উপস্থিত বুদ্ধি
আমরা যখন তখন, কোন বাড়ীতে আগুন ধরে যাওয়ার কথা, কোন চলন্ত গাড়ি গাছে ধাক্কা লাগা কিংবা কোন বাচ্চা কুয়ার মধ্যে পড়ে যাওয়ার কথা শুনতে পাই। এই ধরণের দুর্ঘটনা ঘটলে খবরটা কানে গেলেই লোকেরা সেখানে ছুটে আসেন। কিন্তু তাদের মধ্যে অনেকে ঐ সব দেখে এত বেশী ভয় পেয়ে যায় যে তারা স্থির মস্তিষ্কে চিন্তা করে দুর্ঘটনাপীড়িত মানুষের জীবন ও সম্পত্তি রক্ষার জন্যে সেই মুহূর্তে কোন ব্যবস্থা নিতে পারে না। স্থিরভাবে চিন্তা করা ও তৎক্ষণাৎ তাকে কাজে পরিণত করার ক্ষমতাকে বলা হয়, “উপস্থিত বুদ্ধি।”
উপস্থিত বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ শুধু যে বিপদের সময়ে সহায় হন তাই নয়, তারা দুর্ভিক্ষে, বন্যায়, এমন কি যুদ্ধে পর্যন্ত পরম সহায়কের কাজ করেন। কিছু কিছু লোক কি করে এই উপস্থিত বুদ্ধি আয়ত্ত করেছেন? প্রকৃত তথ্য হলো এই যে, তারা বাল্যকাল থেকেই তাদের মনকে নিয়ম শৃঙ্খলার মধ্যে দিয়ে চালনা করেছেন। যখনই কোন সমস্যা আসুক না কেন, তারা তাদের মনকে বিঘ্নিত বা হতবুদ্ধি হতে দেন না। পরিবর্তে, তারা স্থিরবুদ্ধিতে চিন্তা করে নিয়ে তখনই যা করার দরকার তা করেন। এখানে এক চটপটে ছেলের উপস্থিত বুদ্ধির দৃষ্টান্ত দেখানো হচ্ছে; এতে যে সমস্ত বালকেরা এই ক্ষমতা বিকশিত করতে উৎসাহ পাবে।
এলাহাবাদে একটি বড় উদ্যানে একদল ছেলে ব্যাট বল নিয়ে খেলা করছিলো। এদের মধ্যে একজন ব্যাট ঘুরিয়ে, তার সমস্ত শক্তি দিয়ে বল মারলো। এটা হালকা টেনিস বল ছিল বলে একেবারে উঁচুতে উঠে গেল, তারপর নেমে আসতে আসতে লাফিয়ে গিয়ে এক বটগাছের গর্তের ভেতরে পড়ে গেল। সব ছেলেরা অনেক চেষ্টা করেও বল উদ্ধার করতে পারলো না, ঐ শুকনো গুঁড়ির তলায় তাদের হাত পৌঁছালো না। একজন দয়ালু ভদ্রলোক ঐ ছেলেদের দুর্দশা দেখে বল বার করে আনার চেষ্টা করলেন, কিন্তু তিনিও পারলেন না। তখন সব ছেলেরা বলটাকে অত জোরে মারার জন্যে খেলুড়েকে এমন ভাবে সমালোচনা করতে বসলো যে সে বেচারা কথার ঘায়ে কাঁদতে শুরু করে দিলো।
ঠিক সেই সময় একটি সপ্রতিভ ছেলে বাগানে বেড়াতে বেড়াতে ক্রন্দনরত ছেলেটিকে দেখতে পেলো। সে দলের ছেলেদের কাছে সব ঘটনা শুনলো। যে ছেলেটি কাঁদছিল, সে বললো, “অমুক কাকাও বলটা বার করার জন্যে চেষ্টা করেছেন, কিন্তু পারেননি।” ঐ বালকের পিঠ চাপড়িয়ে সপ্রতিভ ছেলেটি বললো, “চিন্তা কোরো না। আমি বলটা এনে দেবো। শুধু আমাকে এক বালতি জল এনে দাও।” একজন দৌড়ে গিয়ে মালীর সাহায্যে জল নিয়ে এলো। চতুর ছেলেটি গাছের গুড়ির গর্তে জল ঢালতে আরম্ভ করলো। একটু পরেই জল উপরে উঠে এলো, আর তার সঙ্গেই ভেসে হাল্কা বলটা জলের উপর চলে এলো। সঙ্গে সঙ্গেই একটি ছেলে বলটাকে তুলে নিয়ে শূন্যে ছুড়ে দিয়ে আনন্দে চিৎকার করতে লাগলো “হিপ হিপ, হুর্রে!” সমস্ত ছেলেরা এই ধ্বনিতে যোগ দিয়ে, উৎফুল্ল মুখে খেলার মাঠে ছুটে গিয়ে খেলা করতে শুরু করে দিলো। এই সপ্রতিভ ছেলেটি কে বলতে পারো? ইনি জওহরলাল নেহরু।
প্রশ্নঃ
- উপস্থিত বুদ্ধি কাকে বলে? কিভাবে এর বিকাশ করা যায়?
- তুমি কি কখনও কোন দুষ্কর পরিস্থিতিতে উপস্থিত বুদ্ধি দেখিয়েছো? দেখিয়ে থাকলে তা কখন, কিভাবে দেখিয়েছো?
- তুমি অকুস্থলে উপস্থিত ছিলে এভাবে একটা কাল্পনিক দুর্ঘটনার কথা লেখো, ঐ অবস্থার মধ্যে যারা জড়িয়ে পড়েছে, তাদের সাহায্যের জন্য তুমি কিভাবে তোমার উপস্থিত বুদ্ধি কাজে লাগাবে তার বর্ণনা দাও।