়ই তুমি সুখী হবে।” ছেলেটি ভূমিষ্ঠ হয়ে প্রণাম করলে তিনি তাকে আশীর্বাদ করলেন ও অন্যান্য ভক্তদের দিকে ফিরলেন।
ছেলেটি বাগানের ভিতরে গেল। তার কৃতজ্ঞ মা রামকৃষ্ণদেবকে জিজ্ঞাসা করলো, “গুরুদেব, আপনি এই কটা কথার উপদেশ দেবার জন্যে আমাদের দুসপ্তাহ অপেক্ষা করতে বললেন, কেন? তিনি একটু হেসে বললেন, দুসপ্তাহ আগে যখন তুমি এসেছিলে, আমি যে কাজ নিজেই করছি তা তোমার ছেলেকে করতে বারণ করবো কি করে? তার জন্যে, আমি সেদিন থেকে মিষ্টি খাওয়া বন্ধ করে দিলাম। তাতে ঐ বিষয়ে তোমার ছেলেকে উপদেশ দেওয়ার উপযুক্ত শক্তি ও ক্ষমতা এলো। আমরা নিজেরা যা করি শুধু সেটাই যদি অন্যদের করতে বলি তাহলে আমাদের কথায় যে আন্তরিকতার সুর এসে যাবে, তা শ্রোতাকে স্পর্শ করবে।” ঘরের সমস্ত ভক্তদের মনে হলো যে, তারাও এক মহান শিক্ষা পরমহংসদেবের কাছ থেকে পেয়ে গেলেন।
প্রশ্নঃ
- কেন শ্রীরামকৃষ্ণ মা ও ছেলেকে দুসপ্তাহ পরে আবার আসতে বললেন; ছেলেটিকে মিষ্টি ছাড়তে উপদেশ তখনই দিলেন না কেন?
- নিজে না করে সেই বিষয়েই অন্যকে করতে বললে কি তার ফল হয়?
- নিম্নলিখিত প্রশ্নের উত্তরে তোমার নিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা কর:-
- নিজে যা করে না সেই কাজ তোমায় করার জন্যে কেউ উপদেশ দিচ্ছে।
- নিজে যে কাজ করছে, সেটা করার জন্যে তোমাকে কেউ উপদেশ দিচ্ছে।